মূল ঃ তাহা ইয়াহিয়া, শ্রুতিলেখক ঃ শহীদুল্লাহ্ কায়সার ॥ | শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৮
একদিন কমলাপুর রেলস্টেশনে যান আমেরিকা প্রবাসী শাহীনুর হক। স্বজনকে বিদায় জানাতে ছিলো তাঁর কমলাপুর গমন। এমন সময় স্টেশনের এক কোনে দেখলেন হৃদয়বিদারক ঘটনা। এক শিশু কান্নাকাটি করছে। বিষয়টি তাঁকে মর্মাহত করলো। হৃদয়ক্ষরণ সংবরণ করতে পারলেন না। ছুটে গেলেন কান্নারত শিশুটির পাশে। শিশুটির প্রতি মায়া হওয়ায় তিনি তাকে কিছু টাকা দিতে চাইলেন।
কিন্তু শিশুটির তাতে মন ভরলো না। সে টাকা ফেরত দিয়ে বললো, আমি ক্ষুধার্ত। আমাকে টাকা নয়; কিছু খাবার দিন। শিশুটির এমন আচরণ দেখে অবাক হলেন শাহীনুর হক। ছুটে গিয়ে পাশের এক দোকান থেকে এক প্যাকেট খাবার এনে তুলে দিলেন শিশুটির হাতে। এরপর জানতে চাইলেন তাঁর পরিচয়; কীভাবে সে কমলাপুর রেলস্টেশনে এলো ?
শিশুটি তাঁকে জানালো, তার নাম মুখলেছ। এক খালা তাকে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। যার কাছে বিক্রি করে দেয় সে শিশুটিকে দিনরাত খাটাতো। এমন অমানুষিক শ্রম দিতে তার খুব কষ্ট হতো। এ কারণে একবার সুযোগ পেয়ে সে ওই লোকের কাছ থেকে পালিয়ে কমলাপুর স্টেশনে চলে আসে। এরপর দুই-তিন দিন ধরে তাঁকে স্টেশনে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দয়ার উপর নির্ভর করে চলতে হচ্ছে।
তার মা-বাবা কোথায় ? জানতে চাইলেন শাহীনুর হক। শিশুটি তখন বললো, তার খালা তাকে বলেছে, তার বাবা এক মহিলাকে বিয়ে করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয়। এরপর কিছুদিন সে তার মায়ের কাছে ছিলো। মাও অন্য এক পুরুষকে বিয়ে করে চলে যায়। মা-বাবার চলে যাওয়ার পর খালার কাছে ছিলো কিছুদিন। একদিন হঠাৎ খালা তাকে বললো, তার পক্ষে আর তাকে খাবার-দাবার দেয়া সম্ভব নয়। সে একজনের সঙ্গে কথা বলেছে। ওই ব্যক্তি এসে তাকে নিয়ে যাবে। এর কিছুদিন পরই খালা টাকার বিনিময়ে ওই ব্যক্তির হাতে শিশুটিকে তুলে দেয় ।
শিশুটির এমন কথা শুনে বিচলিত হয়ে পড়লেন প্রবাসী শাহীনুর হক ছবি। তিনি শিশুটিকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে তুলে নিয়ে এলেন তাঁর ঢাকার বাসভবনে। দিনদিন শিশুটির প্রতি তাঁর স্নেহ বাড়তে থাকলো। তিনি শিশুটির হাতে তুলে দিলেন বই-খাতা-কলম। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকার্যক্রমে অংশগ্রহণ করাতে একটি স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলেন। কিছুদিন পর জানতে পারলেন, শিশুটির ক্রিকেট খেলার প্রতি প্রবল ঝোঁকের কথা। প্রিয় খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। বিষয়টি জানার পর শাহীনুল হক তাকে ক্রিকেট ব্যাট আর বল কিনে দেন। মুখলেছের নাম পরিবর্তন করে রাখেন “শাকিব”। একদিন কমলাপুর স্টেশনে যে শিশু দু’মুঠো খাবারের অভাবে কান্নাকাটি করছিলো। শাহীনুর হক ছবির মতো মহানুভব এক নারীর আদর আর ভালোবাসায় সে এখন আগামির বাংলাদেশ।
শাহীনুল হক মনে করেন, এই ধরনের কাজ তাঁকে অর্থনৈতিকভাবে দেউলিয়া করবে না। তার কোন ধরনের ক্ষতিও বয়ে আনবে না। তিনি চান, সমাজের বিত্তবানরা এই ধরনের শিশুর প্রতি সদয় হোন। এগিয়ে দিন সহায়তার হাত। তাদের প্রতি ‘সমবেদনা’ নয়; ‘সহমর্মিতা’ প্রকাশ করুক। তাহলে একদিন এদেশ প্রকৃত মানবতাবাদী মানুষে ভরে উঠবে।
দেশবিদেশ /৩০ নভেম্বর ২০১৮/নেছার
Posted ১১:২৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh