নিজস্ব প্রতিনিধি,উখিয়া | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
গত শনিবার থেকে টানা প্রবল বর্ষণে ভয়াবহ পাহাড় ধসের শঙ্কায় রয়েছেন উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। আর কয়েকদিন ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড় ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড় ধসের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদশে বসবসার করা মিয়ানমারর থেকে প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা। গত বছরের ২৫ আগষ্টের পর উখিয়া ও টেকনাফের ৫হাজার একর বনভূমি দখল করে পাহাড়ে ও পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৭লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে বসবাসকারী আরো ৩লক্ষাধিক রোহিঙ্গা সহ ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস এখন উখিয়া-টেকনাফে। বৃষ্টির কারনে বিশেষ করে নতুন অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের জনজীবনে নেমে এসে বিপর্যয়।
রাখাইনে বর্মী সেনা,বিজিপি ও রাখাইন উগ্রবাদীদের নির্যাতনের শিকার হয়ে এদেশে পালিয়ে এসে এবার তাদের বেঁচে থাকার লড়াই প্রকৃতির বিরুদ্ধে। এদিকে টানা ভারী বর্ষণের কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অধিকাংশ পাহাড়ে ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় গত ৫ দিনে প্রায় অর্ধশত ছোট-বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪শতাধিক বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। মারা গেছে এক শিশুসহ ২জন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক রোহিঙ্গা।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নার ঘোনা, জামতলী, থাইংখালী ও টেকনাফের উংচিপ্রাং-এর রোহিঙ্গা ক্যাম্প। এসব এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অনেক পাহাড়ে ভয়াবহ ফাটল দেখা দিয়েছে। মধুরছড়া ১৭নং ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ, শফিকুর রহমান জানান, গত ৫দিনের বৃষ্টিতে এখানকার রোহিঙ্গারা ঝুপড়ি থেকে বের হতে পারছেনা।
পানি বন্ধি অবস্থায় অনাহারে অনাধারে স্ত্রী,পুত্র-পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। তাদের মতে, এ পর্যন্ত প্রায় ৪শতাধিক রোহিঙ্গা ঝুপড়ি ধসে পড়েছে। তবে বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ পাহাড় ধসের আশংখা রয়েছে। এতে প্রাণহানি সহ বড় ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনা আছে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার (১২ জুন) জানানো হয়েছে- গত ৫দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গড়ে ১৩৮ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে, যাতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর স্বাভাবিক জীবন। টয়লেট ও খাবার পানির গভীর সংকটে জীবন-যাপন করছেন তারা। জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইএফআরসি তার ডিআরইএফ তহবিল থেকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক সরবরাহ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বৃষ্টিপাতের ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা এখনও অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়নি। তবে রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু এলাকা বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর এতে করে ক্যাম্পগুলোর ৬ লাখ ৯৩ হাজার মানুষ কঠিন সংকটের ভিতর দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন।
চলতি সপ্তাহে বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে থাকা পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানের ভূমি ধস হয়। এতে ক্যাম্পের অসংখ্য টয়লেট নষ্ট ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে আইএফআরসির কক্সবাজার উপ অফিসের প্রধান সঞ্জীব কাফে বলেন, আকস্মিক ঢলের সঙ্গে পাহাড় থেকে ময়লা কাঁদা-মাটি ও আবর্জনা মিশ্রিত পানি দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসে। পাহাড়ি ঢলের পানি, কাঁদামাটি ও টয়লেটের ময়লা একসঙ্গে মিশে ঢালু স্থান বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসার কারণে নিচে থাকা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসবাসের স্থানগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা শুরু হওয়ার পর পানিবাহিত রোগসমূহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে ডায়রিয়াসহ তীব্রভাবে পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ?বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগসমূহের প্রাদুর্ভাব খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে যা এখন আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনেক জায়গায় বালুরবস্তা ও প্রতিরোধক দেয়াল ধসে পরা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও গাছের সঙ্গে নেমে আসা কাঁদা-ময়লা মেশা পানি ঠেকাতে পারেনি। ফলে সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেহেতু পাহাড় ধসের আশঙ্কা ও পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, এই ধস হলে বিপুল পরিমাণ জীবন ও স্থাপনার ক্ষতি হবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বায়ু ও বৃষ্টি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সাহায্য করার জন্য, সোমবার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আইএফআরসি এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরি সরঞ্জাম বিভিন্ন উপকরণসহ জরুরি আশ্রয় মেরামতের কিট বিতরণ শুরু করেন। আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হবার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত ৯ জুন থকে ১৩৮ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে। একইসঙ্গে সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাবও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড় কেটে বা পাহাড়ে অবস্থিত। এসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। গত কয়দিনে পাহাড় ধসে পড়ে বেশ কিছু ঘরবাড়ীর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড় ধসের বেশি ঝুঁকিতে থাকা ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে। এধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
Posted ১২:৩০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh