জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ | শনিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৯
ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেদেশ থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসছে । গত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার ভারত থেকে পালিয়ে বাংলাদশে ঢুকেছে বলে জানা যায়। তারমধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া ও হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দুটি ক্যাম্পে ভারত থেকে পালিয়ে আসে ৬ জন রোহিঙ্গা ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত তিনদিন আগে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আজিজ উল্লাহ নামে এক যুবক এবং হোয়াইক্যং ইউনিয়নের উনচিপ্রাং ক্যাম্পে নুরুল আলম তার স্ত্রী ও তিন শিশু সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে আসে। পালিয়ে এসে তারা প্রথমে ক্যাম্প গুলোতে তাদের আত্মীয় স্বজনদের ঘরে আশ্রয় নেয়।
উনচিপ্রাং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা (চেয়ারম্যান) মোহাম্মদ ইউছুফ বলেন, ‘গত কয়েকদিন আগে আমার ক্যাম্পে ভারত থেকে পালিয়ে একটি রোহিঙ্গা পরিবার ঢুকেছিল। তারা ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে এসেছে বলে জানায়। বিষয়টি ক্যাম্পের দায়িত্বরত ইনচার্জকে অবহিত করি। পরে তাদের ক্যাম্প থেকে সরিয়ে নেয়া হয়।’
পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে ইউছুফ বলেন, ‘তাদের প্রত্যেকের হাতে ভারত ইউএনএইচসিআর প্রদত্ত রিফিউজি কার্ড রয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত কর্তৃপক্ষ সেদেশে আশ্রিত কিছু রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠায়। এই ভয়ে সেখানে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করে বলে জানায়।’
এদিকে ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে টেকনাফে বাহারছড়া শামলাপুর ক্যাম্পে পালিয়ে আসে আজিজ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। তার বাড়ি মিয়ানমারের মংডু হাচ্চুরতা গ্রামে। তার বাবা আজিম উল্লাহ পরিবার নিয়ে ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের কেরাইনটেলা নামক এলাকায় বসবাস করে আসছেন। তার কাছেও ইউএনএইচসিআর প্রদত্ত কার্ড রয়েছে।
আজিজ উল্লাহ কালের কন্ঠকে বলেন,‘ আমরা ছোট থাকতে বাবা পরিবার নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। তারপর ভারতের জম্মু কাশ্মীরে পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলাম। সেখানেই এক রোহিঙ্গা নারীর সাথে আমার বিয়ে হয়। আমাদের মতো আরও প্রায় তিনহাজার মতো রোহিঙ্গা পরিবার রয়েছে। ‘ইউএনএইচসিআর’ এসব রোহিঙ্গা পরিবারের সাথে কাজ করে।
আজিজ বলেন, ‘ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার পাঠিয়ে দেবে এই ভয় ভারতে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের আতঙ্কিত করে। তাই আমি জম্মু-কাশ্মীর থেকে তিনদিনে কলকাতা পৌঁছে সেখান থেকে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা নামক সীমান্তে পৌঁছি। পরে রাতে দালালের মাধ্যমে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে একটি ছোট খাল পার হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। তারপর কক্সবাজার হয়ে টেকনাফ শামলাপুর রোহিঙ্গা শিবিরে পৌঁছে মামা মোহাম্মদ আইয়ুবের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।’
টেকনাফের শামলাপুর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি (প্রধান নেতা) আবুল কাশেম বলেন, ক্যাম্পে ভারত থেকে এক রোহিঙ্গা যুবক পালিয়ে আসার খবরটি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের প্রতিনিধি ও টেকনাফ শামলাপুল রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জকে অবহিত করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করার মাধ্যমে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে ভারত থেকে পালিয়ে এসে আরও ৬ সদস্যের একটি রোহিঙ্গা পরিবার নাইক্ষ্যংছড়ির শূন্যরেখায় অবস্থান করছে বলে জানা যায়। জোহর আহমদ নামে ওই রোহিঙ্গা নাগরিকের পরিবারটিও ভারতের জম্মু-কাশ্মীর থেকে পালিয়ে আসে বলে জানা যায়।
Posted ১২:৩৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh