মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: | বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮
ছলেমা খাতুন। বয়স ৯১ বছর। দেহে বার্ধক্যের পরিপূর্ণ ছাপ। কুঁচকে গেছে শরীরের চামড়াগুলো। বয়সের ভারে তেমন হাঁটাচলাও করতে পারেন না। কথা বলেন কাঁপা কাঁপা স্বরে। সাত ছেলে-মেয়ের সংসার। মেয়েদের অনেক কষ্টে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা দিনমজুরীর কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। আর পারছেননা। জীবনসায়হ্নে স্বামীর রেখে যাওয়া এক চিলতে ভিটায় ঠাঁই হয়েছে ছলেমা খাতুনসহ ছেলেদের। জীবনের ৯২টি বছর কেটে গেলেও এখনো জুটেনি বয়স্ক ভাতা। তাই দারিদ্র্য ও অসহায়ত্ব নিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোন রকমে জীবন পর করছে ছলেমা খাতুন। তবে বয়স্ক ভাতা না পাওয়ার কথা শুনে এগিয়ে এসেছেন চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমন।
ছলেমা খাতুন কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ার মৃত নুর আহমদের স্ত্রী । ১৯২৭ সালের ১লা আগষ্ট ছলেমা খাতুনের জন্ম।
স্থানীয়দের কাছে ছলেমা খাতুনের কথা শুনে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ একটি কুঁড়ে ঘরের মাটিতে বিছানা করে শুয়ে আছেন তিনি। গায়ে ময়লা জীর্ণ কাপড়। বয়সের ভারে ভাল করে কথা বলতে পারছেননা। পৈত্রিক ও স্বামীর সূত্রে পাওয়া সকল সম্পত্তি ছেলে-মেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। এমনকি মসজিদের জন্যও তিনি জায়গা দান করেছেন। ছেলের টানাপোড়া সংসারে খেয়ে না খেয়ে আছেন ছলেমা।
ভাঙ্গা ভাঙ্গা কন্ঠে তিনি বলেন, ছেলে দিনমজুরী কাজ করে। তার সামান্য আয়ে সবাইকে নিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি। সবাই বয়স্কভাতা পায়। আমি পাইনা ? তিনি প্রশ্ন করেন, আমার বয়স্কভাতা পাওয়ার সময় কি এখনও হয়নি ?
ছলেমা খাতুনের ছেলে শাহ আলম বলেন, মাকে দেখার মতো আর্থিক সঙ্গতি আমার নেই। নিজের সংসার চালিয়ে মায়ের মুখে এক মুঠো ভাত তুলে দিতে অনেক কষ্ট হয়। তাই মায়ের জন্য বয়স্ক ভাতা কিংবা বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করতে বৃদ্ধা মাকে নিয়ে অনেক ঘুরেছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কাজ হয়নি। আমার মায়ের সারাটা জীবন দুঃখ-কষ্টে কেটেছে। জানিনা মায়ের কপালে সরকারের এসব ভাতা জুটবে কিনা। আমার মায়ের চেয়ে বয়সের ছোট অনেকে বয়স্কভাতা পায়। আমার মা পায়না। আমরা গরীব মানুষ। ভাতা পেলে মাকে চিকিৎসা করাতে পারতাম। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বারদের অনেকবার বলেছি। তারা আমার মাকে বয়স্কভাতা দেয়নি।
স্থানীয় ইউপি মেম্বার আহাম্মদ হোসেন জানান, সামনে নতুন বয়স্কভাতা দেয়া হবে। ওইসময় ছলেমা খাতুনকে তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হামিদ উল্লাহ মিয়া বলেন, আমি এই উপজেলায় যোগদান করেছি কয়েক মাস হয়েছে। আমি আসার পর থেকে নতুন কোন বরাদ্দ আসেনি।
তিনি আরো বলেন, ইউএনও স্যার বিষয়টি আমাকে অবহিত করেছেন। সামনের বরাদ্দে ছলেমা খাতুনের নাম অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীম মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, বিষয়টি আমি অবগত ছিলামনা। এই বয়সে তার বয়স্ক ভাতা পাওয়ার কথা। কি কারণে তাকে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয়নি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।
তিনি আরো বলেন, ছলেমা খাতুনকে ছেলে দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দেন। তার বয়স্কভাতা প্রদানের সকল দায়িত্ব আমি নিলাম।
দেশবিদেশ /০৩ অক্টোবর /২০১৮/নেছার
Posted ২:২০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৩ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh