| বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯
ছবি: সংগৃহীত
একটা সুন্দর ঝকঝকে-চকচকে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন অফিস থাকলে কাজ করতে বেশ সুবিধা। তবে, এর পেছনে খরচ আছে ঢের। অফিস ভাড়া, কর্মচারীদের যাতায়াত খরচ, খাবার খরচ- সবকিছু মিলিয়ে একটা বড়সড় প্রতিষ্ঠানের যে ব্যয় দাঁড়ায়, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লাভ তুলে আনা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য।
কিন্তু, এমন যদি হয়, কাজ করার জন্য অফিসেই আসা লাগছে না, নিজের ঘরে বসে আরাম করে পায়ের ওপর পা তুলে কাজ করছেন। আর মাস শেষে ঠিকই বেতনের টাকা জমা হয়ে যাচ্ছে ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে! কেমন হয় তাহলে?
বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই ‘অফিসবিহীন কোম্পানি’ নতুন ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনচেতা মানুষদের জন্য আদর্শ চাকরি হিসেবে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ পদ্ধতি।
এমনই একটি মাল্টিন্যাশনাল প্রতিষ্ঠানের নাম ‘অটোম্যাট্টিক’। এতে প্রায় ৯শ’ ৩০ জন কর্মী থাকলেও, তাদের কোনো নির্দিষ্ট কর্মস্থল নেই। সবাই যার যার সুবিধামতো জায়গা থেকে কাজ করেন।
সম্প্রতি অটোম্যাট্টিক প্রধান কেট হাসটন বিবিসি ৫’র ‘ওয়েক আপ টু মানি’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন। জানালেন ‘অফিসবিহীন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির’ আদ্যপান্ত।
তিনি বলেন, এটা আমাদের সংস্কৃতিরই একটা অংশ। এখন আর কেউ অফিসের কথা মনেও করে না।
‘আমি অফিস-ফ্রি। আমরা সবাই স্বাধীনতা ভালোবাসি, আর একে অপরের সঙ্গে দেখা করতে নিয়মিত ভ্রমণ করি, এতে বেশ অ্যাডভেঞ্চারও হয়।’
বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা ও পর্যবেক্ষণমূলক সফটওয়্যারের উত্থানের কারণেই অনেক প্রতিষ্ঠান বর্তমানে স্থায়ী অফিস ব্যবস্থাকে পুরোপুরি বিদায় জানাতে পেরেছে। এর পরিবর্তে তারা ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় কর্মী নিয়োগ দিয়ে তাদের নিজের বাড়ি অথবা অন্যের সঙ্গে কর্মস্থল শেয়ার করে কাজ করতে পরামর্শ দেয়।
সেক্ষেত্রে, অফিসবিহীন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে হলে অবশ্যই উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট সংযোগ, মেসেজিং ও ভিডিও অ্যাপ থাকতে হবে।
অটোম্যাট্টিকে প্রায় ৭০টি দেশের কর্মী কাজ করে। কোনো হেডঅফিস না থাকলেও, প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবছর প্লেন ভাড়া দিয়ে কর্মীদের মিটিংয়ের ব্যবস্থা করে থাকে। পাশাপাশি, কর্মীদের বাড়িকে কাজের উপযোগী করে তুলতেও আর্থিকভাবে সহযোগিতা করা হয়। অনেকক্ষেত্রে বাড়িভাড়ার কিছু অংশ, এমনকি কেউ যদি কফিশপে বসে কাজ করে, সেক্ষেত্রে তার কফির দাম দেয় মাল্টিন্যাশনাল এ প্রতিষ্ঠানটি।
কেট হাসটন বলেন, অফিস না থাকায় আমাদের অবশ্যই সাশ্রয় হয়। এর জন্য লন্ডন-সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহরে কাজ করলেও অতি উচ্চহারে ভাড়া পরিশোধ করতে হচ্ছে না।
‘কিন্তু, আমরা কর্মীদের সঙ্গে স্বশরীরে সাক্ষাৎকে অবশ্যই গুরুত্ব দেই। এ জন্য গোটা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বছরে এক বার, আর অধিকাংশ টিমের সদস্যরা প্রতিবছর একাধিকবার দেখা করেন।’
তিনি বলেন, সবাই একসঙ্গে সাক্ষাৎ করার এ খরচ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বহন করা হয়। আমার টিম এ বছর থাইল্যান্ডে দেখা করেছে।
বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করার এ পদ্ধতি দিন দিন বিশ্বব্যাপী আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিক্স লেবার ফোর্স সার্ভের তথ্যমতে, বর্তমানে সাড়ে ১০ লাখেরও বেশি মানুষ ঘরে বসেই চাকরি করছেন।
যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব এক্সেটার বিজনেস স্কুলের প্রফেসর ইলকা ইনসোগ্লু বলেন, নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য এটা অবশ্যই খুব কার্যকর ও আকর্ষণীয় পদ্ধতি। আর কর্মীদের দিক থেকে দেখলে, আপনাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে না, এটা অনেক বড় সুবিধা।
কর্মব্যস্ত সময়ে রাস্তায় যানজটের ঝামেলা এড়াতে সর্বোত্তম পদ্ধতি হলেও, ‘অফিসবিহীন কোম্পানি’র বেশ কিছু অসুবিধা আছে বলেও জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
প্রফেসর ইনসোগ্লু বলেন, এভাবে কাজ করতে গিয়ে অনেকের ক্ষেত্রেই কর্মজীবন ও ব্যক্তিগত জীবন এক হয়ে যায়। অফিস নেই বলে সারাক্ষণ বাসায় বসে কাজ করছেন, তাহলে চাকরির কাজের সমাপ্তি আর ঘরোয়া কাজের শুরু হবে কখন?
তার মতে, এ দু’টি বিষয়ের মধ্যে সীমারেখা থাকা জরুরি।
এছাড়া, বাসায় বসে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই একাকিত্বে ভুগতে পারেন বলেও জানান এ গবেষক। তিনি বলেন, বাসায় কাজ করায় একাকিত্ব অনুভব করার ঝুঁকি অবশ্যই আছে। তবে, একসঙ্গে অনেকে কাজ করলে একটা যোগসূত্র অনুভূত হবে।
Posted ৮:৩১ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১০ জুলাই ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh