বৃহস্পতিবার ২৮শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসা উৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক, রামু   |   শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

বাঁকখালী নদীতে জাহাজ ভাসা উৎসব

রামু উপজেলায় বৌদ্ধদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারনা পূর্ণিমায় বাঁকখালী নদীর দু’পাড়ে হাজার হাজার নর-নারীর সম্মিলন হয়েছে। নদীতে ভাসছিল দৃষ্টিনন্দন ৭ টি কল্প জাহাজ। বাঁশ, বেত, কাঠ আর রঙ্গিন কাগজ দিয়ে অপূর্ব কারুকাজে তৈরী জাহাজে ময়ূর, হাঁস, প্যাগোড়া, সিংহসহ বিভিন্ন প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। নৌকার ভেলায় বসানো সেই জাহাজেই চলছিলো শিশুকিশোর ও যুবকদের বাঁধভাঙা আনন্দ। তাঁরা নানা বাদ্য বাজিয়ে সেখানে নাচছে। গাইছে বুদ্ধ কীর্তন- বুদ্ধং শরণং গচ্ছামী, ধম্মং শরণং গচ্ছামী সংঘং শরণং গচ্ছামী। ‘বুদ্ধ, ধর্ম সংঘের নাম সবাই বলো রে’ বুদ্ধের মতো এমন দয়াল আর নাইরে”।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ অক্টোবর) রামু বাজারের পূর্ব পাশে বাঁকখালী নদীতে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে ঐতিহ্যবাহী কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসব। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দু’দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে রামু বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পুরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদ। প্রবারণা উদযাপনের শেষ দিন কল্পজাহাজ ভাসানো উৎসেব রামুর বাঁকখালী নদীর দু’পাড়ে বৌদ্ধরা ছাড়াও মুসলিম-হিন্দু ধর্মালম্বী এবং দেশ-বিদেশের পর্যটকদের অংশ গ্রহণে পরিণত হয়ে সাম্প্রদায়িক মিলন মেলায়।
দুপুর দেড়টায় উৎসবের শুরুতে পবিত্র ত্রিপিটক পাঠ করে কল্পজাহাজ ভাসানো উদ্বোধন করেন, উখিয়া পাতাবাড়ি আনন্দভূবন বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ প্রজ্ঞাবোধি মহাথের। ভূবন শান্তি একশফুট সিংহ শয্যা গৌতম বুদ্ধ মূর্তিও প্রতিষ্ঠাতা ও উত্তর মিঠাছড়ি বিমুক্তি বিদর্শন ভাবনা কেন্দ্রের পরিচালক করুণাশ্রী থের এ উৎসবে সভাপতিত্ব করেন।
রামু উপজেলা বৌদ্ধ ঐতিহ্য, সংষ্কৃতি ও পূরাকীর্তি সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু’র সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক কেতন বড়–য়া স্বাগত বক্তৃতায় অনুষ্ঠিত জাহাজ ভাসা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন, কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. লুৎফর রহমান, বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্ত ভূষণ বড়ুয়া, সহকারি কমিশনার (ভূমি) চাই থোয়াইহ্লা চৌধুরী, রামু থানা অফিসার ইনচার্জ মো. আবুল মনসুর, ওসি (তদন্ত) এম এম মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ বুদ্ধিস্ট ফেডারেশন রামু’র সভাপতি কিশোর বড়–য়া, রামু কেন্দ্রীয় সীমা মহাবিহারের সাধারণ সম্পাদক রাজু বড়–য়া, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমরবিন্দু বড়–য়া অমল, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি রামু’র সভাপতি স্বপন বড়–য়া, জাহাজ ভাসানো উৎসবের সাবেক সভাপতি পলক বড়–য়া আপ্পু, রামু কেন্দ্রীয় বৌদ্ধ যুব পরিষদের আহ্বায়ক রজত বড়–য়া রিকু, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদ রামু’র সভাপতি রিটন বড়ুয়া প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন, কক্সবাজার জেলা বৌদ্ধ সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিপুল বড়–য়া আব্বু।
দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রামু উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদীতে চলে জাহাজ ভাসানো উৎসবের মূল আনন্দায়োজন। নদীতে নামানো হয় ‘সীমা মহাবিহার বড়–য়া পাড়া’, ‘হাজারীকুল বড়–য়া’, ‘পূর্ব রাজারকুল বড়–য়াপাড়া’, ‘দ্বীপ-শ্রীকুল বড়–য়াপাড়া’, ‘পূর্ব মেরংলোয়া বড়–য়াপাড়া’, ‘বড় ক্যাং রাখাইন পাড়া’ ও ‘হাইটুপী বড়–য়াপাড়া’ গ্রামের বৌদ্ধ যুবকদেও সাতটি কল্পজাহাজ। সন্ধ্যায় আকাশে ফানুস উড়িয়ে ও সমবেত উপাসনার মাধম্যে বিশ্বের সকল প্রাণীর সুখ-শান্তি ও বাংলাদেশের সমৃদ্ধি কামনা করেন বৌদ্ধরা।
রামু উত্তর মিঠাছড়ি প্রজ্ঞামিত্র বনবিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত সারমিত্র মহাথের জানান, আষাঢ়ী পূর্ণিমা থেকে আশ্বিনী পূর্নিমা পর্যন্ত তিনমাস বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্ষাব্রত পালন করেন। এ সময় বৌদ্ধ উপাসক-উপাসিকারা প্রতি অমাবস্যা, পূর্ণিমা ও অষ্টমী তিথিতে অষ্টশীল পালন করেন। বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তিনমাস ব্যাপী বর্ষাব্রত পালন কালে সদ্ধর্ম্ম বিষয়ক লেখাপড়া, গবেষনা ও জ্ঞান আহরন করেন। বর্ষাব্রত পালনের শেষ দিন আশ্বিনী পূর্নিমাকেই বলা হয় প্রবারণা পূর্ণিমা। আড়াইহাজার বছর আগে শুভ প্রবারণা পূর্র্নিমার দিনে মহামানব গৌতম বুদ্ধ তাঁর শিষ্যদের উদ্দেশ্য বলেছিলেন- “হে ভিক্ষুগন বহুজনের হিতের জন্য, বহুজনের সুখের জন্য, জীবজগতের প্রতি মৈত্রী প্রদর্শন করে, দেব মনুষ্যের প্রয়োজনীয় সুখের জন্য, দেশ-দেশান্তরে বিচরন করে কল্যানময় ধর্ম প্রচার করো। পরিপূর্ন পরিশুদ্ধ ব্রক্ষচর্যের মহিমা কীর্তন করো, স্মৃতি সহকারে স্থির, গম্ভীর ও জ্ঞান গর্ভ বাক্য এবং সদ্ধর্ম্ম প্রচার করো”। বুদ্ধের এ উপদেশ পালনে প্রতিবছর নানা আনুষ্ঠানিকাতায় এ দিনটি পালন করা হয় এবং প্রবারনা পূণির্মার পরদিন থেকে এক মাস ব্যাপী কঠিন চীবর দানানুষ্ঠানের মাধ্যমে তাহা পালন করা হয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, সাত-আটটি নৌকার উপর বসানো হয়েছে এক একটি জাহাজ। বাঁশ, কাঠ, বেত, রঙ্গিন কাগজ দিয়ে রেঙ্গুনী কারু কাজে তৈরী দৃষ্টি নন্দন এসব জাহাজ খুব সহজেই দৃষ্টি কাড়ে মানুষের। প্রতিটি জাহাজেই ছিলো একাধিক মাইক। ক্যাসেট প্লেয়ার, ঢোল, কাঁসর, মন্দিরাসহ নানা বাদ্যের তালে তালে শিশু কিশোর ও যুবকরা নেচে গেয়ে মেতেছে অন্যরকম আনন্দে। জাহাজ নিয়ে ভাসতে ভাসতে এপার থেকে ওপারে যেতে যেতে মাইকে চলে বৌদ্ধ কীর্তন, নাচ, গানসহ নানা আনন্দায়োজন। শুধু বৌদ্ধ ধর্মালম্বীরা নয়, এ আনন্দে মেতে উঠেছে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজন ও। প্রায় শতবছর ধরে, রামুর বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে জাহাজ ভাসা উৎসবের আয়োজন করে আসছে। স্থানীয়দের মতে, সারা দেশের মধ্যে বর্মমানে শুধুমাত্র রামুতেই এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।

Comments

comments

Posted ১:৩৩ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৬ অক্টোবর ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com