মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া | মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই ২০১৮
আমিনুল হোসেন এমশাদ (১৫)। চকরিয়া গ্রামার স্কুলের ১০ শ্রেনীর ছাত্র। এসএসসি পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের নিয়ে বার্থ ডে পার্টির ট্রিট দেয়ার কথা ছিলো এমশাদের। কিন্তু মাতামুহুরী নদী কেড়ে নিলো তার সেই স্বপ্ন। গত শনিবার বিকালে মাতামুহুরী নদীর চোরাবালিতে আটকে মারা যাওয়া অন্য পাঁচ বন্ধুর মধ্যে ছিলো এমশাদ। গতকাল সোমবার সকালে আত্মীয়-স্বজনরা এমশাদের বইয়ের টেবিল গুছাতে গিয়ে হঠাৎ খোঁজ পায় একটি ডায়েরীর। পরে ডায়েরীর পাতা উল্টোতেই চোখে পড়ে একটি চিঠি। সেই চিঠি ছিলো বন্ধুদের উদ্দেশ্যে। হইতো এমশাদের মনে জানা হয়ে গিয়েছিলো সে আর বেশি দিন নেই। পরে সেই চিঠি ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে পড়ে। চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এমশাদের চাচা জমির হোসেন।
কি ছিলো সেই চিঠিতে… এমশাদ বন্ধুদের উদ্যোশে লিখেন…..‘জানিনা আর কত দিন আছে। হয়ত আর আজ আছি কাল নেই। তবু যতদিন বাঁচব তোদের সবাইকে সাথে নিয়ে বাঁচব। জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ১২টি বছর তোদের সাথে আছি। হয়ত আর দেখা হবেনা। কিন্তু আমি তোদের কোন দিন ভুলব না। এসএসসি’র পরও তোদের সাথে যোগাযোগ থাকবে। তোরাও আমার সাথে যোগাযোগ রাখিস। তা না হলে খুব একা হয়ে যাবো। ছেলেদের মধ্যে প্রথম বেঞ্চের চারজন আমার ইড়ু ভৎরবহফ, আর এরৎষ ভৎরবহফ এর মধ্যে রিতু। কোথাও চলে গেলে যা’ই হোক না কেন যোগাযোগ বন্ধ রাখিস না। ১২ বছর তোদের সাথে অনেক ঝগড়া করেছি। খুব মজা পাইছি। ১২ বছর তোদের সাথে খুব সুন্দরভাবে কাটিয়েছি। এই সুন্দর মুহুর্ত্বগুলো আমার জীবনে আর আসবে না। আমি নিয়মিত নামাজ ও কোরআন পড়ি। আর চেষ্টা করব ধরে রাখার জন্য। ং.ং.প পর তোদের জন্য একটা ইরৎঃযফধু ঃৎরঃব থাকবে চিন্তা করিস না’। জানা গেছে, আলহাজ্ব আনোয়ার হোসেন দম্পতির দুই ছেলে-এক মেয়ে সন্তান ছিলো, মেয়ে ছিল সবার বড়।
দুই ছেলেই লেখাপড়ায় ভাল হওয়াই তাদেরকে নিয়ে স্বপ্œও ছিলো বেশি। দুই ছেলে খুবই মেধাবী। বড় ছেলে এমশাদ পিএসসি ও জেএসসিতে বৃত্তি পেয়েছিলো। ছোট ছেলে মেহেরাবও পিএসসিতে বৃত্তি পেয়েছে। চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে বড় মেয়ে। পরীক্ষাই পাস হলেই উচ্চ শিক্ষার জন্য চট্টগ্রাম শহরে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে ফ্ল্যাটও কিনেছেন তিনি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে ওই ফ্ল্যাটে উঠার কথা ছিলো আনোয়ার হোসেনের পরিবারের। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস তার সে স্বপ্ন স্বপ্নই রয়ে গেলো। ফ্ল্যাটে উঠার আগেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলো তার দুই আদরের সন্তান মেধাবী ছাত্র এমশাদ ও মেহেরাব।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বিকাল ৩টার দিকে মাতামুহুরীর নদীর চোরাবালিতে আটকে চকরিয়া গ্রামার স্কুলের পাঁচ স্কুল ছাত্র সাঈদ জাওয়াদ অরভি (১৫), দুই ভাই আমিরুল হোসেন এমশাদ (১৫) ও আফতাব হোসেন মেহরাব (১২) , তূর্ণ ভট্টাচার্য্য ও ফারহান বিন শওকত (১৫) পাঁচ ছাত্র নিখোঁজ হয়। ওইদিন স্থানীয় প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, ডুবুরীদল ও স্থানীয় লোকজন বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে।
দেশবিদেশ /১৭ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১২:১১ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh