দেশবিদেশ রিপোর্ট | শনিবার, ০২ মার্চ ২০১৯
কক্সবাজারের টেকনাফে পুলিশ ও বিজিবির সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির নিকটাত্মীয়সহ চার ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছেন। নিহতদের ২ জন সর্ম্পকে পিতা-পুত্র। গতকাল শুক্রবার ভোররাতে টেকনাফের হোয়াইক্যং ও সাবরাং এলাকায় বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা দুটি ঘটে। হোয়াইক্যং এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহতরা হলেন টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়ার আব্দুল জলিল ওরফে জানে আলমের ছেলে রোহিঙ্গা নজির আহমদ ও মোঃ জাকারিয়ার ছেলে গিয়াস উদ্দীন। টেকনাফ সীমান্তের দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড রোহিঙ্গা নজির ডাকাত গতকাল ক্রসে যাওয়ায় এলাকায় মিষ্টি বিতরণ চলছে।
অন্যদিকে সাবরাং এলাকায় বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই ইয়াবা কারবারি হচ্ছেন টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ ডেইল পাড়া এলাকার কালা মিয়ার পুত্র আব্দুস শুক্কুর (৫২) ও আব্দুস শুক্কুরের পুত্র মো. ইলিয়াস(২৫)। পিতা-পুত্রের ঘটনাস্থল তল্লাশী করে এক লাখ পিস ইয়াবা বড়ি, ১টি দেশীয় তৈরী বন্দুক ও ১টি খালী কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। অপরদিকে আহত বিজিবি সদস্যকে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি টেকনাফ সীমান্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ও পুলিশের মহাপরিদর্শকের উপস্থিতিতে ১০২ জন ইয়াবা কারবারি আতœসমর্পণ করার ১৩ দিনের মাথায় পুলিশ ও বিজিবি’র হাতে একই সময়ে এই ৪ জন কারবারি নিহত হলেন। এই ১৩ দিনে ক্রসে নিহত হয়েছেন ৭ জন কারবারি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানান, সীমান্তের উখিয়া-টেকনাফের ইয়াবা কারবারি যতই প্রভাবশালী ব্যক্তি হোক না কেন তাদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবেনা।
স্থানীয়রা জানান, পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নজির আহমদ টেকনাফের স্বশস্ত্র ডাকাত দলের সর্দার রোহিঙ্গা ডাকাত আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাতের ছোট ভাই। টেকনাফের গহীন পাহাড়ে ডাকাত হাকিমের রয়েছে একাধিক আস্তানা। ইয়াবা কারবার, খুন, অপহরণসহ তার বিরুদ্ধে রয়েছে টেকনাফবাসীর বিস্তর অভিযোগ। তার ছোট ভাই পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত নজির আহমদও হাকিম ডাকাতের দলের অন্যতম সদস্য এবং সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। হাকিম ডাকাত ও তার ভাই নজির ডাকাত টেকনাফ সদর ইউপির মেম্বার ও ত্যাগি আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামী।
ত্যাগি আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজ মেম্বার ছিলেন সীমান্তের প্রভাবশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট জনপ্রতিনিধিদেও এক আতংক। তিনি এসব প্রভাবশালীদের ইয়াবা কারবারের বিরুদ্ধাচারণ করে আসায় পথের কাটা দুর করতে ইয়াবা সিন্ডিকেট জনপ্রতিনিধিরাই রোহিঙ্গা হাকিম ও নজির ডাকাতকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করিয়েছে মর্মে অভিযোগ রয়েছে। সিরাজ মেম্বার ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক নাগরিক। তিনি কারবারিদের হাতের পুতুল হননি কোন সময়। সিরাজ হত্যাকান্ডের পরও নজির ডাকাত সীমান্তের প্রভাবশালীদের জামাতা হবার সুবাধে নিহতের পরিবারকে হুমকি দিয়ে আসছিলেন বার বার। এমন অভিযোগ সিরাজ মেম্বার পরিবারের।
জানা গেছে, দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা হাকিম ডাকাত বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড নিহত নজির ডাকাত টেকনাফ উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন এলাকা পুরান পল্লান পাড়ার মুর্তিমান আতংক ছিল। এখান থেকেই অনেক লোকজনকে অপহরণ করে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছিল। নজির ডাকাত স্থানীয় জহিরের এক পুত্রকেও অপহরণ করেছিল। পরে তাকে উদ্ধার করা হয়েছিল। এর আগে ছলিম নামের একজন সহ আরো দুইজনকে অপহরণের পর গহীন পাহাড়ে নিয়ে হত্যা করে। তাদেও লাশও এ পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়নি। টেকনাফে এ যাবত অর্ধ শত লোক ক্রসে গেছে। তন্মধ্যে এমপি বদির আতœীয় রোহিঙ্গা নজির ডাকাত গতকাল ক্রসে যাওয়ায় সীমান্তের লোকজন সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছেন।
জানা গেছে, টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা সিন্ডিকেটের লোকজন মিয়ানমার থেকে ইয়াবা পাচারের কাজটি সহজতর করার উদ্দেশ্যে রোহিঙ্গা দুর্ধর্ষ লোকজনের সাথে আতœীয়তায় আবদ্ধ হয়ে থাকেন। তেমনি হাকিম ডাকাত ও নজির ডাকাত সহ তাদের বাহিনীর প্রত্যেক সদস্যের সাথে সীমান্তের ইয়াবা সিন্ডিকেট কোন না কোনভাবে আতœীয়তায় আবদ্ধ হয়ে রয়েছেন। বিগত এক দশক ধরে রোহিঙ্গা হাকিম ও নজির ডাকাত সীমান্তে অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা, ইয়াবা পাচার, ডাকাতি, ছিনতাই সহ এমন কোন অপরাধজনক ঘটনা বাকি নেই করছে না। কিন্তু সীমান্তের প্রভাবশালী ইয়াবা সিন্ডিকেট জনপ্রতিনিধিরা হাকিম ও নজির ডাকাতকে ধরার জন্য পুলিশকে বাধা দিয়ে আসছিলেন। একারনে এতকাল ধরে রোহিঙ্গা হাকিম ও নজির ডাকাতের একের পর এক ‘অপারেশন’ অব্যাহত ছিল।
এলাকাবাসী আরো জানান, হাকিম ডাকাতের ভাই বন্দুকযুদ্ধে নিহত শীর্ষ ইয়াবা কারবারি নজির ডাকাত উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির ঘনিষ্ট আত্মীয়। বদির মামাতো ভাই মোঃ জাহাঙ্গীরের জামাতা নজির আহমদ ওরফে নজির ডাকাত। সে সূত্রে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েমে প্রায়শ নিজেকে এমপি বদি ও মৌলভী মুজিবের জামাতা পরিচয় দিত নজির ডাকাত। রোহিঙ্গা আব্দুল জলিল ওরফে জানে আলমের পরিবারটি মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসলে সে সময় আব্দুর রহমান বদি তাদের টেকনাফে আশ্রয় দেন। জানে আলমের ৬ সন্তানের মধ্যে বড় আব্দুল হাকিম ওরফে হাকিম ডাকাত এবং নজির ডাকাতকে নিজের কাজে ব্যবহার করতেন বদি ও তার ভাই মৌলভী মুজিব। তাদের ছত্রছায়ায় থেকে হাকিম ডাকাত ও নজির ডাকাত দিনদিন টেকনাফে ত্রাসের রামরাজত্ব চালায়। হাকিম ডাকাত আইনশৃংখলা বাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে বেড়ালেও তারভাই নজির ডাকাত বন্দুকযুদ্ধে মারা যাওয়ায় এলাকায় স্বস্তি বিরাজ করছে। এমনকি
বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় টেকনাফ মডেল থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাস জানান, হোয়াইক্যং বটতলী এলাকায় ইয়াবা ক্রয়-বিক্রয়ের খবর পেয়ে পুলিশের একটি টীম সেখানে অভিযান চালায়। এসময় ইয়াবা কারবারিরা পুলিশকে দেখে অতর্কিত গুলি ছোড়ে এবং পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি চালায়। এক সময় ইয়াবা কারবারিরা পিছু হটলে পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুই জনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
ওসি প্রদীপ বলেন, নিহত দুই জনই তালিকাভূক্ত ইয়াবা কারবারি। ঘটনাস্থল থেকে ৬ হাজার পিস ইয়াবা, ৩ টি দেশে তৈরী অস্ত্র, ৪ রাউন্ড কার্তুজ ও ২৩ টি গুলির খোসা পাওয়া যায়। নিহতদের মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে একই দিন বিজিবির সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। সাবরাং মগপাড়া এলাকায় বিজিবির সঙ্গে ইয়াবা কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ওই ঘটনায় দুই জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবির) অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, সাবরাং ইউপির পুুরাতন মগপাড়া এলাকা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার একটি চালান বাংলাদেশে ঢুকতে পারে এমন গোপন খবর পেয়ে বিজিবির টহল দল সেখানে অভিযানে যায়। এসময় মগপাড়া কাঁকড়া প্রজেক্ট এলাকায় আগে থেকে ওঁৎপেতে থাকা ইয়াবা পাচারকারীরা বিজিবি টহল দলকে লক্ষ্য করে গুলি বর্ষণ করে। আত্মরক্ষার্থে বিজিবিও পাল্টা গুলি চালালে পাচারকারীরা পিছু হটে। পরে ভোরের আলোতে ঘটনাস্থল তল্লাশি করে দুই অচেনা ব্যক্তির মৃতদেহ পাওয়া যায়।
লে. কর্ণেল আছাদুদ বলেন, যে স্থানে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমরা তল্লাশি করে একলাখ পিছ ইয়াবা ট্যাবলেট, একটি দেশে তৈরী বন্দুক ও একটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। ###
Posted ১২:৪২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০২ মার্চ ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh