অবৈধ খেলোয়াড় নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্ত:কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের দায়ে টেকনাফ সরকারি কলেজকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই সঙ্গে আগামী তিন বছর পর্যন্ত সকল পর্যায়ের টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সোমবার (৬ আগস্ট) টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির চট্টগ্রাম বিভাগের আহ্বায়ক চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা স্বাক্ষরিত এক আদেশে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এর আগে খেলোয়াড়দের পরিচয় নিয়ে চ্যালেঞ্জপূর্বক অভিযোগ তুলে বান্দরবান সরকারি মাতামুহুরী কলেজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্ত:কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৩ এর ৩য় কোয়ার্টার ফাইনাল (টুর্নামেন্টের ১৮ তম) ম্যাচে টেকনাফ সরকারি কলেজ বনাম বান্দরবান সরকারি মাতামুহরী কলেজ মধ্যকার ম্যাচে এই অভিযোগ তোলা হয়।
টেকনাফ সরকারি কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ও দলীয় ম্যানেজার জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে বান্দরবান সরকারি মাতামুহুরী কলেজের দলীয় ম্যানেজার ফরিদুল ইসলাম অভিযোগটি দাখিল করেন।
অভিযোগে টেকনাফ সরকারি কলেজ দলের মো. ইয়াসির (জার্সি নম্বর ১), সায়েম আনোয়ার তৃষার (জার্সি মম্বর ৭), জুনায়েদ জার্সি নম্বর ৯), ইব্রাহিম খালেক (জার্সি নম্বর ১১) কে ওই কলেজের শিক্ষার্থী নয় উল্লেখ করা হয়। এবং প্রত্যেক জনের নাম পরিবর্তন করে খেলানোর অভিযোগ তোলা হয়।
আদেশে উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্ত চার খেলোয়াড় স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করে জানায় যে, তারা পরিচয় বদল করে অন্য নামে খেলেছে। তারা বিষয়টি স্বীকার করে এটি গর্হিত ও অন্যায় কাজ মনে করে লজ্জিত হয়। তাদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে এটি প্রমাণিত যে, টেকনাফ সরকারি কলেজ টিমের ৭ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় সায়েম আনোয়ার তুষার (প্রকৃত নাম কাওসার হামিদ), ১ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় মো. ইয়াসির (প্রকৃত নাম মামুনুর রশীদ), ১১ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় ইব্রাহিম খালেক (প্রকৃত নাম শেখ আহমেদ), ৯ নম্বর জার্সিধারী খেলোয়াড় জুনায়েদ (প্রকৃত নাম জাহিদুল ইসলাম) টেকনাফ সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ এবং সংশ্লিষ্ট কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক জিয়াউর রহমান এর যোগসাজেশে এ ধরনের গর্হিত ও অনৈতিক ভূয়া পরিচয় প্রদানের ঘটনা ঘটায়।
আদেশ আরও উল্লেখ করা হয়, টুর্নামেন্টের বিধি ২৬ (৮) মোতাবেক টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটি চট্টগ্রাম বিভাগের আহ্বায়ক টেকনাফ সরকারি কলেজ টিমকে ভূয়া পরিচয়ে খেলোয়াড় নিয়ে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণের দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে ওই টিমকে টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার এবং ২০২৩ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছর অর্থাৎ ২০২৬ সাল পর্যন্ত সকল পর্যায়ের টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে ৫ আগস্টের অনুষ্ঠিত ৩য় কোয়ার্টার ফাইনাল (টুর্নামেন্টের ১৮ তম) ম্যাচের ফলাফল বাতিল ঘোষণা করে বান্দরবান সরকারি মাতামুহুরী কলেজ টিমকে ওই ম্যাচে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।
এ ব্যাপারে টেকনাফ সরকারি কলেজের ক্রীড়া শিক্ষক ও দলীয় ম্যানেজার জিয়াউর রহমান বলেন, ‘এই বিষয়ে আমি এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’
চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্ত:কলেজ ফুটবল টুর্নামেন্ট ২০২৩ এর চট্টগ্রাম বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় গেল ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত বান্দরবান সরকারি মাতামুহুরী বনাম টেকনাফ সরকারি কলেজের খেলা শেষে টেকনাফ সরকারি কলেজ দলের পক্ষে অবৈধ খেলোয়াড় খেলানোর অভিযোগ আনে বান্দরবান সরকারি মাতামুহুরী কলেজ। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেছে তারা। ৬ আগস্ট ওই অভিযোগের শুনানি শেষে অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হওয়ায় টেকনাফ সরকারি কলেজকে উক্ত টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার করা হয়। একই সঙ্গে আগামী ৩ বছরের জন্য ওই কলেজকে যাবতীয় টুর্নামেন্ট থেকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।’
টেকনাফ সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম বলেন, ‘আমি যা শুনলাম আমাদের কলেজ থেকে ৫ জন খেলোয়াড়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছে। তন্মধ্যে ১ জনের বিরুদ্ধে প্রমাণ পাওয়ায় টেকনাফ সরকারি কলেজকে বাতিল করেছে।’
কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন মিলকী বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে জেলা রানার্স আপ হয়ে টেকনাফ সরকারি কলেজ বিভাগীয় পর্যায়ে পৌঁছে। কক্সবাজারে খেলা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কিন্তু চট্টগ্রাম গিয়ে তারা ৪ জন অবৈধ খেলোয়াড় নিয়ে খেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাদের টুর্নামেন্ট থেকে বহিষ্কার এবং ৩ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’