সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও | শুক্রবার, ০২ নভেম্বর ২০১৮
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধিন গহীনবনে অবৈধ অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে কয়লা। সামাজিক বাগান থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। সদর উপজেলার ইসলামাবাদ কাঞ্চনমালা, ভিলেজার পাড়া, ইসলামপুর জুমনগর, চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী পূর্বপাড়া, সেগুন বাগিচা, পূর্ব নয়াপাড়া, পিয়াজ্যাকাটাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে প্রায় ডজনাধিক কয়লা তৈরির চুলা। এতে একদিকে যেমন বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি সৃষ্ট ধোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে শ্বাসজনিত নানা ব্যাধি। অপরদিকে পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সরেজমিন গতকাল উল্লেখিত এসব স্থানে গিয়ে এমনতর চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ফুলছড়ি রেঞ্জের স্ব-স্ব বিট অফিসারদের মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে এসব চুলা নিয়ন্ত্রণ করেন। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লার কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। বিধি নিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। এসব চুলাই শত শত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।
কয়লা শ্রমিকরা জানায়, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয়। কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ১০০ থেকে ১৫০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বস্তায় ভরে ট্রাক, পিকাপ, ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে জেলার বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঞ্চনলমালা এলাকার অবৈধ কয়লা ব্যবসায়ী বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ হলেও কিছু করার নেই। এ ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে ভালো লাভ হয়। তাই এ ব্যবসা করে যাচ্ছি।
খুটাখালী পূর্বপাড়ার জনৈক কয়লা ব্যবসায়ী বলেন, আগে কাঠের ব্যবসা করতাম। বর্তমানে কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরিতে ব্যবসা ভালো হচ্ছে। তাই কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি করছি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, একটি চুল্লিতে এক সপ্তাহে কমপক্ষে ২শ থেকে সাড়ে ৩’শ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। প্রতি বস্তা কয়লা ৫শ থেকে সাড়ে ৫ শ টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ভূক্তভোগীরা জানায়, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ। সামাজিক বাগানের বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। নিয়মিত এই বিশাল পরিমাণের গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানোর ফলে খুবই দ্রুতই ওই এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিসহ নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগ বালাই বৃদ্ধির আশংকা রয়েছে।
তাদের অভিযোগ, ফুলছড়ি বনবিভাগ ও সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবগত হয়েও কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।
কক্সবাজার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ডাক্তার রফিক উস সালেহিন বলেন, কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও শিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে নিশ্চিতভাবে শিশু জন্মগত ভাবেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়েই জন্ম নিবে। এছাড়া এসব চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের অ্যাজমা সমস্যা, ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যা এবং চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে।
দেশবিদেশ /০২ নভেম্বর ২০১৮/নেছার
Posted ৯:৪৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০২ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh