দেশবিদেশ রিপোর্ট | শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৮
কক্সবাজার জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম রহিম উল্লাহর নামাজে জানাজায় বক্তৃতা ও কান্নাকাটি করে বিপাকে পড়েছেন এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল। একজন জামায়াত নেতার জানাজার নামাজে বক্তৃতা দিতে উঠে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি কমল মরহুমের স্মৃতি চারণ করে দীর্ঘক্ষণ কেঁদেছেন। সেই সাথে প্রয়াত জামায়াত নেতার নামে একটি সড়কের নামকরণ এবং তার পরিবারের জন্য জমি দেয়ার ঘোষণা দেন এমপি কমল।
বুধবার সকাল সাড়ে ১১ টায় কক্সবাজার জেলা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে অনুষ্টিত জানাজার নামাজে এমপি সাইমুম সরোয়ার কমলের এহেন কর্মকান্ডে রাজনীতির মাঠে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কেউ বলছেন এটি অতিরিক্ত জামায়াত প্রীতি। আবার কেউ বলছেন নির্বাচনকে সামনে নিয়ে জামায়াতের ভোট লাভের জন্যই এসব বলা।
জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহ (৫৪) এর নামাজে জানাজায় কক্সবাজার-৩ রামু-কক্সবাজার সদর আসনের এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল বক্তৃতা দিতে উঠে বলেন-‘ প্রয়াত জিএম রহিমুল্লাহ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক বছর সিনিয়র ছিলেন। তার সাথে আমার ভাল সর্ম্পক ছিল।’ তিনি বলেন, জিএম রহিমুল্লাহ কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পর থেকেই তিনি তাকে সহযোগিতা দিয়ে আসছেন।
এমপি কমল প্রয়াত জামায়াত নেতার স্মৃতি চারণ করে এক পর্যায়ে অঝোরে কাঁদতে থাকেন। তিনি (এমপি কমল) বলেন, প্রয়াত জামায়াত নেতা ভাড়া ঘরে থাকতেন তাই তার পরিবারের ঘর করার জন্য তিনি জমি দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। সেই সাথে জামায়াত নেতার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য তার (জামায়াত নেতা) নামে একটি সড়কের নামকরণেরও ঘোষণা দেন এমপি কমল।
এসব বিষয়ে কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোঃ নজিবুল ইসলাম বলেন-‘ এমপি কমল ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে একজন প্রয়াত ব্যক্তির জানাজায় আবেগ নিয়ে কান্নাকাটি করতে পারেন। তার জন্য নিজের টাকায় জমিও কিনে দিতে পারেন। কিন্তু জনগনের ব্যবহৃত কোন সড়কের নাম একজন জামায়াত নেতার নামে উৎসর্গ করার কোন অধিকার এমপি’র থাকতে পারেনা।’
কক্সবাজারের রামু উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামশুল আলম মন্ডল বলেন-‘ এমপি কমলের প্রয়াত পিতা ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্টজন ছিলেন। ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগটকও। তদুপরি ওসমান সরোয়ার আলম চৌধুরী দলীয় ২ বারের নির্বাচিত এমপি এবং আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। অথচ এমপি কমল গত ৫ বছরেও নিজের প্রয়াত পিতার নামে একটি সড়কের নামকরণ করনেনি। অথচ সামনে ভোট নিয়ে তিনিই (এমপি কমল) কিনা জামায়াত নেতার নামে সড়কের নামকরণ করবেন ?’
শামশুল আলম মন্ডল আরো বলেন, এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল কক্সবাজার শহরের কলাতলী গোলচত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি স্মৃতিফলক স্থাপনের কাজ শুরু করেছিলেন। তিনি ফলকের জন্য সরকারি বরাদ্দ করা টাকাও উত্থোলন করেছিলেন। অথচ জাতির জনকের সেই স্মৃতিফলকের কাজ পর্যন্ত তিনি করনেনি। পরবর্তীতে সরকারি টাকা পূণরায় সরকারি তহবিলে তিনি ফেরৎ দিতে বাধ্য হন বলে জানান-রামু উপজেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। এ বিষয়ে এমপি সাইমুম সরোয়ার কমল গতকাল বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের জানান-‘আমি একটু আবেগ প্রবণ হয়ে পড়ে অনেক কিছু বলেছিলাম। আমি একে একে দু’টি জানাজায় অংশ নিয়েছি। তবুও আমার বক্তৃতায় অন্তত মানুষতো খুশী হয়েছে।’ এমপি কমল বলেন, জমি তিনি নিজের টাকায় কিনে দিবেন। তবে সড়কের নামকরণ করতে পারবেন কিনা তাতে তিনি সন্দিহান।
প্রসঙ্গত গত মঙ্গলবার দুপুরে শহরের হোটেল সাগরগাঁও’র একটি কক্ষ থেকে জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পারিবারিক সুত্রের দাবি হোটেল কক্ষে ঘুমন্ত অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন খন্দকার জানান, জামায়াত নেতা জিএম রহিমুল্লাহর বিরুদ্ধে ২০১৩ সাল থেকে বেশ ক’টি নাশকতা মামলা রয়েছে। প্রয়াত জামায়াত নেতা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলা শিবিরের সভাপতি ছিলেন।
Posted ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ২৩ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh