বৃহস্পতিবার ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder

পৌরসভার লাইনে পানি নেই, চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী

মাহাবুবুর রহমান   |   সোমবার, ০৩ নভেম্বর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   58 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

পৌরসভার লাইনে পানি নেই, চরম দুর্ভোগে পৌরবাসী

* ৫ বছর আগের অনিয়মের মাসুল দিচ্ছে পৌরবাসী
* ২০১৫ সালের পরে আর উৎপাদক নলকূপ বসানো হয়নি
* ভুয়া বিল ভাউচার করে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে

পৌরসভার লাইনের পানি আসছে না। কিন্তু বিল ঠিকই আসছে। গত ৪ বছর ধরে পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। পৌর এলাকার টেকপাড়া,দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া,তারাবনিয়ারছড়া, চাউল বাজার,নুর পাড়া,কৃষি অফিস রোড় এলাকা থেকে শুরু করে পেশকার পাড়া সহ ৩ ও ৪ নং ওয়ার্ডের বেশ কিছু এলাকার বাসিন্দারা তীব্র পানি সংকটে পড়েছে। তবে ঠিকই পৌরসভার পানির বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। পানি না পেয়ে চরম অসুবিধায় পড়েছে পৌরসভার ১০২৫ জন গ্রাহক। আজ কাল করে লাইন ঠিক করার কথা বললেও পানির দূর্ভোগ কমছে না কিছুতেই।

জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভা থেকে পানি সরবরাহ নেয় ১০২৫ পরিবার। তাদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি শুধু মাত্র পৌরসভার লাইনের পানির উপর নির্ভরশীল। সর্বশেষ ২০১৫ সালের পরে কক্সবাজার পৌর এলাকাতে নতুন করে উৎপাদক নলকূপ আর স্থাপন করা হয়নি। তখন দায়িত্বশীল মেয়র সরওয়ার কামাল পৌর এলাকা জুড়ে ৬ টি গভীর উৎপাদক নলকূপ স্থাপন করিয়েছিলেন। এর পরে পৌরসভার জনসংখ্যা কয়েকগুন বাড়লেও বাড়েনি উৎপাদন নলকূপের সংখ্যা। বরং ১০ টি নূলকুপের মধ্যে ২ টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে দীর্ঘদিন। বাকি ৮ টি উৎপাদক নলকুপ থেকে পানি উঠলেও তা পরিমানে কমে আসছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পৌরসভার এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, পৌরসভায় সাবেক মেয়র ও বর্তমান সময়ে পানি শাখায় দায়িত্বশীল প্রকৌশলীরা নামে বেনামে বিল বানিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে,কাজের কাজ কিছুই করেনি। পানির মটর গুলো মেরামতের নামে দামী যন্ত্রাংশ কাগজে কলমে কিনলেও বাস্তবে তা ছিল খুবই নিম্নমানের। কিন্ত বিল করে ঠিকই সব টাকা ভাগাভাগি করেছে। বর্তমানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলী রুমেল বড়ুয়া শুধু বিল ভাউচার করে কি পরিমান টাকা মেরে দিয়েছে তার তথ্য প্রমান থাকলে কেউ কোন ব্যবস্থা নেয়নি বরং তাকে পুরুস্কৃত করা হচ্ছে।

কক্সবাজার শহরের টেকপাড়ার বাসিন্দা জাবেদ মিয়া বলেন,আমার বাসায় ব্যবহারের পানির একমাত্র উৎস হচ্ছে পৌরসভার লাইনের পানি। খাওয়ার পানি নিয়মিত প্রতিবেশী থেকে আনা হয়। কিন্তু গত প্রায় ৩ বছর ধরে পৌরসভার লাইনে পানি পাচ্ছি না। আগে মাঝে মধ্যে অল্প অল্প পেলেও ৫/৬ মাস ধরে এক ফুটা পানি আসছে না লাইনে। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম অসুবিধায় আছি। টেকপাড়ার বড় পুকুর পাড় এলাকায় অসংখ্য মানুষ পৌরসভার পানির উপর নির্ভরশীল। সবার ঘরে এখন হাহাকার বিরাজ করছে।

শহরের দক্ষিণ রুমালিয়ারছড়া এলাকার মালেকা বেগম বলেন, লজ্জার কথা কি বলবো, মাঝে মধ্যে বাথরুমেও পানি থাকেনা। তখন কি বাজে অবস্থায় পড়তে হয় চিন্তা করে দেখেন। আমাদের আশপাশে কোথাও নলকূপ নাই। আশপাশের কিছু বিল্ডিংয়ে নিজস্ব মটর থাকলেও সেখানে আমরা যেতে পারিনা। আমাদের একমাত্র ভরসা হচ্ছে পৌরসভার লাইনের পানি। অনেক সময় ভাল পানি আসলে আমরা সেই পানি পানও করি আবার ব্যবহারও করি। কিন্তু গত প্রায় ৩ বছরের বেশি হচ্ছে পৌরসভার লাইনে পানি পাচ্ছি না। আমরা এলাকারবাসীর পক্ষ থেকে কয়েক বার পৌরসভায়ও গিয়েছিলাম তারা আজ কাল করে এখনো ঠিক করার কোন খবর নেই। এদিকে আমাদের মরণ দশা হয়ে যাচ্ছে। এক কাপড় ২ সপ্তাহ পড়ে থাকি কারন ধুতে পারি না। পুরুষ মানুষরা হয়তো বাইরে গিয়ে গোসল করতে পারে আমরা মেয়েরা কোথায় যাব? প্রতিবেশী মানুষ জনের দয়ায় এখানো কোন মতে বেচে আছি। আমরা দ্রুত পানি সমস্যার সমাধান চাই।

এ ব্যাপারে শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন,আমরা কিছুদিন আগে পানির দাবীতে পৌরসভার সামনে মানববন্ধন করেছি, তখন কর্মকর্তারা আশ্বাষ দিলেও এখনো কোন সুরাহা হয়নি। পুরু এলাকা জুড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা দাবী করেন,অনেকে ব্যক্তি মালিনাধীন বাড়িতে ২/৩ টি ডিপ মটর বসিয়ে পানি তুলছে এতে পানির সংকট আরো বাড়ছে। এভাবে ডিপ মটর বসানোর আইন নেই। সেটাও পৌরসভা তদারকি করেনা। বরং আমাদের কাছে প্রমান আছে টাকা খেয়ে সব সমাধান করে তারা।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার রাজ বিহারী দাশ বলেন, পৌর এলাকার পানির পাইপ বসানো হয়েছিল প্রায় ৫ বছর আগে। তখন মেয়র ছিল মুজিবুর রহমান। আর তৎকালীর মেয়র কোন কাউন্সিলরকে গুরুত্বদিতেন না, আর সে সময়ের ঠিকদারকে তিনি বিশেষ সুবিধা দিয়েছিলেন সেটা সবাই জানে। ফলে তারা কোন কাউন্সিলরকে পাত্তা দেয়নি। পাইপ বসানোর কাজে পুকুর চুরি হয়েছে। আমরা সে সময় বলেছিলাম এগুলো নিয়ে মানুষ কষ্ট পাবে। এখন থেকেই দূর্ভোগ শুরু হয়ে গেছে। আর পাইপ বসানোর কাজে মেয়রের সাথে বর্তমান পৌর সচিব এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সহ সবাই জড়িত ছিল।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন,পুরু পৌর এলাকা জুড়ে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। নাগরিকরা কষ্ট পাচ্ছে,অথচ বর্তমান পৌর কর্তৃপক্ষ সে সব বিষয়ে নজর দিচ্ছে না। যেই সব পানির পাম্প চালু আছে সেগুলোতে পানির উৎপাদন বাড়ানো দরকার। শুনেছি প্রতিটি কাজে অনিয়ম দূর্নীতি হচ্ছে সে গুলো তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। আর ঝিলংজা চান্দের পাড়া এলাকায় যে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করার কথা সেটা কেন বন্ধ হয়ে আছে জানিনা। দ্রুত সেই প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ করার উদ্দ্যোগ নেওয়া দরকার।

ডিবিএন/জেইউ। 

Facebook Comments Box

Comments

comments

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম

যোগাযোগ

প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত

মোবাইল : ০৩৪১-৬৪১৮৮। বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন 01870-646060

ই-মেইল: ajkerdeshbidesh@yahoo.com