দীপক শর্মা দীপু | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার ও জেলায় বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় আরো ২০ হাজার পরিবার পাহাড়ে ঝূঁকি নিয়ে বসবাস করছে। আর অব্যাহত রয়েছে পাহাড় কাটা। পাহাড় কাটা ও পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ বসতির কারনে পাহাড় ধসের শংকা বেড়েছে। সে সাথে প্রতিবছর অসংখ্য তাজা প্রাণ ঝরে পড়ছে পাহাড়ের কোলে। এবার ৫০ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড়ি কোলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে। এদিকে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন ঝুঁকি আশংকা করে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের সরিয়ে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আরস দ্রুত সরে না গেলে সরিয়ে দিতে বাধ্য হবেন বলেও তিনি হুশিয়ারি দেন। গত তিন ধরে কক্সবাজারে একটানা তিনদিন বর্ষনের কারনে পাহাড়ে থাকা লোকজনদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা মো: আলী কবির জানান, প্রায় ৬ হাজার একর বনভূমিতে গড়ে উঠেছে রোহিঙ্গাদের বসতি। রোহিঙ্গাদের দখলে চলে যাওয়া ভূমি বাদ দিয়ে দক্ষিণ বনবিভাগে প্রায় ৫৩৪১ হেক্টর বনভূমি বেহাত হয়েছে। অন্যদিকে উত্তর বনবিভাগে ৭০৫৩ হেক্টর বনভূমি দখল হয়ে গেছ। দখল হয়ে গেছে জেলা প্রশাসনের আওতাধীন খাস খতিয়ানের অনেক পাহাড়ি ভূমি। এসব পাাহাড়ে ৫০ হাজারের বেশি পরিবার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বাস করছে। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, পাহাড়ি অঞ্চল হিসেবে কক্সবাজার খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
গত ২০১০ সালের ১৫ জুন হিমছড়িতের ৬ জন সেনা সদস্যসহ সেই বছর জেলার বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে ৫৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। ২০১০ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত দুই শতাধিক প্রাণহানি হয়েছে। প্রতিবছর পাহাড় ধসে কক্সবাজারে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকে। প্রতিবছর বিপদ শংকা হলেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন তৎপর হয়ে উঠেন। এবারো বর্ষার শুরুতে জেলা প্রশাসন পাহাড় কাটা বন্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের বাঁচাতে উদ্যোগ নিয়েছেন। গত ৩ মে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খালেদ মাহমুদকে প্রধান করে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারিদের তালিকা প্রণয়ন ও তাদের সরিয়ে নিতে ৬ টি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশের প্রতিনিধি, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের প্রতিনিধি, ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, বনবিভাগের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সদস্য হিসাবে রাখা হয়। গঠিত এসব কমিটির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে ৩০ হাজারের বেশি পরিবারের মানুষ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।
বিশেষ করে শহরের লাইট হাউজ, সৈকত পাড়া, ডিসি পাহাড়, সার্কিট হাউস সংলগ্ন, মোহাজের পাড়া, দক্ষিণ ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, বৈদ্যঘোনা, মধ্যম ঘোনারপাড়া, পাহাড়তলি, কলাতলী আদর্শগ্রাম, ঝরিঝরিকুয়া, সদর উপজেলা অফিস সংলগ্ন, লিংকরোড পাহাড়ি এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ বসতি বেশি। আর এসব ঝুঁকিপূর্ণ বসতি গড়ে উঠেছে বনভূমি ও পাহাড়ি খাস জমিতে। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আজমল হুদা বলেন, কক্সবাজারের বনবিভাগের জমি আর জেলা প্রশাসনের পাহাড়ি জমি দখল করে প্রতিনিয়ত অবৈধ বসতি গড়ে উঠছে। রাজনৈতিক নেতা, প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এসব পাহাড় দখলে জড়িত। এমনকি বিভিন্ন হাউজিং গ্রুপ, ডেভেলপার কোম্পানি দখল করে রেখেছে পাহাড়ি জমি। প্রতিদিন নতুন নতুন পাহাড় দখল হচ্ছে আর কাটা হচ্ছে পাহাড়। তিনি এ জন্য জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগকে দায়ি করে বলেন, যখন তাদের (জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের) পাহাড়ি জমি দখল করে বসত নির্মান করা হয় তখন তারা বাধা দেননা।
এভাবে অবাধে সারা বছর পাহাড় দখল হতে থাকে। আর বর্ষা মৌসুম আসলেই শুরু হয় তাদের তৎপরতা। তাও আবার অনেকটা মিডিয়া ফটোসেশনের মতো। প্রতিবছর পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপর্ণ বসতি উচ্ছেদ করার ঘোষনা দিলেও মুলত তা বাস্তবায়ন করা হয়না। বর্ষায় একটু নড়া চড়া দেখা গেলেও বর্ষার পরে আর কোন কার্যক্রম থাকেনা। এমন সুযোগ বুঝে ভূমিদস্যুরা সারা বছর পাহাড় দখলে মেতে থাকে। কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি এডভোকেট আয়াছুর রহমান জানান, বর্ষা মৌসুমের আগে পাহাড়ে অবৈধভাবে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি উচ্ছেদ করা প্রয়োজন ছিল। পাহাড়ে দিন দিন অবৈধ বসতি বেড়ে যাচেছ। এখন পাহাড় ধস হলেই মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হবে। আর এই মৃত্যুর দায়ভার বর্তাবে দায়িত্বশীলদের উপর।’ কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন-‘ জেলা প্রশাসন, উন্নয়ন কতৃপক্ষ, পুলিশ বিভাগ, পৌরসভা, পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধি নিয়ে কমিটি গঠন হয়েছে। গঠিত কমিটি যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। শুধু কমিটি কাজ করলে হবেনা এ জন্য নাগরিকদের সচেতন হতে হবে।
Posted ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh