লিটন কুতুবী, কুতুবদিয়া | বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
পানি শক্তির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারছে না দুই লক্ষাধিক মানুষ। হারাচ্ছে পূর্ব পুরুষের ঠিকানা। যথই সরে দাড়ায় তথই দৌড়ায়। নিয়তি তাদের ভাগ্যে কি লিখেছেন তা বুঝতে পারছে না। বিগত ৩০ বছরে পানির শক্তিতে হেরে গিয়ে বাস্তহারা হয়েছে লক্ষাধিক মানুষ। এ সব মানুষের ঠাই হয়েছে পাহাড়ে আর চরাঞ্চলে। জীবন সংগ্রামে হারলেও মানব গড়ার হাল ছাড়েনি বাস্তহারা পরিবারের লোকজন। সংসারে উপার্জনের কেহ নেই তারপরও জ্ঞান অর্জন ছাড়েনি। এদের পিছনে সহায়তা দিচ্ছে সরকার,এনজিও এবং দাতা সংস্থা। সকালে দেখা যায় বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়া শিশুদের মিছিল। তেমনি গভীর রাত পর্যন্তও চোখে পড়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য দৌড়ে বেড়াচ্ছে কোমলমতি শিশুরা। এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে কক্সবাজার জেলার উপকূলীয় এলাকা কুতুবদিয়া দ্বীপে। বিগত ১৯৯১ সনের প্রলংকরী ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে চলমান দৃশ্যগুলো জাতিকে ভাবিয়ে তুলেছে। কুতুবদিয়া দ্বীপ রক্ষা বাঁধ চলমান ভাঙনে প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় যে হারে লোকালয়ে জোয়ার ভাটা বসছে তাতে বেশী দিন লাগবে না দ্বীপটির অস্তিত্ব ধরে রাখতে। ৪০ কিলোমিটার দ্বীপ রক্ষা বাঁধ মেরামতের জন্য বাংলাদেশ সরকার ও অনুদান স্বরুপ দাতা সংস্থার ১৯৯১ সনের পর থেকে এ পর্যন্ত ৩০ বছরে আড়াই’শ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ দিলেও অদৃশ্যের কারণে যথার্থ ব্যবহার হয়নি।
এ দ্বীপের বাসিন্দারা শুস্ক মৌসুমে লবণ চাষ ও শুটঁকি প্রক্রিয়া জাতকরণ করার জন্য স্বতর্স্পূতভাবে হাজার হাজার শ্রমিক দিয়ে কাজ করলেও বর্ষা মৌসুমে এ প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা যায় না। বর্ষা মৌসুমে জোয়ার ভাটার কারণে চাষাবাদ না হওয়ায় এলাকার লোকজন বেকার হয়ে পড়েছে বলে কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধূরী জানান। দ্বীপটির সদর ইউনিয়ন বড়ঘোপের মুরালিয়া,অমজাখালী, আজমকলোনী, রোমাইপাড়া, সাইটপাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় গেল অমাবস্যার জোয়ারে বীজতলা তলিয়ে যাওয়ার কারণে চাষাবাদ উপযোগী ফসলি জমি অনাবাদি হয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় ইউপির চেয়ারম্যান (জেলা আ’লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি) এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধূরী এ প্রতিনিধিকে জানান। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ৭১ পোল্ডারের বান্দরবান জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী রকিবুল হাছান বলেন, পাউবোর ৭১ পোল্ডারের ৪০ কিলোমিটার বাঁধের মধ্যে প্রায় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ মারাতœক ঝুকিঁপূর্ণ। এ বাঁধ মেরামতের জন্য গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছর পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ১৪ কিলোমিটার বাঁধ সিসি ব্লক দ্বারা মেরামত করার জন্য ৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত কাজ করছে এবং চলমান। কুতুবদিয়া উপজেলা আ’লীগের সভাপতি আওরঙ্গজেব মাতবর জানান, দ্বীপ রক্ষা বাঁধ স্থায়ীভাবে মেরামত করার জন্য সরকার অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে। বিগত এক বছরে পাউবোর নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ১০ভাগ মেরামত কাজ শেষ করতে পারেনি। আগামী ১০ মাসে কোনক্রমেই শতভাগ মেরামত কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে আজ কুতুবদিয়া দ্বীপের দুই লক্ষ মানুষের বসতির অস্তিত্ব রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ঠিকাদারের অবহেলার দায়ভার সরকার নেবে কেন ?
এ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানান। কুতুবদিয়া বাচাঁও আন্দোলনের সদস্য এডভোকেট আইয়ুব হোছাইন জানান,পাউবোর নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কাজের অগ্রগতি নিয়ে এলাকাবাসীর মনে প্রশ্নবিদ্ধ ! দুই বছরের চুক্তির মধ্যে ১৪ মাস অতিবাহিত হয়ে গেলেও লোক দেখানো মাত্র ১০ভাগ কাজ শেষ করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। কথা ছিল ভাঙন বাঁধ এলাকা দিয়ে জোয়ার ঠেকাতে হবে। তাও পারেনি। উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের কাইছার পাড়ার বাসিন্দা জোৎসা বেগম (৪০) জানান, বিগত তিন বছর পূর্বে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানো’র আঘাতে তার বসতঘর ভেঙে যায়। এ এলাকায় বেড়িবাঁধ না থাকায় এখনো নতুনভারে ঘর তৈরী করতে পারেনি। বর্তমানে বর্ষা মৌসুমে চকরিয়া হারবাং এলাকায় এক আতœীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। শুস্ক মৌসুমে কুতুবদিয়ার স্বামীর বসতভিটিতে পলিথিনের চাউনি দিয়ে থাকেন, বর্ষা এলেই চলে যায় হারবাং এলাকায়। এক সময়ে তার গোয়াল ভরা গরু,ছাগল,হাস,মুরগি, পুকুরে মাছ চাষ, গোলা ভরা ধান এমনি পরিপূর্ণতা ছিল তার পরিবারে। সাগরের জোয়ারে ভেসে নিয়ে গেছে তার পরিবারের সহায় সম্ভল, বলতে এখন কিছু নেই। জোৎনা বেগম আরো জানান, তার চোখে দেখা,বাঁধ ভাঙা জোয়ারে হাজার হাজার পরিবার তার মতো পথে পথে হয়ে গেছে। শুনেছেন, উপকূলীয় এলাকার গৃহহারা মানুষের জন্য সরকার গৃহ নিমার্ণ করে দিচ্ছে, সেখানেরও দূর্ভাগ্য বসত তার নামটি তালিকাভূক্ত হয়নি। “অভাগা যে দিকে থাকায় সাগর শুকিয়ে যায়” তার কপালটা তাই হয়েছে।
উত্তর ধুরং ইউপির চেয়ারম্যান আ,স,ম শাহরিয়ার চৌধূরী জানান, কায়ছারপাড়া, পশ্চিম চর ধুরুং,পূর্ব চর ধুরুং,ফয়জানির পাড়া, মিয়াজির পাড়া,সতরউদ্দিন,আকবরবলী ঘাট এলাকাসহ প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙা থাকায় প্রতিনিয়তই এসব এলাকায় জোয়ার ভাটা বসেছে। বিগত তিন বছরে প্রাকৃতিক দূর্যোগ,ঘূর্ণিঝড় আর জোয়ারের তান্ডবে উত্তর ধুরুং এলাকা থেকে প্রায় পাঁচ’শ পরিবার গৃহহারা হয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলাগুলোর সমতল ও পাহাড়ি এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে শতশত একর ফসলি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না। যার ফলে এ এলাকায় বসবাসরত মানুষ জীবন জীবিকা নিয়ে উৎকন্ঠায় রয়েছে। সুষ্টুভাবে থাকতে পারছে না ঘরে,শ্রম বাজারে চলছে মঙ্গা,দূর্বিসহ জীবন দেখার কেউ নেই। আলী আকবর ডেইল ইউপির চেয়ারম্যান (উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক) বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছাফা বিকম জানান, তার ইউনিয়নের আনিচের ডেইল,কুমিরারছড়া জেলেপাড়া,পশ্চিম তাবলরচর,বায়ুবিদ্যুৎ এলাকা,কাহারপাড়া এলাকায় ৫ কিলোমিটারর্ বেড়িবাঁধ সম্পূণ বিলীন। এসব এলাকায় বর্তমানে জোয়ার-ভাটা বসেছে। জরুরী ভিত্তিতে কাহারপাড়া,তেলিপাড়া,কাজিরপাড়াস্থ সিসি ব্লক এলাকায় জিও ব্যাগে বালি ভর্তি করে বাঁধ রক্ষার জন্য দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ দেন পাউবো কর্তৃপক্ষ। তাও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বাঁধ কেঁেট বাঁধ মেরামত করছে। দেখার কেউ নেই। প্রতিবাদ করলে চাঁদাদাবীর মামলার হুমকি দেয় ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ।
দেশবিদেশ /২৫ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১২:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২৫ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh