দেশবিদেশ রিপোর্ট | সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
আবারো শুরু হয়েছে উদ্বেগজনক ভাবে মানব পাচার। গত নভেম্বর থেকে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থার হাতে চার দফায় পাচারকালে উদ্ধার হয়েছে অর্ধ শতাধিক মালয়েশিয়াগামী নারী, পুরুষ ও শিশু। এরই ধারাবাহিকতায় গভীর সাগরে মালয়েশিয়াগামী বড় জাহাজের (মাদার ভেসেল) নাগাল না পাওয়ায় দুই কিশোর স্কুল ছাত্র সহ তিন কিশোর সংঘবদ্ধ মানব পাচারকারীদের কবল থেকে রক্ষা পেয়েছে। গত কিছুদিন ধরে নতুন করে শুরু হওয়া মানব পাচারের ধারবাহিকতায় এই কিশোরদ্বয় পাচারকারীদের শিকার হয়েছিল। পাচারের এই ঘটনাটি নিয়ে থানায় লিখিত ভাবে মানব পাচারের অভিযোগনামা দিলেও রামু থানা পুলিশ গত এক সপ্তাহ ধরে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। অথচ উখিয়া থানা পুলিশ চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার সাথে জড়িত একজন মানব পাচারকারীকে গ্রেফতারও করেছে।
মালয়েশিয়াগামী পাচারকারিদের নৌকায় সাগরে একটানা ৫ দিন ভাসার পর প্রাণে ফিরে আসা কিশোর ছাত্রদ্বয় হচ্ছে যথাক্রমে মোহাম্মদ হানিফ (১৭) ও মোহাম্মদ রাসেল (১৫)। দুইজনই কক্সবাজারের রামু উপজেলার খুনিয়া পালং ইউনিয়নের গোয়ালিয়া পালং এসইএসডিপি মডেল হাই স্কুলের ছাত্র। হানিফ অষ্টম শ্রেণী এবং রাসেল নবম শ্রেণীর ছাত্র। খুনিয়া পালং ইউনিয়নের ধোয়া পালং নয়াপাড়া গ্রামের আবদুর রকিম বৈদ্যের পুত্র হচ্ছে হানিফ এবং মোহাম্মদ শফির পুত্র হচ্ছে মোহাম্মদ রাসেল।
গতকাল রবিবার বিদ্যালয়টিতে ছাত্রদ্বয় জানান, গত ৭ জানুয়ারি এই দুই কিশোর ছাত্রদ্বয়ের সাথে একই গ্রামের আবদুল আজিজ (১৬) সহ তিন কিশোর পাচারকরীদের কবলে পড়ে। পাচারকারি উখিয়ার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের মরিচ্যা পালং মধুঘোনা গ্রামের ফরিদুল আলম প্রকাশ গুরা মনু ডাকাত ও তার পুত্র ছৈয়দুল্লাহ প্রলুব্ধ করে কিশোরদের মালয়েশিয়ায় পাচারের জালে আটকিয়ে ফেলে। ৭ জানুয়ারি কিশোরদের মরিচ্যা মধু ঘোনা গ্রামের বাড়িতে পাচারকরীর ঘরে রেখে দিয়ে পরের দিন রাতে তাদের মালয়েশিয়ায় পাচারে রওয়ানা দেয়।
৮ জানুয়ারি রাতে কিশোরদের অন্যান্য মানবের সাথে রেজুখালের পেঁচারদ্বীপ করাচি পাড়া এলাকা দিয়ে নৌকায় তুলে। সেই নৌকায় তারা ২৪ জন ছিল। নৌকাটির পেছনে সম সংখ্যক যাত্রী নিয়ে আরো একটি নৌকা ছিল। রেজু খাল দিয়ে দুই নৌকাই প্রায় অর্ধশত যাত্রী নিয়ে যাচ্ছিল গভীর সাগরে মালয়েশিয়াগামী বড় জাহাজের উদ্দেশ্যে। রেজু খাল থেকে নৌকা দুইটি গভীর সাগরে পৌঁছার আগেই মালয়েশিয়াগামী বড় জাহাজ ছেড়ে দেওয়ায় এবং এ সময় নৌ বাহিনীর টহল যানের ধাওয়ার মুখে তারা পূণরায় তীরের দিকে রওয়ানা হতে বাধ্য হয়।
এভাবে একটানা ৫ দিনের মাথায় ইনানীর তীরে এনে নৌকা থেকে এসব কিশোরত্রয় সহ অন্যান্য যাত্রীদের ফেলে দেওয়া হয়। এসময় পরিবারের লোকজন হন্য হয়ে কিশোরদের খুঁজতে থাকা স্বজনরা তাদের মেরিন ড্রাইভ সড়কে পেয়ে ঘরে নিয়ে আসে।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়টির ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জয়নাল আবেদীন বলেন- গত দুই বছর আগেও একই বিদ্যালয়ের আরেকজন ছাত্র পাচারকারীদের কবলে পড়েছিল। গত ৭ জানুয়ারি পাচারকারিদেও কবলে পড়ে আমার বিদ্যালয়ের আরো দুই ছাত্র হানিফ ও রাসেল। আমি পাচারকারীদের শাস্তি দাবি করছি।
পরে গত ১৩ জানুয়ারি স্কুল ছাত্র হানিফের চাচা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে যাবতীয় বিবরণ উল্লেখ করে রামু থানায় একটি লিখিত অভিযোগনামা নিয়ে যান মামলা দায়েরের জন্য। কিন্তু রামু থানা পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তেমন গুরুত্ব না দেয়ার কারনে গতকাল রবিবার বিকাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন মামলাই নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগনামাটি হিমছড়ি তদন্ত কেন্দ্রের আইসিকে তদন্তের জন্য দেয়া হয়।
গতকাল রবিবার বিকালে বিষয়টি জানার জন্য হিমছড়ি তদন্ত কেন্দ্রে গেলে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম জানান, তিনি এ বিষয়ে তদন্ত করছেন। প্রাথমিক তদন্তে কিশোরদের পাচার করার জন্য নৌকায় তুলে সাগরে নেয়া সহ অন্যান্য তথ্যেও সত্যতা পাবার কথা তিনি স্বীকার করেন। তবে এক সপ্তাহেও এ বিষয়ে মামলা না নেওয়ার বিষয়ে তিনি জানান, মামলার বাদী ও ভিকটিম রামু থানার বাসিন্দা হলেও ঘটনাস্থল উখিয়া থানার আওতায় হওয়ায় মামলাটি নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের বিষয়ে আমি জোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। ইতিমধ্যে গেল সপ্তাহেও পুলিশের বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে দুইজন মানবপাচারকারী নিহত হয়েছে। মানব পাচারকরীদের কোন ভাবেই ছাড় দেয়া হবে না বলেও তিনি জানান। ####
Posted ২:৩০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh