রফিক উদ্দিন বাবুল ও শফিক আজাদ, উখিয়া | মঙ্গলবার, ০৫ মার্চ ২০১৯
মাত্র এক সপ্তাহ আগে অনুষ্টিত উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় নেমে এসেছিল হতাশা। আর এক সপ্তাহ পর গতকাল মঙ্গলবার অনুষ্টিত আরেকটি বর্ধিত সভায় দেখা দেয় দারুন উৎসাহ-উদ্দীপনা। আসন্ন উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় গতকাল। উখিয়ার পর্যটন স্পট সোনার পাড়া রির্সোস সেন্টারে অনুষ্টিত উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আকস্মিক পাল্টে যায় নির্বাচনী চিত্র। এই বর্ধিত সভায়ই ঘোষণা আসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের অন্যতম বিদ্রোহী প্রার্থী মাহমুদুল হক চৌধুরীর পদত্যাগের কথা।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের এ বিশেষ বর্ধিত সভায় দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরীর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পাশাপাশি মনোনয়ন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত দেন প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরীও। আগামীকাল ৭ মার্চ তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করবেন বলে বর্ধিত সভায় জানিয়েছেন। যার ফলে বিজয়ের আরেক ধাপ এগিয়ে গেছে নৌকা মনোনীত প্রার্থী গণমানুষের প্রিয় নেতা অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী। তাদের (পিতা-পুত্রের) এই আত্মত্যাগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সহ সর্বস্তরের জনসাধারণ।
উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভার আরো উল্লেখযোগ্য খবরটি হচ্ছে যথারীতি গতকালের সভায়ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বরাবরই অনুপস্থিত ছিলেন। এর আগের সপ্তাহে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মহিলা কলেজে অনুষ্টিত বর্ধিত সভায়ও উপজেলা সাধারণ সম্পাদক যোগদান করেননি। এমনকি দলীয় সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর কর্তৃক উখিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিশিস্ট শিক্ষাবিদ এবং উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীকে চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকেই দলের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রয়েছেন।
এদিকে গতকাল অনুষ্টিত বর্ধিত সভায় সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ আব্দুর রহমান বদি বলেছেন-‘ তার রাজনৈতিক জীবনে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজ এতদুর এসেছেন। নির্বাচন থেকে হেলে পড়লে আর উঠার সম্ভব হয়না।’ তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী ও জননেত্রী শেখ হাসিনার নৌকা মার্কার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। যদি সে প্রকৃত পক্ষে আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত থাকে। দলের সুবিধা ভোগ করে কেউ যদি মুনাফেকি করে তার রাজনীতির কোন দিন উত্তান হবে না। বরং দিন দিন অবনতি হবে।
উখিয়ার পর্যটন স্পট সোনার পাড়া রির্সোস সেন্টারে অনুষ্টিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্টিত বর্ধিত সভায় তিনি বলেন, অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী অনেক ত্যাগ, তিতিক্ষার মাধ্যমে উখিয়া মহিলা কলেজ গড়ে তুলেছেন। দীর্ঘ দিন অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে এলাকার হতদরিদ্র ছাত্রীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করে দেওয়ায় আজ ঘরে ঘরে উচ্চ ডিগ্রিধারী মেয়েরা উপার্জন করে বাবা মাকে পারিবারিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন। এমন একটি অধ্যক্ষের পদ থেকে তিনি পদত্যাগ করে জীবনের শেষ মুহুর্তে এসে জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগনের সেবা করার জন্য উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে আন্তরিক ভাবে মনোনয়ন দিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের উচিত অসুস্থ এই বয়োবৃদ্ধ নেতাকে সম্মান দেওয়া। অথচ এলাকার কিছু কিছু নেতাকর্মী তা কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছেননা। এটা উখিয়া আওয়ামী লীগের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক অধ্যায় বলে তিনি মনে করেন। উপস্থিত ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি উদাত্ত আহবান জানিয়ে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগকে একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে দাঁড় করাতে হলে আমি যা বলি তা মানতে হবে। এসময় উপস্থিত কাউন্সিলাররা সম্মতি প্রকাশ করেন।
সাবেক এমপি বদি বলেন, বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের ১ নাম্বার সিনিয়র সহ সভাপতি আলাউদ্দিনকে তার পদ থেকে পদত্যাগ করার কথা বলেল আলা উদ্দিন তাৎক্ষনিক ভাবে সভামঞ্চে উঠে পদ ত্যাগ করার ঘোষনা দেন। পরে প্রধান অতিথি আব্দুর রহমান বদি বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হক চৌধুরীকে সিনিয়র সহসভাপতি পদায়নে ঘোষনা দিলে করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে সভা প্রাঙ্গন।
এসময় তিনি অনরোধ জানান, মঞ্চে উঠে মাহমুদুল হক চৌধুরীকে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। পাশাপাশি আরেক উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরীকে আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়ে তাকেও তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করার অনুরুধ জানান। এবং উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল মনসুর চৌধুরীকেও তার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তার দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক জীবনের একটি কাংখিত দল আওয়ামী লীগের প্রতি অনুপ্রানিত হয়ে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।
এসময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হক চৌধুরী তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বলেন, তিনি আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত রয়েছেন। তাই প্রধানমন্ত্রী যাকে নৌকা প্রতীক দিয়ে সম্মানিত করেছেন আমিও আমার মনোনয়ন প্রত্যাহার করে তাকে সম্মান জানাচ্ছি। মাহমুদুল হক চৌধুরীর অবিশ^াস্য এমন বক্তব্যের পরপরই উভয়ের মধ্যে পারস্পরিক কুলাকুলি করে একে অপরকে আপন করে নেওয়ার ঘটনায় সমস্ত নেতাকর্মীরা আনন্দে আতœহারা হয়ে উঠে।
Posted ১১:৫১ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ মার্চ ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh