| সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পর্যটন স্পর্টের নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে।
দীপক শর্মা দীপু:
দেশে নতুন একটি পর্যটন জোন আবিস্কার হয়েছে। নাম দেয়া হয়েছে ‘নিভৃতে নিসর্গ’ ও ‘শে^তপাহাড়’। কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে পর্যটন স্পর্টের নতুন দিগন্ত সূচনা হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য একটি বিস্ময়কর সৌন্দর্য্যরে প্রাকৃতিক লীলা ভূমি। এখানে পাহাড়, পাথর, নদী, ঝরণা, মেঘ, কুয়াশা, বন্যপ্রাণী, স্বচ্ছ নীল জলরাশি, রোমাঞ্চকর এ্যাডভেঞ্চার, নৌকা ভ্রমণ, নানা প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপূর।
কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প বিকাশে সম্ভাবনাময় আরও একটি নতুন দর্শনীয় স্থান ‘শ্বেত পাহাড়’। চকরিয়া উপজেলার সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নে মাতামুহুরী নদীর তীরঘেঁষে অবস্থিত এ পর্যটন স্পটের নাম ‘নিভৃত নিসর্গ পার্ক’ নামে উদ্বোধন করা হয়েছে।
একইভাবে উক্ত পর্যটন স্পটের আকর্ষনীয় একটি পাহাড়ের নামকরণ করা হয়েছে ‘শ্বেত পাহাড়’। নদীর পাশে সাদা মাটির সু-উচ্চ এ বিশাল পাহাড়টি ‘শ্বেত পাহাড়’ নামে পর্যটকদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠছে। ‘শে^ত পাহাড়’ ও ‘নিভৃতে নিসর্গ’ এই দুইটি নামকরণ করেন জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন। জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে প্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা উক্ত পর্যটন স্পটের নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এসময় উক্ত দর্শনীয় স্থানে পর্যটন বিকাশের অপূর্ব সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন- পাহাড়, নদী ও শ্বেতপাহাড় বেষ্টিত এই পর্যটন স্পটকে ভ্রমনের নিরাপদ ও আকর্ষনীয় হিসাবে গড়ে তোলা হবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব, ঢাকা সেনা নিবাসের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শাজাহান আলি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ মাসুদুর রহমান মোল্লা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোঃ আমিন আল পারভেজ, চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সামশুল তাবরিজ, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ তানভীর হোসেন ও সুরাজপুর মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজিম।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে রয়েছে নানা পর্যটন স্পট। এসব পর্যটন স্পট গুলো দিন দিন ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে অনেকটা পুরনো হয়ে উঠলেও নতুন আরও একটি পর্যটন স্পটের সন্ধান পেয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। যা পর্যটকদের প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকবে। তাই, পর্যটকদের কথা বিবেচনা করে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উক্ত স্থানে ‘নিভৃত নিসর্গ পার্ক’ নামে নতুন একটি পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসন উক্ত পর্যটনকেন্দ্র উদ্বোধনের পাশাপাশি আকর্ষনীয় একটি বিশাল পাহাড়ের নামকরণও করেছে ‘শ্বেত পাহাড়’ নামে। ইতিমধ্যে যাতায়াতের সুবিধা ও নানা অবকাঠামো গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, সুরাজপুর-মানিকপুরের এই সবুজে ঘেরা পাহাড় বেষ্টিত আকর্ষনীয় পর্যটন স্পটটিতে পর্যটনকেন্দ্র হিসাবে পুর্নাঙ্গ রূপ পেলে দেশের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। “সুরাজপুর-মানিকপুরকে দেখবে বাংলাদেশ” এই শ্লোগানে উচ্চসিত সকলে।
এই পর্যটন এলাকা বিশে^র পর্যটন খ্যাত দেশগুলোর সাথে তুলনা করা যায়। এখানে আসলে বিশে^র বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের আর প্রয়োজন হবেনা। এখানেই পাওয়া যাবে বিভিন্ন দেশের পর্যটন ভ্রমনের স্বাদ।
দার্জিলিং, মেঘালয়ের পাহাড় পর্বত, সবুজ ঘেরা নানা পাহাড়ি ঝরণা,হিমাচলের শুভ্রসাদা মেঘের যে গালিচা সেটি পাওয়া যাবে দুই পাশে পাহাড়ের মাঝে বয়ে চলা মাতামূহরী নদী ঘিরে গড়ে উঠা ‘নিভৃতে নিসর্গ’ পার্কে। এখানে সবুজ পাহাড়ের সাথে সাদা মেঘের পরশ লেগে থাকে। পর্যটকদের গায়েও লেগে থাকে সাদা মেঘের পরশ। নীল জলরাশি, সবুজ পাহাড় আর সাদা মেঘ এই তিন রঙে একাকার হয়ে পর্যটকদের মন রাঙিয়ে দেয়। এমন দৃশ্য বিশে^র অনেক পর্যটন স্পর্টে দেখা মেলবেনা।
কলম্বিয়ার নয়নাভিরাম প্রকৃতি নিবিড় সবুজ অরণ্য বা দক্ষিণ আমেরিকার বিস্ময় চিলির ইষ্টার আইল্যান্ডের প্রাকৃতিক অপরুপা রুপবৈচিত্র্য আর জীব বৈচিত্র্যের ভরপূর সৌন্দর্য্য দেখা মেলবে সুরাজপুর-মানিকপুরের এই নতুন পর্যটন জোনে।
কানাডার আকাঁ-বাঁকা হৃদের জলরাশিতে নৌকায় ছুটে চলা, পেরুর রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা, ভোজন বিলাস সব আনন্দ ‘নিভৃতে নিসর্গ’ পার্কে পাবে পর্যটকরা। এখানে পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিভিন্ন আকারের নৌকা। এই নৌকা দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ দিয়ে দীর্ঘ নদী ভ্রমণ। পাহাড়ের সাথে নদীর মিতালী দেখতে গিয়ে দেখা মিলবে বিভিন্ন বন্যপ্রাণীর। জলজ প্রাণী আর বন্য প্রাণী একসাথে দেখা যাবে। এর মাঝে পাহাড় বেয়ে পড়া অসংখ্য ঝর্নার ধারার কলকাকলি , পাখির কলরব অন্যরকম আনন্দ দেবে। নদী হয়ে যেতে যেতে দেখা মিলবে একাধিক সাদা পাথরের পাহাড়। এর মধ্যে সুউচ্চ সাদা পাহাড় মন টানবে তার সাথে ছবি তুলতে। সাদা পাহাড়ের নাম দেয়া হয়েছে শে^ত পাহাড়। মন জুড়িয়ে যাবে এই পাহাড় দেখে। এমনটি মনোরম দৃশ্য বাংলাদেশের আর কোন পর্যটন স্পর্টে দেখা যাবেনা। পাহাড় ও নদীর অপরুপ সানিধ্য পেতে পর্যটকরা ছুটে যাচ্ছেন মানিকপুর- সুরাজপুরে।
যেভাবে যাবেন: চট্রগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের চকরিয়া স্টেশনে নেমে সেখান থেকে জিপ বা ছোট বাসে উঠতে হবে। সেখান থেকে বান্দরবানের লামা রোড হয়ে লামা ফাঁসিয়াখালীর ইয়াংছা বাজারে যেতে হবে। প্রায় ১০ কিলোমিটারের এখানে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা। ইয়াংছা বাজার থেকে অটো রিক্সা বা টমটম করে আড়াই কিলোমিটার গেলেই সেই কাঙ্খিত পর্যটন স্পর্ট ‘নিভৃতে নিসর্গ’ পার্কের দেখা মেলবে।
সেবা সমূহ: টুরিষ্ট গাইড, নৌভ্রমণ, ক্যাম্প ফায়ার, বারভিকিউ, রেস্তুরেন্ট, সার্বক্ষনিক নিরাপত্তা, বৃক্ষরাজি মেলা, স্থানীয় ও দেশীয় খাবার। পিকনিকের আয়োজনের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা।
এখানে ভ্রমনের প্রয়োজনীয় তথ্য ও সেবার জন্য যোগাযোগ নাম্বার- ০১৮৩৩৫৭৩০৯০। বিশেষ প্রয়োজনের চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা যাবে।
এডিবি/জেইউ।
Posted ২:০১ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২০
dbncox.com | ajker deshbidesh