যুগ যুগ ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বসবাস করেছি। কিন্তু ঈদুল আযহা ও ঈদুল ফিতরের খুশি অনুভব করতে পারিনি। ঈদুল আযহার দিনে সেনা, পুলিশ ও উগ্রবাদী রাখাইন জনগোষ্ঠীর চোখ ফাঁকি দিয়ে পশু কোরবানি দিতে হয়েছে। এদেশে আশ্রয় নেওয়ার পর রোহিঙ্গারা এই প্রথম ঈদুল আযহা পালন করেছে। রোহিঙ্গাদের পরিবার পিছু ৫ কেজি করে কোরবানির মাংস বিতরণের কথা থাকলেও দুই-তৃতীয়াংশ পরিবার মাংস পায়নি। যারা পেয়েছে তাও চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। যে কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঈদের আমেজ দেখা যায়নি। কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা মাঝির সাথে আলাপ করা হলে তারা এসব কথা বলেন। প্রশাসন বলছে ক্যাম্পে কর্মরত এনজিওরা ১২ হাজার পশু সরবরাহ দেওয়ার কথা থাকলেও তারা কথা রাখেনি। যে কারণে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা কোরবানির মাংস থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের মাঝি মোহাম্মদ আলী জানান, তার ক্যাম্পে বসবাসরত প্রায় ১০ হাজার পরিবার রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ হতদরিদ্র। যাদের কোরবানি করার কোন সামর্থ্য নেই বললেই চলে। যে কারণে ক্যাম্পে কোন পশু কোরবানি হয়নি। তাছাড়া এনজিওরা কোরবানির মাংস সরবরাহ না করায় ঈদুল আযহার দিনে কোন রোহিঙ্গার ঘরে মাংস রান্না করা হয়নি। একই কথা বললেন, কুতুপালং রেজিষ্টার্ড ক্যাম্পের মাঝি রশিদ আহমদ। সে জানায়, তারা ক্যাম্পে ২৭ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে শতাধিক পরিবার মাংস পেয়েছে আধা কেজি করে, বাকিরা মাংস পায়নি। তুমব্রু কোনারপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি দিল মোহাম্মদ জানান, তার ক্যাম্পে ১ হাজার ৬ পরিবার রোহিঙ্গা আছে।
কোন এনজিও সংস্থা এসব রোহিঙ্গাদের মাংস দেয়নি। তবে পাড়া প্রতিবেশি মানবিক কারণে কিছু কিছু মাংস সরবরাহ করলেও তা চাহিদা মিটেনি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে যেসব পশু সরবরাহ দেওয়া হবে ওই সমস্ত পশু কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মাধ্যমে বিতরণ করা হবে। আর রোহিঙ্গার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ স্থানীয়দের মাঝে যেসব পশু বিতরণ করা হবে ওই সব পশু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে বিতরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও কিছু কিছু অনুমোদনহীন এনজিও সংস্থা ও দাতা সংস্থা প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গাদের গরু বিতরণের নামে ব্যাপক লুটপাট করেছে। বুধবার রাত ৮ টার দিকে উখিয়া থানা পুলিশ জালিয়াপালং ইউনিয়নের গভীর অরণ্য জুম্মাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৫টি গরু ও ৪৫টি ছাগল উদ্ধার করেছে। উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ ওসি (তদন্ত) খাইরুজ্জামান এঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মালেশিয়া ভিত্তিক ইহছান ইকলাস নামের একটি দাতা সংস্থা কক্সবাজারস্থ তাদের প্রতিনিধি ইদ্রিস মিয়ার মাধ্যমে গরু গুলো জুম্মাপাড়া জঙ্গলে মজুদ করে।
স্থানীয় গ্রামবাসী এসব গরু গুলো তাদের জন্য দেওয়া হয়েছে মর্মে মনে করে গরু ছাগল গুলো ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গরু গুলো উদ্ধার করলেও ৪টি ছাগল ও ২টি গরু পাওয়া যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার টিএন্ডটি এলাকায় একই ভাবে একটি সংস্থা দুই দিনে ১১টি গরু জবাই করেছে। এভাবে গরু বিতরণের নামে লুটপাটের কারণে রোহিঙ্গারা ঈদুল আযহার আমেজ থেকে বঞ্চিত হয়েছে বলে রোহিঙ্গা নেতারা দাবী করছেন। এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নিকারুজ্জামান জানান, এনজিওরা রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের জন্য ১২ হাজার গরু সরবরাহ দেওয়া কথা ছিল। কিন্তু ঈদের আগে দিন পর্যন্ত তারা গরু সরবরাহ দিয়েছে ৩ হাজার ৮শতটি।
মাঝারি সাইজের গরু দেওয়ার কথা থাকলেও তারা গরু দিয়েছে ছোট সাইজের। যা দিয়ে যৎসামন্য স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের মাঝে মাংস সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, আজ শনিবার পালংখালী ইউনিয়নে যেসব ক্যাম্প রয়েছে ওই সব ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ১০ হাজার ৭শত প্যাকেট সরবরাহ দেওয়া হবে। প্যাকেটে থাকবে ২ কেজি মাংস, তেল, আদা, রসুন, পেয়াঁজ সহ বিভিন্ন সামগ্রী। এসময় রোহিঙ্গাদের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্থ ২ হাজার ৩শত জন স্থানীয়দের মাঝে অনুরূপ প্যাকেট সরবরাহ দেওয়া হবে।
দেশবিদেশ /২৬ আগস্ট ২০১৮/নেছার
Comments
comments