শফিক আজাদ, ক্যাম্প থেকে ফিরে | বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯
উখিয়ার থাইংখালী-তেলখোলা সড়কের তাজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প নং-১৩ সংলগ্ন এলাকায় খালে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালি উত্তোলনের কারনে খালের পারের বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন ধরেছে। খালে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় পানির গর্ত। এসব গর্তে বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সহোদরসহ ৩ রোহিঙ্গা শিশু গোসল করতে গেলে হঠাৎ পাশ^বর্তী পার ধ্বসে মাটি চাপা পড়ে এসব শিশুরা। রোহিঙ্গারা মুমুর্ষ অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে পার্শ^বর্তী এমএসএফ হাসাপাতালে নিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তার ৩ শিশুকে মৃত ঘোষণা করে। নিহতরা হচ্ছেন তাজিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বি-২ ব্লকের ইউনুছের শিশু কন্যা রুফিয়া (৬) শিশু পুত্র মোঃ রোহান (৪) ও পার্শ্ববর্তী সি-২ ব্লকের ওবাইদুল্লাহ’র শিশুকন্যা আসমা বেগম (৫)। সরজমিন ঘটনাস্থল ঘুরে বিভিন্ন স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, থাইংখালী স্টেশনের ব্রিজ থেকে হাছু মিয়ার বাড়ী পর্যন্ত সরকারি বালি ইজারা থাকলেও এক শ্রেণীর অবৈধ বালি উত্তোলনকারী সিন্ডিকেটের রাত-দিন উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ঠ বিট অফিসারকে মোটা অংকের টাকায় ম্যানেজ করে তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শুরু করে তেলখোলা চাকমাপাড়া পর্যন্ত অন্তত ১২টি পয়েন্টে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। যার ফলে খালের পারের বিভিন্ন স্থানে বড় আকারে ভাঙ্গন ধরেছে। খালের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল পানির গর্ত। এ নিয়ে সম্প্রতি জেলার বহুলপ্রচারিত দৈনিক পত্রিকা দেশবিদেশে ধারাবাহিক সংবাদ প্রকাশিত হলেও কর্ণপাত করেননি সংশ্লিষ্ঠ বনবিভাগ ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা। যার ফলে এ দুর্ঘটনা হয়েছে বলে তাদের অভিমত।
তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হেড মাঝি মোঃ আলী জানান, দুপুর ১টার দিকে ডাব্লিউ.এফ.ফির ত্রাণ নিতে স্বজনদের সাথে বের হয় এই ৩ শিশু। কিন্তু খেলার চলে গোসল করতে তারা ৩জনই নেমে পড়ে খালের পানির গর্তে। এতে বিশাল মাটির একটি অংশ ভেঙ্গে তাদের উপরে পড়লে চাপা পড়ে এসব শিশুরা। তখন পাশ^বর্তী রোহিঙ্গা তাদেরকে খেলতে পানিতে। কিন্তু ঘন্টাখানেক তাদেরকে পরিবারের লোকজন খোঁজাখুজি করেও না পাওয়ার পর উক্ত স্থানে মাটির একটি অংশ ধ্বসে পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে কুড়াকুড়ি করে তাদেরকে দুপুর ২টা ২০ মিনিটের দিকে সেখান থেকে প্রায় মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে তাজনিমারখোলা এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তৃব্যরত ডাক্তার মৃত ঘোষণা করে। তাজনিমারখোলা ক্যাম্পের সহকারি ক্যাম্প ইনচার্জ রবিউল ইসলাম এর সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মৃত দেহ গুলো উদ্ধার করে প্রথমে তাজনিমারখোলা এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সেখান থেকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ করার শর্তে স্থানীয় এক ব্যক্তি অভিযোগ করে জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড শুরু হওয়ায় সেখানকার চাহিদা পুরনের লক্ষ্যে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সরকারি বনবিভাগের জায়গা থেকে বালি উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে। উক্ত সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছে তাজনিমারখোলা গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে আব্দুর রশিদ একই গ্রামের মৃত উলা মিয়ার ছেলে শামসুল আলম, ছৈয়দ বলির ছেলে মমতাজ মিয়া এবং মৃত আব্দুল মতলবের ছেলে আকতার কামাল। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন রয়েছে এসব ব্যক্তিরা জানিয়েছেন।
এব্যাপারে উখিয়া বনরেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী তারিকুর রহমান বলেন খাল থেকে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে যদি অবৈধ বালি উত্তোলন করে থাকে তাহলে অবশ্যই সরজমিন পরিদর্শন করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Posted ১২:৩৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh