বৃহস্পতিবার ৩০শে নভেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
শিশু বিচ্ছিন্নকরণে ডেমোক্র্যাট শিবিরে ক্ষোভ

ট্রাম্পের সন্তান আছে কিনা, জানতে চাইলেন মার্কিন আইনপ্রণেতা

দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক   |   বুধবার, ২০ জুন ২০১৮

ট্রাম্পের সন্তান আছে কিনা, জানতে চাইলেন মার্কিন আইনপ্রণেতা

নিজ সন্তানদের প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্টের মমত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ডেমোক্র্যাট দলীয় এক কংগ্রেসম্যান। মেক্সিকো সীমান্তের পূর্ণ বয়স্ক অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের থেকে তাদের সন্তানদের বিচ্ছিন্ন করার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে তিনি ট্রাম্পের প্রতি প্রশ্ন রেখেছেন, তার নিজের সন্তান আছে কিনা। মঙ্গলবার (১৯ জুন) ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠক শেষে বের হওয়ার সময় ডেমোক্র্যাটদের তোপের মুখে পড়েন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। স্ত্রী মেলানিয়া, মেয়ে ইভানকাসহ নিজ দল রিপাবলিকান শিবিরও সরব হয়েছে তার প্রশাসনের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরুদ্ধে।

মার্কিন স্বরাষ্ট্র দফতর-হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, মেক্সিকোর অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীদের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের পরিচালিত কঠোর অভিযানে ১৯ এপ্রিল থেকে ৩১ মে সময়ের মধ্যে আটক হওয়া ১৯৪০ পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সঙ্গে থাকা ১৯৯৫ জন শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ওই শিশুরা হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিস বিভাগের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

মঙ্গলবার (১৯ জুন) অবৈধ অভিবাসীবিরোধী পদক্ষেপ নিয়ে ক্যাপিটল হিলে রিপাবলিকানদের সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রাম্প। বৈঠক শেষে বের হয়ে আসার সময় কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্যদের বিরল বিক্ষোভের মধ্যে পড়েন তিনি। বিতর্কিত অভিবাসন নীতি থেকে সরে আসার জন্য হাউস ডেমোক্র্যাটরা প্রেসিডেন্টের প্রতি আহ্বান জানান। তাদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল: ‘পরস্পরের একত্রিত বসবাসই পরিবার’ । ট্রাম্পের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে কংগ্রেসম্যান জুয়ান ভারগাস বলেন, ‘মাননীয় প্রেসিডেন্ট, আপনার কি বাচ্চা নেই? আপনার কি সন্তান নেই, মাননীয় প্রেসিডেন্ট? তারা যদি আপনার সন্তানদেরকে আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, তখন আপনার কেমন লাগবে?’

অবৈধ অভিবাসীদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নকরণের ঘটনা পূর্ববর্তী মার্কিন প্রশাসনগুলোতেও দেখা গেছে। সে সময় যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতো এবং অপরাধের কোনও রেকর্ড ছিল না তাদেরকে আইনের আওতায় অপরাধী সাব্যস্ত না করে শুধুই অস্থায়ীভাবে আটক করা হতো কিংবা বিতাড়িত করার সুপারিশ করা হতো। মা ও শিশুরা সাধারণত একসঙ্গেই থাকতো। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সব ধরনের অবৈধ অভিবাসন প্রত্যাশীর বিরুদ্ধে আইনগত ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করার প্রথম ৬ সপ্তাহেই প্রায় ২ হাজার শিশু পরিবার-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অতীতে এমন নজির দেখা যায়নি। মানবাধিকার কর্মীরাও বলছেন, অতীতে এমন ঘটনা ঘটলেও সংখ্যায় তা অনেক কম ছিল। ডেমোক্র্যাটরাও সেই ধারাবাহিকতায় দাবি করেছেন, ট্রাম্প একাই এ ধরনের কঠোর পদক্ষেপ বন্ধ করতে পারেন।

ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন পাসের কোনও প্রয়োজন নেই। অন্য কোনও কিছুরই প্রয়োজন নেই। আপনি এটা করতে পারেন মাননীয় প্রেসিডেন্ট। আপনি এটা শুরু করেছেন, আপনিই এটা শেষ করতে পারেন। সোজাসাপ্টা কথা।’ অভিবাসন নিয়ে কংগ্রেসের নিষ্ক্রিয়তার কথা মনে করিয়ে দেন শুমার। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসে কতবার অভিবাসন আইন পাস হয়েছে? শূন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনি (ট্রাম্প) একাই এর সমাধান করতে পারেন। আপনি কলম ধরলেই সব থেমে যাবে।’ অবৈধ অভিবাসী পরিবারগুলোর বিচ্ছিন্নকরণ ঠেকাতে রিপাবলিকানদের সঙ্গে ডেমোক্র্যাটরা একযোগে কাজ করবে বলেও জানিয়েছেন চাক শুমার।

দুই কক্ষবিশিষ্ট মার্কিন পার্লামেন্টে নতুন অভিবাসন আইন প্রণয়নের জন্য ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেও কিছুটা সমর্থন প্রয়োজন। অভিবাসনসংক্রান্ত পদক্ষেপ নিয়ে চলতি সপ্তাহে প্রতিনিধি পরিষদে ভোটাভুটি হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এর পরিণতি কী হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি এখনও। ভোটাভুটির জন্য এক জোড়া অভিবাসন বিল ‌উত্থাপন করতে যাচ্ছে হাউস রিপাবলিকানরা। প্রতিনিধি পরিষদে অভিবাসন সংক্রান্ত একটি বিলে রিপাবলিকানরা পরিবারগুলোর বিচ্ছিন্নকরণ বন্ধের জন্য একটি সুপারিশ যুক্ত করেছে। সেখানে ট্রাম্পের সীমান্ত দেয়াল নির্মাণ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কঠোর পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়নে ২৫ বিলিয়ন ডলার দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ওই বিলটিতে শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রে আসা অনথিভুক্ত অভিবাসী তথা ড্রিমার অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা বলা হয়েছে। বিপরীতে রক্ষণশীল রিপাবলিকানদের উত্থাপিত বিলে ড্রিমারদের নাগরিকত্ব প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি।

বৈঠকের পর কানসাসের রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান কেভিন ইয়োডার বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) বলেছেন দুইটি বিলের মধ্যে একটি বিল আমাদের পাস করানো প্রয়োজন।’ তবে দুইটি বিলের মধ্যে কোনটি পাস করানো জরুরি তা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ‘সংশয়ী’ বলে জানিয়েছেন কেভিন। ট্রাম্প বলেছেন, তার ডেস্ক পর্যন্ত যে বিলটি পৌঁছাবে সেটিতেই তিনি স্বাক্ষর করবেন।

মেক্সিকোর অভিবাসন প্রত্যাশীদের অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবস্থান নিয়েছেন মার্কিন ফার্স্ট লেডিরাও। ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান নির্বিশেষে ফার্স্ট লেডিদের মধ্যে ৫ জন এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এদের মধ্যে বর্তমান ফার্স্ট লেডি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পও রয়েছেন। এছাড়া সাবেক রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের স্ত্রী লরা বুশ,ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা,ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন,শান্তিতে নোবেলজয়ী সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের স্ত্রী রোজালিন কার্টার ট্রাম্পের নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন।

সোমবার (১৮ জুন) জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেইন অভিবাসন প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া এই ‘জিরো টলারেন্স নীতি’র তীব্র সমালোচনা করেন। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুরা এমন অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হতে পারে, যা তাদেরকে জীবনভর বয়ে বেড়াতে হবে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব পেডিয়াট্রিকস-এর প্রেসিডেন্টের একটি পর্যবেক্ষণকে উদ্ধৃত করে রাদ আল হুসেইন বলেন, “শিশুদেরকে তাদের মা-বাবা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আটকে রাখাটা ‘সরকার-অনুমোদিত শিশু নির্যাতন’। শিশুদের ওপর এ ধরনের নির্যাতন চালিয়ে মা-বাবাকে ভয় দেখানো ‘বিবেক বর্জিত’ পদক্ষেপ।”

Comments

comments

Posted ৪:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ২০ জুন ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com