নুরুল করিম রাসেল, টেকনাফ | শুক্রবার, ০৬ জুলাই ২০১৮
কক্সবাজারের টেকনাফে বিজিবি ও পুলিশ পৃথকভাবে ২৮৬ কোটি ৭৯ লাখ ৪ হাজার টাকার মাদক দ্রব্য ধ্বংস করেছে । ৬ জুলাই শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে ও বেলা সাড়ে ১২টার দিকে টেকনাফ থানায় এসব মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, গত ২৫ অক্টোবর ২০১৭সাল থেকে ২০ মার্চ ২০১৮সাল প্রায় ৫ মাসে টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্টে বিজিবি কর্তৃক মালিকবিহীন এইসব ইয়াবা, বিদেশী মদ, বিয়ার ফেন্সিডিল, গাজাঁ, চোলাই মদ, সিগারেট উদ্ধার করা হয়। এসব মাদকের বাজার মূল্য ১৫৯ কোটি ১৮ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ টাকা। এর মধ্যে ১৫৮ কোটি ৬৩ লাখ ৬০ হাজার ৬০০ টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল।
অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মধ্যে ছিল বিদেশী মদ, বিয়ার ও বিভিন্ন প্রকারের সিগারেট, ফেন্সিডিল, গাঁজা ও চোলাই মদ। এ সময় সদর দপ্তরের হলরুমে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সভায় মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানের আগে বিজিবি কক্সবাজারের আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম রকিব উল্লাহ বলেন, দেশে বর্তমানে দেড় লাখ রোহিঙ্গা সহ মাদকসেবীর সংখ্যা ৬৫ লাখ। যার ৯০ ভাগ হচ্ছে যুব সমাজ। যাদের বয়স ১৮থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। আর প্রতিদিন দেশে মাদকের পেছনে ব্যয় হয় ৪৬ কোটি টাকা। যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও উদ্বেগজনক। তাই মাদকের ব্যাপারে কোন ছাড় নই। গত কয়েক বছরে মাদক পাচারের হার বেড়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মাদকের ভয়াবহতা রোধ করতে পরিবার থেকে সচেতনতা শুরু করতে হবে। নিজের সন্তান কি করছে, কোথায় যাচ্ছে তা খেয়াল করতে হবে। র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ সকল আইন শৃংখলা বাহিনী, মিডিয়া কর্মী ও নাগরিকদের যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে মাদকের ভয়াবহতা রোধ করা সম্ভব বলে উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া তিনি বলেন, মাদক বিক্রেতাদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। যত বড়ই প্রভাবশালী হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। কক্সবাজারের রামু সেক্টর কমান্ডার কর্নেল আব্দুল খালেক বলেন, চাহিদা থাকলে পাচার হবেই। কিন্তু প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। এখন শুধু পুরুষই নয়, নারীরাও মাদকে আসক্ত হচ্ছে। তাই নিজের সন্তানদের প্রতি একটু সময় দিয়ে বন্ধুর মতো সময় কাটাতে হবে।
আপনার-আমার সন্তান কী করছে, কাদের সাথে মেলামেশা করছে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধূরী বলেন, গত ২৫ অক্টোবর ২০১৭সাল থেকে ২০ মার্চ ২০১৮সাল পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে আসা ইয়াবা, বিদেশী মদ, বিয়ার,ফেন্সিডিল, ও বিভিন্ন ব্রান্ডের সিগারেট, গাঁজা, চোলাই মদসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। আজ সেগুলো ধ্বংস করা হয়।
সভায় বিজিবি কর্মকর্তারা ছাড়াও কক্সবাজার ৩৪ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মনজুরুল হাসান, টেকনাফ ডিজিএফআই এর ইনচার্জ লেঃ কর্ণেল জোবায়ের আহম্মেদ, কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মারমা, অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ^াস, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার দেব, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মো. হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রপ্ত) প্রণয় চাকমা, টেকনাফ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার, টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রনজিত কুমার বড়–য়া, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক সাংসদ অধ্যাপক মোঃ আলী, টেকনাফ শুল্ক ষ্টেশনের ভারপ্রাপ্ত গুদাম কর্মকর্তা নুরুল মোস্তফা, টেকনাফ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক মোঃ মোশারফ হোসেনসহ টেকনাফ ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়া টেকনাফ মডেল থানায় ১২৭ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়েছে। ৬ জুলাই শুক্রবার দুপুরের দিকে টেকনাফ থানার প্যারেড মাঠে এসব মাদকদ্রব্য ধ্বংস করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত জানুয়ারী ২০১৮সাল থেকে জুন ২০১৮সাল পর্যন্ত ৬ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, বিদেশী মদ, বিয়ার, ফেন্সিডিল, গাজাঁ ও চোলাই মদ উদ্ধার করা হয়। ধ্বংস করা এসব মাদকের বাজার মূল্য ১২৭ কোটি ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৪০০ টাকা। এর মধ্যে ১২৬ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার ৬০০ টাকার ইয়াবা ট্যাবলেট ছিল। অন্যান্য মাদকদ্রব্যের মধ্যে ছিল বিদেশী মদ, বিয়ার ,ফেন্সিডিল, গাঁজা ও চোলাই মদ।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি রনজিত কুমার বড়–য়া বলেন, গত জানুয়ারী ২০১৮ইং থেকে জুন ২০১৮ইং পর্যন্ত টেকনাফফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ইয়াবা, বিদেশী মদ, বিয়ার,ফেন্সিডিল, গাঁজা ও চোলাই মদসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। এ সময় থানার প্যারেড মাঠে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। উক্ত সভায় মাদকদ্রব্য ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানের আগে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার বিশ^াস। উক্ত সভায় কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মারমা, টেকনাফ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আছাদুদ জামান চৌধুরী, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট রাজীব কুমার দেব, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মুহাং হেলাল উদ্দিন, টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রপ্ত) প্রণয় চাকমাসহ টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ কর্মকর্তারা ছাড়াও ও স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং বিভিন্ন ইলেকট্রিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দেশবিদেশ / ০৬ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ১০:০৮ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh