নুরুল করিম রাসেল /জাকারিয়া আলফাজ, টেকনাফ : | শনিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
টেকনাফ সাগর উপকূল দিয়ে ট্রলারে চেপে মালয়েশিয়া পাড়ির প্রস্তুতিকালে ৫০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ও বিজিবি। তন্মধ্যে বিজিবি ৩০ জন ও পুলিশ ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে। এসময় তিন দালালকে আটক করা হয়েছে।
বিজিবি জানায়, গতকাল ভোর রাতে টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ ঘোলার চর এবং বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালী পাড়া এলাকা থেকে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতির সময় ৩০ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ২৩ জন নারী ও ৭ জন পুরুষ রয়েছে। এসময় জাহাজপুরা এলাকার মহিবুল্লাহ ও দমদমিয়া এলাকার মোঃ হুমায়ন নামে দালাল চক্রের দুই সদস্য আটক করা হয়েছে।
বিজিবির হাতে উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গারা প্রত্যেকে উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত বলে জানিয়েছেন তারা। তাদের মধ্যে উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের ৮ জন, থাইংখালী ক্যাম্পের ৫ জন, টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের ৮ জন, দমদমিয়া ক্যাম্পের ৭ জন, উনচিপ্রাং ক্যাম্পের একজন ও জাদিমুরা ক্যাম্পের এক জন রোহিঙ্গা রয়েছে।
বিজিবির হাতে উদ্ধার হওয়া জাদিমুরা ডি-১১ এর মালয়েশিয়াগামী রোহিঙ্গা নারী নাসিমা আকতার বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত এক রোহিঙ্গা যুবকের সাথে বিয়ের কথা ঠিক করে আমি সেখানে যাওয়ার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে সাগর দেখে আমি ভয় পেয়ে যায় এবং যেেেত অনীহা প্রকাশ করি।’
বিজিবির হাতে উদ্ধার হওয়া টেকনাফের লেদা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা যুবক মোঃ তাহের বলেন, আমাদের এবং পাশের ক্যাম্প থেকে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ কম খরচে ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। এ খবর জেনে আমিও সাগর পথে ট্রলারে করে মালয়েশি যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।
টেকনাফস্থ ২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ জামান চৌধুরী বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পৃথক অভিযানে মালয়েশিয়াগামী ৩০ জন রোহিঙ্গাকে দালাল চক্রের হাত থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে বিজিবি। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে নিজ নিজ ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে এবং আটক দালালদের ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।’ লে. কর্ণেল আছাদুদ বলেন, উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, ‘তারা সবাই উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা দালালদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আটককৃত দালালদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে মানবপাচার চক্রে জড়িত অন্যান্য দালালদের ধরতে অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
এদিকে একই রাতে টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর ও বড় ডেইল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ জন রোহিঙ্গা ও এক দালালকে আটক করেছে পুলিশ। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা এসব রোহিঙ্গাদের উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।
এ ব্যাপারে টেকনাফ শামলাপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আটককৃত রোহিঙ্গারা মালয়েশিয়া যাওয়ার জন্য শামলাপুর এলাকায় জমায়েত হয়েছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের আটক করা হয় এবং প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দালালদের মাধ্যমে সাগর পথে মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে জানায়। পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে আটককৃতদের টেকনাফ মডেল থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।’
টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘মালয়েশিয়া যাওয়ার প্রস্তুতির খবর পেয়ে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় বাহারছড়া ইউনিয়নের দুইটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ২০ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করা হয়েছে। এদের সাথে এক দালালকেও আটক করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আটককৃত দালালের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
ওসি প্রদীপ জানায়, ‘কোন রোহিঙ্গা বা স্থানীয় নাগরিকরা যাতে দালালদের মাধ্যমে সাগরপথে মালয়েশি যাওয়ার পদক্ষেপ না নিতে পারে সেজন্য পুলিশ সতর্ক রয়েছে। এছাড়া পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। অচিরেই এসব পাচারকারী চক্রের সদস্যদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।’
উল্লেখ্য, এর আগে গতবছর নভেম্বর থেকে সাগর পথে মালয়েশি পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতিকালে বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব ও পুলিশ পৃথক অভিযান চালিয়ে মালয়েশিয়াগামী ৭২ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছিলেন। কোস্টগার্ডের একটি অভিযানে ৬ জন দালালকেও আটক করা হয়েছিল।
Posted ১:৪১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh