জসিম উদ্দিন টিপু,টেকনাফ | বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
জেলা পাউবোর অফিস হতে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টেকনাফের নাফনদী উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত জনসাধারণকে উঠে যাওয়ার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা স্বাক্ষরিত নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এই নোটিশ প্রাপ্তির পর হতে এসব স্থানে বসবাসরত নারী-পুরুষদের মধ্যে চরম ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৭ অক্টোবর টেকনাফ উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক কর্মকর্তা সরেজমিনে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ দক্ষিণ পাড়া, মিস্ত্রী পাড়া, বৃহত্তর জালিয়া পাড়ায় ২শ ৫০ পরিবার, হ্নীলা মৌলভী বাজার সুলিশ পাড়া, হোয়াব্রাং, ১নং স্লুইচ গেইট, কাস্টম্স ঘাট ১শ ২২ পরিবার ও গুদাম পাড়ায় ২৭ পরিবার বেড়িবাধেঁর পাদদেশে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করতে নোটিশ প্রদান করেন। এই নোটিশ গ্রহণের পর হতে এসব এলাকার বাসিন্দাদের অনেকে খাওয়া-ধাওয়া পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। তারা এই বিষয়টির বিকল্প হিসেবে একটু মাথা গুজার ঠাঁই পাওয়ার জন্য রাজনৈতিক নেতা, জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের লোকজনের সাথে যোগাযোগ করে শলা-পরামর্শ কামনা করছে।
হোয়াব্রাং সংলগ্ন মৃত সোলতান আহমদের পুত্র জানান, আমরা অসহায় গরীব মানুষ এই বেড়িবাঁধের পাশে জন্ম নিয়েছি। আজ দেশের স্বার্থে আমাদের উচ্ছেদ করলে আমরা কোথায় যাব। তাই আমাদের অন্যত্র পূর্ণবাসনের জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
সুলিশ পাড়ার হাজী কালু মিয়ার পুত্র খোরশেদ আলম জানান, আমরা অসহায়-গরীব মানুষ। এখন ঠিকমতো খেতে পারছিনা ভিটা কেনার জায়গা কোথায় পাব। তাই আমাদের অন্যত্র ঘর দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
কাস্টম্স ঘাট এলাকার মৃত সিকদার আলীর পুত্র নুরুল আলম জানান, আমরা জেলে ঘর-বাড়ি না থাকায় বিয়ে করে নদীর পাড়েই সংসার গড়েছি। এখন মাছ শিকার বন্ধ থাকায় সংসারে খুব কষ্টে আছি। আমাদের তাড়িয়ে দিলে কোথায় যাব। তাই সরকারের পক্ষ থেকে একটু পিঠ ফেলার জায়গা চায়।
গুদাম পাড়ার মৃত আব্দুল মাবুদের পুত্র জয়নাল আবেদীন জানান, বাবার পেশা জেলে হওয়ায় এই বেড়িতেই আমার জন্ম। গত আড়াই বছর ধরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় ৮জনের সংসার ভিক্ষুকের মত করেই চলছে। আমরা সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই কিন্তু আমাদের মাথা গুঁজার একটু জায়গা দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট দাবী জানাচ্ছি।
মৃত আব্বাস আলীর পুত্র সোনা মিয়া বলেন,এখন বেকারত্বের যন্ত্রণা সইতে না পেরে সিএনজির হেলপার হিসেবে কাজ করতে হচ্ছে। এখন থাকার জায়গা না পেলে গাড়ির রাস্তায় থাকা ছাড়া কোন গতি নেই।
মৃত ইসলাম মিয়ার পুত্র ছৈয়দ আলম বলেন, আমরা এই বেড়িবাঁধেই জন্ম নিয়েছি। মাদকের কারণে এখন নাফনদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় ১২/১৪ জনের সংসারে বিষম কষ্টে রয়েছি। আমাদের অন্যত্র থাকার জায়গা দেওয়ার জন্য সরকারের নিকট স্ববিনয় আবেদন জানাচ্ছি।
এই ব্যাপারে শাহপরীর দ্বীপের ফজলুল হক মেম্বার বলেন, শাহপরীর দ্বীপ জালিয়া পাড়া, মিস্ত্রী পাড়া ও দক্ষিণ পাড়ায় বেড়িবাঁধের পাদদেশে আনুমানিক আড়াইশত পরিবার এবং দোকান-পাট রয়েছে। এসব ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র-গরীর পরিবার সমুহকে সরকারী কোন খাস জায়গায় পূর্ণবাসন করার জন্য জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করা হয়েছে। আমি এই বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে মানবিক দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
হ্নীলা ইউপি চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নতকরণ এবং মাদক দমনের জন্য সীমান্ত সড়ক নির্মাণ সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপ। এই কাজ বাস্তবায়নের ফলে এসব বেড়িবাঁধের পাদদেশে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসা গরীব জনসাধারণকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্থ এসব অসহায়-গরীব জনসাধারণকে সরকারীভাবে অন্যত্র পূর্ণবাসনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ সকলের সহায়তা কামনা করছি।
উক্ত বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রবিউল হাসানের নিকট জানতে চাইলে বলেন, এই সীমান্ত সড়কটি বাস্তবায়ন সরকারের দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা। এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সকলের সহায়তা কামনা করছি। তবে এত অল্প সময়ে তাদের উচ্ছেদের বিষয়টি যথোপযুক্ত মনে হচ্ছেনা। উচ্ছেদ হতে যাওয়া এসব অসহায়-গরীব মানুষকে পূর্ণবাসনের জন্য আমরা উর্ধ্বতনমহলকে অবহিত করে একটু দেরী হলেও তাদের পূর্ণবাসনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এই বিষয়ে উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী বলেন, সীমান্ত সড়ক নির্মাণ একটি সরকারের অন্যতম প্রকল্প। কিন্তু এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে উপরোক্ত এলাকার প্রায় সাড়ে ৪শ অসহায়-গরীব পরিবার ও দোকান উচ্ছেদ করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি এই প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে পাশর্^বর্তী এলাকায় ক্ষতিগ্রস্থ জনসাধারণকে অন্যত্র পূর্ণবাসন করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সকলের নিকট বিনয় আহবান জানাচ্ছি। এখন তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যত্র পূর্ণবাসনের জন্য প্রধানমন্ত্রী, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সাংসদ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্ব স্ব এলাকার চেয়ারম্যানদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। আর্ন্তজাতিক সীমারেখা নাফনদীর ডান পাশ তথা বাংলাদেশের উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে নিরাপত্তা উন্নতকরণ এবং মাদক পাচাররোধ করার লক্ষ্যে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় প্রশস্থতা বৃদ্ধিকরণ এবং পূর্ণবাসন কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কার হতে যাওয়া এসব বেড়িবাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে হাজারো দরিদ্র, বাস্তুহারা ও অসহায় জেলে বসবাস এবং দোকান-পাট করে আসছে। এখন প্রকল্পের কাজ শুরুর সময় এসব বসতি উচ্ছেদ জরুরী হয়ে উঠেছে। তাই ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকার পরিবার সমুহকে অন্যত্র পূর্ণবাসনের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টির আশায় রয়েছেন এসব গরীব মানুষ।
Posted ১২:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh