দেশবিদেশ রিপোর্ট | সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ইয়াবা গডফাদারের নেতৃত্বে ফিল্মী স্টাইলে এক অসহায় বৃদ্ধের বসত ঘরে সন্ত্রাসী হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার বিকাল সাড়ে ৫ টার দিকে শাহপরীর দ্বীপ মাঝের পাড়ার নজির আহমদের বাড়িতে এ ঘটনাটি ঘটে। এঘটনায় নজির আহমদের স্ত্রী সত্তোরোর্ধ গুল চেহের, মেয়ে সাইর বানু (৫০) ও পুত্রবধূ রেনুকা বেগম (২৫) গুরুতর জখম হয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ইয়াবা গডফাদার সন্ত্রাসীদের হামলার শিকার বৃদ্ধ নজির আহমদ জানান, তার আপন ভাগিনাদের সাথে জমি সংক্রান্ত পূর্ব বিরোধের জের ধরে শাহপরীর দ্বীপ মিস্ত্রি পাড়ার নুরুল আমিন ওরফে বল্লা’র পুত্র মোহাম্মদ ইব্রাহিমের নেতৃত্বে দক্ষিণ পাড়ার মাহমুদুল্লাহ মাঝির ছেলে মোঃ শফিক, মোঃ নুরসহ ৩০/৩৫ জনের একদল সন্ত্রাসী যুবক আকস্মিক ভাবে তার বাড়িতে গিয়ে হামলা চালায় এবং বাড়িতে থাকা নারীদের সম্ভ্রমহানিরও চেষ্টা চালায়। এসময় সন্ত্রাসীরা নিজেদের কাছে থাকা ধারালো কিরিচ দিয়ে বাড়িতে এলোপাতাড়ি কুপাতে থাকে এবং তাদের কুপের আঘাতে বৃদ্ধের স্ত্রীসহ তিন নারী গুরুতর আহত হন।
বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশের শাহপরীর দ্বীপ অস্থায়ী ফাঁড়িতে অবহিত করা হলে পুলিশের একটি টীম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং তারা উক্ত সন্ত্রাসী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) রণজিত কুমার বড়–য়া বলেন, শাহপরীর দ্বীপে এরকম একটি ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে শুনেছি। এক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধীদের কোন ধরনের ছাড় দেয়া হবেনা, উক্ত ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট ফাঁড়ির ইনচার্জকে ইতোমধ্যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘সন্ত্রাসী যেই হোক, যত বড় শক্তিশালী হোক এ বিষয়ে ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন মাদক কারবারি , সন্ত্রাসীদের সাথে আপোষ নয়। অপকর্ম করে পুলিশের হাত থেকে কেউই রেহাই পাবেনা।’
শাহপরীর দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, বিএনপি’র রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে সম্পৃক্ত নুরুল আমিন ওরফে বল্লা ও তার ছেলে শাহপরীর দ্বীপ যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ ইব্রাহিম সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি। শাহপরীর দ্বীপে তাদের ইয়াবা সিন্ডিকেটটি লোকে মুখে ‘বাপ-পুত’র সিন্ডিকেট নামেও পরিচিত। ইয়াবা’র সূচনালগ্ন থেকে বল্লা এবং তার ছেলে ইব্রাহিম বিরতিহীনভাবে ইয়াবা পাচার করে আসছিল। এর আগে কয়েক তারা ইয়াবাসহ প্রশাসনের হাতে ধরা পড়লেও জামিন পেলে এলাকায় এসে ফের পুরোদমে ইয়াবা কারবার চালিয়ে যান। ইয়াবা কারবার ছাড়াও বল্লা এবং তার ছেলে ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মানবপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।
মুঠোফোনে তার প্রতিবেশীদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিএনপি’র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বল্লা এবং ইব্রাহিম বিগত বিএনপি জোট সরকারের আমলে ক্ষমতার পেশি শক্তি প্রদর্শন করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। সেসময় তাদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে পারতনা। এলাকার নিরীহ মানুষ প্রতিনিয়ত তাদের হাতে সন্ত্রাসী আক্রমনের শিকার হতো। এছাড়া কোন ঝগড়া বিবাদের সময় ইব্রাহিম নিজের কাছে থাকা অত্যাধুনিক অস্ত্র জনসমক্ষে প্রদর্শন করে এলাকায় ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতো।
এদিকে বিএনপি সরকারের পতনের পর গত প্রায় একদশকে ইব্রাহিমের দাপটের কোন কমতি হয়নি। বিএনপি’র আমল এবং বর্তমান আওয়ামীলীগ দু’মেয়াদের ক্ষমতাকালেও তারা সমানতালে বীরদর্পে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এবং দেদারচ্ছে ইয়াবা কারবার নিয়ন্ত্রন করছেন।
বর্তমানে সীমান্ত জনপদ শাহপরীর দ্বীপে বিজিবি, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও র্যাবের পৃথক চারটি ক্যাম্প রয়েছে। এতসব প্রশাসনের অবস্থান স্বত্বেও বল্লা এবং ইব্রাহিমের মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেই।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও শাহপরীর দ্বীপ আওয়ামীলীগের সভাপতি সোনা আলী বলেন, আওয়ামীলীগের প্রায় দশ বছর শাসনকাল চলছে, আওয়ামীলীগের কোন নেতাকর্মী কখনো দলীয় শক্তি দেখিয়ে কোন মানুষকে অন্যায় বা হয়রানি করেছে, এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবেনা । আমরা চাই এলাকায় শান্তি বিরাজ করুক। কিন্তু বিএনপি’র কিছু সন্ত্রাসী তাদের ক্ষমতায় থাকাকালীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভ্যাস গুলো এখনো ছাড়তে পারেনি। শাহপরীর দ্বীপে বিএনপি সমর্থিত এরকম দুটি শক্তিশালী সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে যারা এখনো আওয়ামীলীগ বা সরকারের প্রশাসনকে কোন ধরনের তোয়াক্কা না করে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া দরকার।
Posted ২:১৪ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh