দেশবিদেশ রিপোর্ট | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
টেকনাফ সীমান্তের ইয়াবা জগতে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। ইয়াবা নিয়ে কারবারিদের মধ্যে মারামারি, হানাহানি ও বন্দুকযুদ্ধ প্রায়শ লেগেই রয়েছে। ইয়াবা পাচারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড আইন পাশের প্রেক্ষিতে টেকনাফ সীমান্তে এমন অস্থিরতা এখন ভয়াল অবস্থায় গিয়ে ঠেকেছে। গত ৫ দিনের ব্যবধানে কেবল টেকনাফ সীমান্তে ৪ জন ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছেন। সর্বশেষ গতকাল রবিবার ভোরে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছেন দুইজন ইয়াবা কারবারি। সীমান্তের ইয়াবা কারবারিদের সামাল দিতে আইন শৃংখলা রক্ষাকারি সংস্থার সদস্যরাও রিতীমত হিমসিম খাচ্ছেন।
ইয়াবার রাজ্য টেকনাফ সীমান্তে গত ৫ দিনের খুনাখুনির এসব ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। কেননা আকিস্মক ইয়াবা বাজার এমন করে কেন অস্থির হয়ে পড়ল ? এলাকাবাসীর প্রশ্ন-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা ডনরা এখনো নিরাপদে কিভাবে থাকেন ? কেবল চুনোপুটিরা নিহতের তালিকায় আসছেন কেন ? এখনো পর্যন্ত টেকনাফ সীমান্তের তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদারগণ নিরাপদে রয়েছেন। ইয়াবার ভাগাভাগি এবং টাকার লেনদেন নিয়ে কেবল চুনোপুটিরাই কি জড়িয়ে পড়েন ? তবে পুলিশ জানিয়েছে, সীমান্তের রাঘব বোয়ালদের অধিকাংশই এলাকা থেকে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন।
এসব বিষয়ে পুলিশের বক্তব্য হচ্ছে, ইয়াবা বাজারের অস্থির পরিস্থিতি নিয়ে তাদেরও এক প্রকার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। গত কয়েকদিন ধরে প্রায়শ ইয়াবা কারবারিদের মধ্যেকার গোলাগুলির সংবাদ আসছে পুলিশের কাছে। যেই পুলিশ রাত্রিকালীন ডিউটিতে থাকেন তখনই তাদের কাছে গোলাগুলির এসব সংবাদ এসে থাকে। গত ৫ দিনে তিনটি ঘটনাই একই রকমের বলে পুলিশ জানিয়েছে। এসময় ইয়াবা কারবারিরাই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ এবং ভাগাভাগির বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা যখন ঘটে তখনই পুলিশের কাছে সংবাদ পৌঁছে। পুলিশও তড়িৎ পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় নিহত কারবারির লাশ, ইয়াবা এবং অস্ত্রশস্ত্র।
আবার বিবদমান ইয়াবা কারবারিরাও এমন বেপরোয়া আচরণ করে যে, পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। গত তিনটি স্থানের ঘটনাস্থলেই ইয়াবা কারবারিরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি ইয়াবা কারবারিদের গোলাগুলিতে গতকাল রবিবার ভোরের ঘটনায় টেকনাফ থানার তিন পুলিশও আহত হয়েছেন। গতকাল সাবরাং কাটাবুনিয়ায় ইয়াবা কারবারিদের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার সময় পুলিশের এ্যাকশনও প্রচার মাধ্যমে স্বচিত্র সংবাদও প্রচারিত হয়েছে।
কক্সবাজারের টেকনাফের সাবরাং উপকূলে বন্দুক যুদ্ধের ঘটনায় সাংবাদিক হামলার আসামীসহ পুলিশ চিহ্নিত দুই মাদক কারবারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এই ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।এনিয়ে গত ৫দিনে (২৪ থেকে ২৮ অক্টোবর) পর্যন্ত কথিত বন্দুক যুদ্ধে ৪ মাদক কারবারী নিহত হল।
জানা যায়, ২৮ অক্টোবর ভোররাতে উপজেলার সাবরাংয়ের উপকূলীয় এলাকাস্থ কাটাবনিয়া ঝাউ বাগানে দু’দল মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধের খবর পেয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশের বিশেষ ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গমন করেন। এসময় মাদক চোরাকারবারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করলে পুলিশও আতœরক্ষার্থে পাল্টাগুলিবর্ষণ করে। এসময় মাদক কারবারীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এতে পুলিশের এসআই রাজু, এএসআই মিঠু ও কনস্টেবল ইব্রাহীম খলিল আহত হয়। পুলিশ ঘটনাস্থল তল্লাশী করে ২টি গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত মৃতদেহ, ৬টি অস্ত্র, ২৫ রাউন্ড বুলেট ও বিপূল পরিমাণ ইয়াবা বড়ি পাওয়া যায়।
লাশ থানায় এনে মৃতদেহ ২টির পরিচয় সনাক্ত করে ১জন টেকনাফ পৌর এলাকার উত্তর জালিয়া পাড়ার মোহাম্মদ হাশিমের পুত্র হাসান আলী (৪৩) এবং অপরজন টেকনাফ সদরের নাজির পাড়ার নুরুল আলমের পুত্র মোঃ কামাল উদ্দিন (২৮)বলে জানা যায়। এদের মধ্যে নিহত মাদক কারবারী কামাল উদ্দিন ২০১৬ সালে টিভি সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান হামলার আসামী ছিল। আহত পুলিশ সদস্যদের উপজেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে টেকনাফ মডেল থানার অফিসার্স ইনচার্জ প্রদীপ কুমার দাশ সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান, দুইদল মাদক কারবারীর বন্দুক যুদ্ধের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে মাদক কারবারীরা পুলিশ লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশও আতœরক্ষার্থে গুলিবর্ষণ করলে মাদক চোরাকারবারীরা পালিয়ে যায়। এসময় পুলিশের ৩ সদস্য আহত হয়। ঘটনাস্থল হতে ২টি মৃতদেহ, ৬টি অস্ত্র, ২৫ রাউন্ড বুলেট ও বিপূল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। লাশ মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
উল্লেখ্য গত ২৬ অক্টোবর ভোররাতে টেকনাফে নাফনদীর কিনারায় দু‘গ্রুপ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে চালান খালাস নিয়ে গোলাগুলির ঘটনায় টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের উলুচামরী এলাকার কালা মিয়া প্রকাশ কালুর পুত্র হামিদুল ইসলাম প্রকাশ লালাইয়া ওরফে বার্মাইয়া লালাইয়ার (৩৫) গুলিবিদ্ধ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।এসময় ২টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র, ১০ রাউন্ড বুলেট ও ৬ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়।
এর দুদিন আগে ২৪ অক্টোবর ভোরে টেকনাফে দু’পক্ষের বন্দুক যুদ্ধে ৫টি দেশীয় তৈরী অস্ত্র, ২০ রাউন্ড বুলেট ও ইয়াবাসহ এক জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে লাশের পরিচয় সনাক্ত করে নিহত ব্যক্তি উপজেলার হ্নীলা পূর্ব লেদার মৃত লাল মিয়ার পুত্র মুফিজ আলম (৩২) বলে জানা যায়।
Posted ১:৩০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh