দেশবিদেশ রিপোর্ট | শনিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮
দরিদ্র পিতার মেধাবী কন্যা উম্মেহানি ইসরাত জিহান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকের (ডিসি) সহযোগিতা পেয়ে এখন স্বপ্ন বুনছেন তিনি প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবেন। এসএসসি-তে বিজ্ঞান বিভাগে এবং মানবিক নিয়ে এইচএসসি উত্তীর্ণ মেধাবী ছাত্রী জিহান ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে ভর্ত্তির সুযোগ পেয়ে গেলেও দারিদ্রতা তার উচ্চ শিক্ষায় বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। তার ইচ্ছা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করা।
কিন্তু ভর্ত্তির সুযোগ হাত ছাড়া হতে দেখে শেষ সময়ে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে ভর্ত্তি হয়ে যান। তবুও যেন তিনি থামার পাত্রী নন এই মেধাবী ছাত্রী। তিনি তার দরিদ্র পিতাকে সাথে নিয়ে বৃহষ্পতিবার দেখা করেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সাথে। দরিদ্র পিতা জেলা প্রশাসককে জানান. তার মেধাবী কন্যা কোন রকমে ভর্ত্তি হতে পারলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখার খরচ চালানোর মত অবস্থা তার নেই। তিনি সরকারি আট একর চিংড়ি চাষের জমি ইজারা পেয়েও আজ দীর্ঘ নয় বছর ধরে তার হাতছাড়া। এ কারনে তিনি মেধাবী সন্তানের পড়ালেখা চালিয়ে নিতেও অপারগ। দরিদ্র পিতার এমন আকুতিতে মহানুভবতার হাত বাড়িয়ে দেন জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার সাহারবিল ইউনিয়নের মাইজঘোনা গ্রামের বাসিন্দা হারুনুর রশিদের তিন সন্তানের জ্যেষ্ট কন্যা হচ্ছেন জিহান। তিনি বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পাশ করেন চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ নামের শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে। এরপর রাজধানী ঢাকার উত্তরার জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন। লেখাপড়ার খরচে বাবার অপারগতায় ফুফুর বাসায় থেকে কাজ করেই তিনি কলেজের ক্লাশে গেছেন।
পরবর্তীতে একই কলেজের একজন মহানুভব শিক্ষকের বাসায় থেকে লেখাপড়া করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্ত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন জিহান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্য কলায় তিনি ভর্ত্তির সুযোগ পেয়েও হতে পারেননি। পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সহ তিনটি বিষয়ে ভর্ত্তির সুযোগ পেয়ে যান। ইত্যবসরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীতে ভর্ত্তি হয়ে যাবার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ মিলে যায় আরেকটিতে ভর্ত্তির। জেলা প্রশাসকের আর্থিক সহযোগিতায় তার এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ হাতের মুঠোয়।
মেধাবী ছাত্রী জিহানের মা তসলিমা বেগম জানান-‘আমার স্বামী হারুনুর রশিদের তেমন জায়গা-জমি নেই। আমি নিজেই এক খন্ড জমিতে কচুক্ষেত করে কোন রকমে জীবন ধারণ করি। তসলিমা জানান, তার স্বামীর নামে চকরিয়ার বদরখালী মৌজায় সরকারি ৮ একর চিংড়ি চাষের ইজারা প্রাপ্ত জমি রয়েছে। কিন্তু সেই জমিও গত ৯ বছর ধরে অন্যের দখলে থাকায় তাদের এমন দুরবস্থা চলছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান-‘আমি মেধাবী মেয়েটির ভর্ত্তি হবার মত আর্থিক ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এখন মেয়েটির বাবার নামে সরকারি যে চিংড়ি চাষের জমি রয়েছে তা উদ্ধার করে তাদের হাতে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করব।’ তিনি বলেন, সরকারি চিংড়ি চাষের জমি ভোগ করতে পারলেই মেধাবী মেয়েটির পড়ালেখা সহ পরিবারের ভরণ পোষনের পুরো ব্যবস্থাটাই হয়ে যাবে।
Posted ১:০৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh