শহীদুল্লাহ্ কায়সার | সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ ও দলটির জেলার ৪ সংসদ-সদস্যের দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। ফলে সংগঠনটিতে গ্রুপিং মাথাচাড়া দেয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বর্তমানে তা অনেকটা গোপনে। কিন্তু কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণা করলেই পরিস্থিতি হিতে বিপরীত হতে পারে। প্রকাশ্যে আসতে পারে গ্রুপিং। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এই প্রতিবেদককে এমন তথ্যই দিলেন।
কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলাতেই বিরাজ করছে এই অবস্থা। ইতোমধ্যে স্থানীয় এমপিকে পাশ কাটিয়ে ১৯ জানুয়ারি একটি উপজেলায় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাতেই তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া ব্্যক্ত করেনি জেলা আওয়ামী লীগ। তবে, স্থানীয় এমপি যে বিষয়টিকে ভালোভাবে গ্রহণ করেননি আজকের দেশবিদেশকে তাঁর অনুগত এক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা গতকাল রাতে দৈনিক আজকের দেশবিদেশকে বলেন, ‘ সংগঠনের যে কোন স্তরের নেতা-কর্মীর মনোনয়ন চাওয়ার অধিকার আছে।’ মনোনয়ন প্রত্যাশীদের ব্যাপারে ইতোমধ্যে খবরা-খবর নেয়া শুরু হয়েছে। তাই তাঁদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচার কাজে অংশগ্রহণ করতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের নির্দিষ্ট কোন প্রার্থী নেই। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করবে জেলা আওয়ামী লীগ। কোন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা চাইছেন উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি দলীয় কোরামে নির্ধারণ করা হোক। এরপর তাঁরা প্রার্থীদের একটি তালিকা কেন্দ্রের কাছে প্রেরণ করবেন। বিষয়টি জেনে জেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের উপর ক্ষুব্ধ সংসদ-সদস্যগণ। তাঁরা চান জনপ্রতিনিধির মনোনয়নের বিষয়টি তাঁদের উপর ছেড়ে দেয়া হোক। অন্যদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি উঠছে, তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মতামতের উপর ভিত্তি করে প্রার্থী নির্ধারণ করা হোক।
১৬ জানুয়ারি কক্সবাজার শহরের পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে এই এমপি’র জনসভার ব্যানারে অতিথি হিসেবে নাম ছিলো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু দুই নেতাই জনসভায় যোগদান করেননি। উল্টো এমপিকে গ্রুপিং সৃষ্টি করছে বলে রাজনৈতিক সহকর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা এমন তথ্য দিয়েছেন।
একই অবস্থা জেলার অন্য তিন সংসদীয় আসনেও। ইতোমধ্যে টেকনাফে উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্য প্রকাশে গ্রুপিং এ জড়িয়ে পড়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগ ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী পক্ষে কাজ করেনি। এমন অভিযোগ স্থানীয় সংসদ-সদস্যের ( সংসদের প্রথম অধিবেশনে সাবেকের খাতায় নাম লেখাতে চলা)। অন্যদিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে এই সংসদ-সদস্যকে ইয়াবা পাচারকারীদের মদদদাতা আখ্যায়িত করে আসছে। টেকনাফের মতো উখিয়া উপজেলাতেও নিজ পছন্দের প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়নে নির্বাচন করাতে আগ্রহী এই সংসদ-সদস্য।
অন্য দুইটি আসনের অবস্থাও একই। দীর্ঘদিন ধরেই চকরিয়া এবং পেকুয়া উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি নব-নির্বাচিত সংসদ-সদস্যের নিয়ন্ত্রণে। ফলে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে নিজ অনুগত নেতাদের প্রার্থী করতে চাইছেন তিনি। অন্যদিকে, কক্সবাজার-২ আসনের সংসদ-সদস্য নিজেই মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেও তিনি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। নিজ আসনের দুই উপজেলায় পছন্দের নেতারা দলীয় মনোনয়ন পাক। অন্য সংসদ-সদস্যদের মতো তিনিও সেটিই চাইছেন।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আবুল কাশেম বলেন, ইউনিয়ন, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং স্থানীয় সংসদ-সদস্যের মতামতের ভিত্তিতেই প্রার্থী নির্ধারণ করতে হবে। স্থানীয় সংসদ-সদস্য এবং তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ ভালোভাবে অবগত মাঠ পর্যায়ে কার অবস্থা কেমন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই পন্থাই অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছেন। কক্সবাজার সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী বদিউল আলম আমির বলেন, সাধারণ মানুষ আমার কাছে সহজে আসতে পারেন। অন্য প্রার্থীদের ভয় করেন। ইতঃপূর্বে সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্¦ন্দ্বিতা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। দীর্ঘদিন সদর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি থাকায় মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাই আমি চাই তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মতামত নিয়ে প্রার্থী নির্বাচন করা হোক।।
Posted ২:২৭ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২১ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh