মাহাবুবুর রহমান | রবিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৫ | প্রিন্ট | 48 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
* প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা অফিসারের পকেটেই যায় বেশির টাকা
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্লিপ ফান্ডের টাকা যেনতেন ভাবে খরচ করে নামে বেনামে বিল ভাউচার জমা দিয়ে সরকারি টাকা তছরোপ হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি বৈদ্যুতিক বাল্বের দাম ধরা হয়েছে ৩২০০ টাকা,আবার একটি প্লাস্ট্রিকের চেয়ারের দাম ধরা হয়েছে ৫৫০০ টাকা,আবার অনেকে কয়েক বছর আগে কিনা উপকরণ প্রতি বছর কেনা দেখিয়ে বিল ভাউচার বানিয়েছে। আবার শিক্ষকদের দাবী অফিস ম্যানেজ করতেই চলে যায় কিছু টাকা। জেলার ৬৫৮ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা সহ জেলার বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ খবর নিয়ে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলা পশ্চিম চৌফলদন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২০২৪-২৫ অর্থ বছর ভ্যাট বাদে স্লিপ ফান্ডে টাকা পেয়েছে ৬৫ হাজার ৩৫ টাকা। গোপন সূত্রে খবর নিয়ে জানা গেছে,গত বছর সদর উপজেলায় স্লিপ ফান্ডের খরচের ভাউচার জমা দিয়েছে উক্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক আপন কান্তি দত্ত। সেই ভাউচারে দেখা গেছে একটি বৈদ্যুতিক বাল্বের দাম ধরা হয়েছে ৩২০০ (বত্রিশশত) টাকা। যেখানে বাজারে ৩০০ টাকার উপরে কোন বাল্ব নেই।
একই ভাবে স্কুলের জন্য বিভিন্ন উপকরণ কেনা ও মেরামতের বেশির ভাগ ভাউচার বানানো বলে দাবী করেছেন খোদ উক্ত স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা। এ ব্যাপারে পশ্চিম চৌফলদন্ডি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আপন কান্তি দত্ত বলেন,আমি ৩২‘শ টাকার বাল্বের বিল ভাউচার দিয়েছিলাম। পরে সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। কেন একটি বাল্বের দাম ৩২‘শ টাকা দিয়েছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি স্কুলে পরীক্ষা সহ অনেক খরচ আছে বলে জানান। পরে অবশ্য সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে গিয়ে দেখা গেছে সেই ভাউচার গায়েব হয়ে গেছে।
এদিকে মধ্য খুরুশকুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিষয়ে জানতে গিয়ে স্কুলের অভিভাবক নাজিম উদ্দিন,আসলাম সহ অনেকে বলেন,আগে স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি ছিল কিছুটা তদারকি ছিল,এখন উনাদের শিক্ষা অফিসার সভাপতি আর কেউ নাই,তাই যা ইচ্ছা তাই করছে। শুনেছি গত বছরের স্লিপের ফান্ডে টাকা এসেছে ভ্যাট বাদে ৪৩ হাজার ৩৫৭ টাকা। সেখানে প্রধান শিক্ষক এবং তাদের শিক্ষা অফিসার মিলে অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেখানে বিলে নাকি অফিসে যাতায়ত খরচ দেখানো হয়েছে অনেক টাকা। যা কোন নিয়মে নাই। আর পুরাতন কাজকে আবার দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করেছে।
রামু উপজেলা খুনিয়াপালং ইউনিয়নের লম্বরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান ৩ বছর আগের একটি বুক সেল্পকে চলতি বছর রং করে আবার নতুন কিনেছে দেখানো হয়েছে। পুরু স্কুলে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টাকার কাজও করেনি,কিন্ত বিল ভাউচার সব ঠিক মত করেছে।
রামু কেন্দ্রীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক জানান,ছাত্র অনুপাতে আমাদের প্রতি বছর ভাল পরিমান স্লিপের টাকা আসে। এগুলো প্রধান শিক্ষক আর শিক্ষা অফিসার কি করে উনারা ভাল জানে। টুকটাক কিছু করে ৭০% টাকা আত্মসাৎ হয়। আর অফিসার যদি করতে বলে তাহলে প্রধান শিক্ষকতো অবশ্যই করবে। তবে এসব কাজে আমাদের কেউ জানায়না।
এদিকে কক্সবাজার শহরের ২ নং ওয়ার্ডের নুনিয়ারছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং হাজী হাছন আলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে স্লিপের কাজ বেশ অনিয়ম হয়েছে জানিয়েছেন খোঁদ শিক্ষক এবং অভিভাবকরা।
এদিকে চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজার চা বাগান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,প্রধান শিক্ষক সহকারী শিক্ষকদের সাথে কোন সময় আর্থিক বিষয়ে কোন পরামর্শ করার তোয়াক্কা করেননা। প্রতি বছর পুরানো কাজ দেখিয়ে ভুয়া বিল ভাউচার করে স্লিপ ফান্ডের টাকা নয়-ছয় করেন।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন,আমি নতুন যোগদান করেছি। পূর্বের কোন কাজের অনিয়ম দূনীতি হলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। বিশেষ করে যে সব স্কুলের বিষয়ে অভিযোগ আসছে তাদের স্লিপের কাজ এবং বিল ভাউচার আবার দেখা হবে।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার বলেন,স্লিপের টাকা সরকার দিচ্ছে স্কুলের সংস্কার,উপকরণ কেনা এবং প্রাথমিক শিক্ষার মান নিশ্চিত করতে। এখানে প্রধান শিক্ষক,আগে এসএমসি সভাপতি বর্তমানে ক্লাস্টার অফিসার সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে তাদের স্বাক্ষর ছাড়া বিল পাস হবে না। সেখানে কেউ কোন অনিয়ম করলে আমাদের কাছে কেউ জানালে দ্রুত তদন্তপূর্বক কঠিন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ডিবিএন/জেইউ।
.
এ বিভাগের আরও খবর