মাহাবুবুর রহমান, তারেকুর রহমান | শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর ২০২৫ | প্রিন্ট | 58 বার পঠিত | পড়ুন মিনিটে
২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটেছে।বিগত ১২ বছরের মধ্যে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন। প্রায় অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থীই এবার ফেল করেছে। পাশাপাশি জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বড় ধরনের ধস নেমেছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) ঘোষণা হওয়া ফলাফলে কক্সবাজার জেলায় পাসের হার মাত্র ৪৫.৩৯%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২০৬ জন। এদর মধ্যে ছেলে ৬৭ জন এবং মহিলা ১৩৯ জন।
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে কক্সবাজার জেলার শীর্ষে রয়েছে রামু ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ। প্রতিষ্ঠানটির ১৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫ জন উত্তীর্ণ হয়েছে। পাসের হার ৯৩.৭৫ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কক্সবাজার সরকারি কলেজ। এখানে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১,২২২ জন শিক্ষার্থী, এর মধ্যে পাস করেছে ১,০০০ জন। পাসের হার ৮২.৯৯ শতাংশ। পাশাপাশি এই কলেজ থেকেই জেলার সর্বাধিক ১৬১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ (পাসের হার ৮২.৮৮ শতাংশ) এবং এর পরেই কুতুবদিয়া সরকারি কলেজ (৮২.৪৮ শতাংশ)।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকাল ১০টায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ফলাফল প্রকাশের পর বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
কক্সবাজারে কলেজের তথ্য মতে কক্সবাজার সরকারি কলেজ পরীক্ষার্থী ১২২২ জন,পাস করেছে ১০০০ জন,ফেল করেছে ২২২ জন, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬১ জন। কক্সবাজার সরকারি মহিলা কলেজ পরীক্ষার্থী ছিল ৯৭৫ জন পাস করেছে ৭৩৯ জন,ফেল করেছে ২৩৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ জন। কক্সবাজার সিটি কলেজ পরীক্ষার্থী ছিল ৯৭৭ জন পাস করেছে ৩৭২ জন,ফেল করেছে ৬০৫ জন জিপিএ -৫ পেয়েছে মাত্র ১ জন। কক্সবাজার হার্ভাট কলেজ পরীক্ষার্থী ১১৯ জন পাস করেছে ৪৩ জন,ফেল করেছে ৭৬ জন। কক্সবাজার ডিসি কলেজ পরীক্ষার্থী ১৭৬ জন পাস করেছে ১৩০ জন,ফেল করেছে ৪৬ জন। কক্সবাজার কর্মাস কলেজ পরীক্ষার্থী ২১৭ জন পাস করেছে ৪৩ জন,ফেল করেছে ১৭৪ জন। ঈদগাও রশিদ আহামদ কলেজ পরীক্ষার্থী ৪৭৪ জন, পাস করেছে ৮৪ জন,ফেল করেছে ৩৯০ জন। উখিয়া কলেজ পরীক্ষার্থী ৫৪৯ জন,পাস করেছে ১১২ জন,ফেল করেছে ৪৩৭ জন। বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ পরীক্ষার্থী ৭৪০ জন,পাস করেছে ১৭৬ জন,ফেল করেছে ৬০৪ জন। টেকনাফ সরকারি কলেজ পরীক্ষার্থী ৬৬০ জন,পাস করেছে ২১৯ জন,ফেল করেছে ৪৪১ জন। মঈন উদ্দিন মেমোরিয়াল কলেজ পরীক্ষার্থী ২৫৯ জন,পাস করেছে ২১৩ জন,ফেল করেছে ৪৬ জন। রামু সরকারি কলেজ পরীক্ষার্থী ১১৪৬ জন,পাস করেছে ৪৭৫ জন,ফেল করেছে ৬৭১ জন। রামু ক্যান্টনমেন্ট ইংলিশ স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষার্থী ১৬ জন পাস করেছে ১৫ জন ফেল করেছে ১ জন। রামু ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষার্থী ৪৩ জন পাস করেছে ৩৪ জন ফেল করেছে ৯ জন।সরকারি বঙ্গবন্ধু মহিলা কলেজ মহেশখালী পরীক্ষার্থী ৪৬৩ জন পাস করেছে ১৮৮ জন ফেল করেছে ২৭৫ জন। হোয়ানক কলেজ পরীক্ষার্থী ১২২ জন,পাস করেছে ৩০ জন,ফেল করেছে ৯২ জন। মহেশখালী কলেজ পরীক্ষার্থী ৬৮২ জন,পাস করেছে ১৬৮ জন,ফেল করেছে ৪১৪ জন। বদরখালী কলেজ পরীক্ষার্থী ২৪৬ জন,পাস করেছে ৫৯ জন,ফেল করেছে ১৯৩ জন। চকরিয়া কর্মাস কলেজ পরীক্ষার্থী ছিল ২ জন ফেল করেছে ২ জন কেউ পাস করতে পারেনি। চকরিয়া সিটি কলেজ পরীক্ষার্থী ১২৫ জন পাস করেছে ২৬ জন,ফেল করেছে ৯৯ জন। চকরিয়া সরকারি কলেজ পরীক্ষার্থী ১০৫৬ জন,পাস করেছে৩২২ জন,ফেল করেছে ৭৩৪ জন। চকরিয়া মহিলা কলেজ পরীক্ষার্থী ৫৫২ জন,পাস করেছে ১৬৭ জন,ফেল করেছে ৩৮৫ জন। ডুলাহাজারা কলেজ পরীক্ষার্থী ৪৫৮ জন,পাস করেছে ১৭১ জন,ফেল করেছে ২৮৭ জন। শহীদ জিয়াউর রহমান উপকূলীয় কলেজ পরীক্ষার্থী ৫৮০ জন পাস করেছে ৩৫৬ জন ফেল করেছে ২২৪ জন। ধুরং আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ পরীক্ষার্থী ৭১ জন,পাস করেছে ১৯ জন,ফেল করেছে ৫২ জন। কুতুবদিয়া সরকারি কলেজ ৪৯৬ জন,পাস করেছে ৪০৫ জন,ফেল করেছে ৯১ জন। কুতুবদিয়া মহিলা কলেজ পরীক্ষার্থী ১১৫ জন,পাস করেছে ৪৬ জন,ফেল করেছে ৬৯ জন।
২০২৪ সালে ছয়টি বিষয়ের এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার ছিল ৬৩.১৯%। আর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৯৮ জন।২০২৩ সালে পাসের হার ছিল ৭০.৩৮%। ২০২২ সালে পাশের হার ছিল ৭৪.৯২%। ২০২১ সালে পাশের হার ৮৬.৮৮ %। ২০২০ সালে করোনার কারণে সবাই অটো পাশ। ২০১৯ সালে পাসের হার ৫৪.৩৯%। ২০১৮ সালে পাসের হার ছিল ৬১.৬৬ %। ২০১৭ সালে পাসের হার ছিল ৫৫.৩২%। ২০১৬ সালে পাসের হার ছিল ৬৪.৮০%।
প্রাপ্ত ফল অনুযায়ী,চলতি বছর কক্সবাজার জেলায় মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১২ হাজার ৮৪৩ জন। যেখানে ১২ হাজার ৬৯৮ জন পরীক্ষায় অংশ নেন। যার মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ১৬২ জন আর মেয়ে ৭ হাজার ৫৩৬ জন।
মোট পাসকৃত পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৭৬৩ জন। যার মধ্যে ছেলে ২ হাজার ১৮৭ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৫৭৬ জন।পাসের হারে পিছিয়ে রয়েছে ছেলেরা। ছেলে পরীর্ক্ষীদের মধ্যে পাস করেছেন ৪২.৩৭% জন আর মেয়েদের পাসের হার ৪৭.৪৫%।মোট জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২০৬ জন যার মধ্যে ছেলে ৬৭ এবং মেয়ে ১৩৯ জন।
জেলার সার্বিক চিত্রে দেখা যাচ্ছে, কিছু সরকারি কলেজ ভালো ফল করলেও বেশিরভাগ বেসরকারি কলেজে পাশের হার অর্ধেকের নিচে।
শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষক সংকট, মানসম্মত পাঠদানের অভাব ও প্রস্তুতির ঘাটতি এই নিম্নমানের ফলাফলের প্রধান কারণ।
ডিবিএন/জেই উ।
.
এ বিভাগের আরও খবর