শহীদুল্লাহ্ কায়সার | সোমবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮
গতকাল রবিবার (২ডিসেম্বর) বাছাইয়ে বাতিল হলো চার প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। ফলে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার জেলার ৪ টি আসনে প্রার্থী সংখ্যা এখন ৩০। আগামি ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত রয়েছে প্রার্থীতা প্রত্যাহারের দিন। ওই সময়ের মধ্যে কেউ প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে ৩০ জনের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন।
বাছাইকে কেন্দ্র করে গতকাল রবিবার (২ ডিসেম্বর) কক্সবাজার শহরে দিনভর বিরাজ করে টান টান উত্তেজনা। সকাল থেকেই বিপুল সংখ্যক মানুষ ভিড় জমায় হিল ডাউন সার্কিট হাউস। প্রার্থীদেরও প্রায় সবাই ছিলেন উপস্থিত। নিজেদের প্রস্তাবকারী, সমর্থনকারীসহ সমর্থকদেরও সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন কয়েকজন প্রার্থী। এনেছিলেন মনোনয়নপত্রে সংযুক্ত যাবতীয় প্রমাণপত্র। কয়েকজন প্রার্থী নিজেদের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরতে নিয়োগ করেছিলেন আইনজীবী।
শুধু প্রার্থী, কর্মী, সমর্থক নয়। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পক্ষ থেকেও পাঠানো হয় প্রতিনিধি। বিশেষ করে, আয়কর বিভাগ, পুলিশ, বিদ্যুৎ বিভাগ, তফসিলি ব্যাংকগুলোর প্রতিনিধিরা ছিলেন উপস্থিত। প্রার্থীদের মধ্যে কেউ দ-প্রাপ্ত কিংবা খেলাপী কিনা তা যাচাই করতেই তাঁরা উপস্থিত ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় কক্সবাজা-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসন দিয়ে রিটার্নিং অফিসার ও কক্সবাজারের জেলাপ্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন শুরু করেন বাছাই কার্যক্রম। তাঁকে সহযোগিতা করেন সহকারি রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ বশির আহমেদ। সকালেই রিটার্নিং অফিসার ও জেলাপ্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন যথাযথ নিয়ম অনুসরণ না করায় ৪ প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করে। আরো ৪ প্রার্থীর সিদ্ধান্ত রেখে দেন নিজ হাতে। ঘোষণা দেন বিকেল ৪ টায় তাঁদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেয়া হবে।
জেলাপ্রশাসকের হাতে রেখে দেয়া ৪ প্রার্থীই জেলার রাজনীতিতে স্বনামে পরিচিত। যে কোন মুহূর্তে বাতিল হতে পারে এই ৪ হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়নপত্র। তাঁদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া মানেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনেকটা প্রতিযোগিতাহীন হয়ে পড়া। এ কারণে সবার নজর ছিলো জেলাপ্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মোঃ কামাল হোসেন’র সিদ্ধান্তের উপর।
বি.এন.পি মনোনীত কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদরÑরামু) আসনের প্রার্থী সাবেক সংসদ-সদস্য লুৎফুর রহমান কাজল, কক্সবাজারÑ২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মনোনয়ন নিশ্চিতের দাবিদার, জামায়াতের সাবেক সংসদ-সদস্য এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আজাদ, একই আসনে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম এবং কক্সবাজার Ñ৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী আবুল মঞ্জুর ছিলেন এই তালিকায়।
কিন্তু সব সংশয় দূর হয়ে সন্ধ্যা সাড়ে ছয় টায় জেলাপ্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হলো সংশয়ে থাকা ৪ প্রার্থীই বৈধ। ফলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে তাঁদের আর কোন আইনি জটিলতা থাকলো না।
অন্যদিকে, সকালে যে চারজনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেন তাঁরা হলেন, কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ্, একই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বক্কর ছিদ্দিক, কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত দাবিদার নজিবুল ইসলাম, এবং কক্সবাজার -৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী গফুর উদ্দিন চৌধুরী। কক্সবাজার Ñ ২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী, মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আইনি বাধ্যবধকতার অংশ হিসেবে যাঁদের স্বাক্ষর তিনি সংগ্রহ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ৩ ব্যক্তি অভিযোগ করেন তাঁরা আবু বক্কর ছিদ্দিকের পক্ষে স্বাক্ষর করেননি। আর দুই ব্যক্তির কোন অস্তিত্ব খোঁজে পায়নি। ফলে মনোনয়নপত্র ত্রুটিপূর্ণ উল্লেখ করেন তাঁর প্রার্থীতা বাতিল ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার।
একই আসনে আয়কর ফাঁকি ও শিক্ষাসনদ জমা না দেয়ায় জাতীয় পার্টি (জাপা) মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মোহিবুল্লাহ্র মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। মনোনয়নপত্রে নিজেকে বি.এ পাশ উল্লেখ করলেও শিক্ষাসনদ জমা দেননি তিনি। পাশাপাশি আয়করযোগ্য হলেও ব্যক্তিগত কর সনদও জমা দেননি। দিয়েছেন অংশীদারত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত ডক্টরস্ চেম্বারের করসনদ। বিষয়টি গোচরে এলে রিটার্নিং অফিসার তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম। মনোনয়নপত্রে নিজেকে আওয়ামী লীগ রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত উল্লেখ করলেও বাছাইকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে কোন প্রমাণপত্র প্রদর্শন করতে পারেননি। এ কারণে রিটার্নিং অফিসার তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন।
কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেন পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী। কিন্তু গতকাল বাছাইয়ের দিন তিনি অনুপস্থিত ছিলেন। ত্রুটিপূর্ণ মনোনয়নপত্র উল্লেখ করে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ’২০১৮ এর প্রার্থীরা হলেন ঃ
কক্সবাজারÑ ১ (চকরিয়া-পেকুয়া) ঃ জাফর আলম {বি.এ (অনার্স) এম.এ} (আওয়ামী লীগ), হাসিনা আহমেদ (বিএনপি), মোহাম্মদ ইলিয়াছ (জাতীয় পার্টি), হাজি বশিরুল আলম (ওয়ার্কার্স পার্টি), মোহাম্মদ আলী আছগর (ইসলামি আন্দোলন), বদিউল আলম (স্বতন্ত্র) এবং তানিয়া আফরিন (স্বতন্ত্র)।
কক্সবাজারÑ২ ( মহেশখালী-কুতুবদিয়া) ঃ আশেক উল্লাহ্ রফিক (আওয়ামী লীগ), আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ্ ফরিদ (বি.এন.পি), এ.এইচ.এম. হামিদুর রহমান আজাদ (ঐক্যফ্রন্ট), আনছারুল করিম (গণফ্রন্ট), জিয়াউর রহমান (ইসলামিক ফ্রন্ট) মোঃ শহীদুল্লাহ্ (এনডিএম), জসিম উদ্দিন (ইসলামি শাসনতন্ত্র আন্দোলন), মেজর (অব.) শাহেদ সরওয়ার (বিকল্পধারা), আবু মোহাম্মদ মাসুদ ইসলাম (ইসলামি ঐক্য ফ্রন্ট) ও আব্ ুইউসুফ মোঃ মনজুর আহমেদ (ইসলামি ফ্রন্ট)।
কক্সবাজার-৩ (কক্সবাজার সদর-রামু) ঃ সাইমুম সরওয়ার কমল (আওয়ামী লীগ), লুৎফুর রহমান কাজল (বিএনপি), মফিজুর রহমান (জাতীয় পার্টি), মোঃ হাছান (বিএনএফ), এবং মোঃ আমিন (ইসলামি আন্দোলন, বাংলাদেশ)।
কক্সবাজারÑ৪ (উখিয়াÑটেকনাফ) ঃ শাহীন আক্তার (আওয়ামী লীগ), শাহজাহান চৌধুরী (বিএনপি), মোঃ সালাহউদ্দিন (বিএনপি), আবুল মঞ্জুর (জাতীয় পার্টি) সাইফুদ্দিন খালেদ (এনডিএম), রবিউল হোছাইন (ইসলামি ঐক্যজোট), মোঃ শোয়াইব (ইসলামি আন্দোলন, বাংলাদেশ)।
Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh