শুক্রবার ১লা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম

জীবিকার জন্য নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক   |   মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮

জীবিকার জন্য নানা কাজে যুক্ত হচ্ছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বিভিন্ন কাজে যুক্ত হচ্ছেন। সরকারি নজরদারির মধ্যে থেকেই সামান্য পারিশ্রমিক বা কখনও মাছের ভাগের জন্য তারা বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরাও শুরু করেছেন। অনেকেই কাজ করছেন শুটকি পল্লীতে, কেউবা বিভিন্ন লবণের মাঠে কাজ নিয়েছেন। এসব কাজ থেকে সামান্য আয়ের পরিবারের সদস্যদের জন্য বাড়তি কিছু করার চেষ্টা করছেন রোহিঙ্গারা।
গত বছরের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালায় আরসা সদস্যরা। জবাবে ২৫ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। স্থানীয় বৌদ্ধদের সহায়তায় সেখানে বহু বাসিন্দাকে হত্যা ও ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়। জাতিসংঘ ওই অভিযানকে ‘জাতিগত নিধনের পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সেনাবাহিনীর নির্যাতনের ভয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় সাত লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক। তারা বাংলাদেশের কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের কাছের জেলে পল্লীর কাছেই শ্যামলাপুর শরণার্থী শিবির। এই শরণার্থী শিবিরে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গার বাস করেন। সেখানকারই রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ ইউসুফ এখন মাছ ধরার জন্য প্রতি পাঁচ দিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে পান। তিনি বলেন, ‘এখানে পালিয়ে এসে আমরা আমাদের জীবন বাঁচিয়েছি। তাই আমরা এখানে থাকতে পেরে খুশি।’
ইউসুফ জানান, তিনি তার ৯ মাসের অন্তস্বত্তা স্ত্রী সবুরা খাতুনকে নিয়ে পালিয়ে এসেছেন। তার আগে তিনি দুইমাস মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে বন্দি ছিলেন। নদী পার হওয়ার সময় তাদের তিন বছরের ছেলে ডুবে মারা যায়। তবে এখানে আসার পর মেয়ে রুকিয়ার জন্ম নিরাপদেই হয়।
শরণার্থীরা বৈধভাবে কাজ করতে না পারলেও শ্যামলাপুর শরণার্থী শিবিরের কেউ কেউ মাছ ধরার নৌকায় কাজ নিয়েছেন। অনেকে আবার নৌকা থেকে মাছ নামানোর কাজে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। রোহিঙ্গারা এই ধরনের নৌকায় করেই বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। শিবিরটির অন্যরা মাছের জন্য বরফের দলা ভাঙ্গার পাশাপাশি জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ করেও উপার্জনের ব্যবস্থা করেছে।
অভিবাসন বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘এক্সচেঞ্জ ফাউন্ডেশনে’র গবেষণায় বলা হয়েছে, শ্যামলাপুরের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে দুইজন রোহিঙ্গা তাদের পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির ওপর নির্ভরশীল। এছাড়া প্রতি ২০ জনের মধ্যে একজন রোহিঙ্গা তার পরিবারের প্রবাসী সদস্যের আর্থিক সহায়তা নিয়ে থাকেন। সংস্থাটি গত মার্চ মাসে বলেছে, শ্যামলাপুরের রোহিঙ্গাদের বেশিরভাগই অস্থায়ী বাসস্থানে বাস করে। তারা মাঝে মধে অবৈধ ও স্পর্শকাতরভাবে ভাল কর্মসংস্থানে যুক্ত হতে পারছে।
শ্যামলাপুরের রোহিঙ্গা নারীরাও পাশের নাজিরটেক শুটকি পল্লীতে কাজ জুটিয়ে নিয়েছেন। সেখানে তারা দৈনিক একশ থেকে ২০০ টাকা মজুরিতে কাজ করেন। প্রতিবছর শুটকি শিল্প প্রায় ২ কোটি মার্কিন ডলার আয় হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী ও সরকারি কর্মকর্তারা। প্রায় ২০০ একর এলাকাজুড়ে থাকা নাজিরটেক শুটকি পল্লীটিতে সেপ্টেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত ব্যস্ত মৌসুমে দৈনিক প্রায় একশ টন মাছ শুকানো হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাঠফাটা রোদের মধ্যে শুটকি পল্লীতে একজন রোহিঙ্গা নারী বড় কাঠের টেবিলের ওপর বিভিন্ন ধরনের মাছ আলাদা করার কাজ করছিলেন। একই সঙ্গে তিনি মাছি ও মশাও তাড়াচ্ছিলেন। আর অন্য নারীরা বাঁশের সঙ্গে মাছগুলো বেঁধে শুকাতে দিচ্ছেন।
শুটকি পল্লীতে কাজ করা হাসিনা বেগম প্রথমে কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পরে কাজের সন্ধান পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে শ্যামলাপুরে আসেন। হাসিনা বেগম তার পালিয়ে আসার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ‘মুখে তরবারির আঘাতে জখম হয়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মাটিতে পড়েছিলাম। আমার কয়েকজন প্রতিবেশি আমাকে তুলে নৌকায় নিয়ে আসে। আমরা নদী পার হয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে পৌঁছাই’। তরবারির আঘাতেই একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছেন তিনি।
হাসিনা বেগম তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, এই জীবনই ভাল। কারণ আমি মাছ শুকানোর কাজ করে উপার্জন করতে পারছি।’
রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের পাশাপাশি শিশুরাও নানা ধরনের কাজে যুক্ত হয়ে পড়ছেন। ভোর বেলায় তারা নৌকা ঢেলে পানিতে নামানো বা মাছ ধরতে সাগরে পাড়ি জমানো সব কাজেই যোগ দিচ্ছে শিশুরা। বিনিময়ে ছোট এক ব্যাগ মাছ পেয়েই খুশি এসব শিশুরা। অনেক সময় মাছের পরিবর্তে তাদের সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হয়।
৪৫ বছর বয়সী রোহিঙ্গা হাকিম আলী কাজ পেয়েছেন টেকনাফের একটি লবণের মাঠে। সেখানে প্রতি বস্তা লবণ বহণ করার জন্য তাকে ১০ টাকা করে দেওয়া হয়। প্রতিদিন তিনি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
জাল মেরামতের কাজ করছে এক রোহিঙ্গা শিশু হাকিম আলী বলেন, আট মাস আগে তিনি মিয়ানমারের বুথিডাং শহরের কাছে তার বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছেন। মিয়ানমার সেনারা তার এক ভাইকে হত্যা করেছে, আরেকজনকে জেলে দিয়েছে। এছাড়া তার ঘর-বাড়ি ও ফসলের মাঠে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। দেশে ফিরে গিয়ে তারা কী চান জানতে চাইলে হাকিম আলী বলেন, ‘আমরা ন্যায়বিচার ও মিয়ানমারে অবাধে চলাফেরার অধিকার চাই। মিয়ানমার সরকার যেদিন এই দাবি মানবে, সেইদিন আমি সেখানে যাবো।’ সূত্র: রয়টার্স।

Comments

comments

Posted ৬:৩৭ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com