| সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
দেশবিদেশ রিপোর্ট :
বিরক্তিকর এবং বিব্রতকরও বটে। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডাক্তারের চেম্বার গুলোতে ভীড় লেগে থাকে মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভদের (এম,আর)। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে রোগি বের হতে না হতেই ঘিরে ধরেন এম,আরগণ। কোলে বাচ্চা, এক হাতে ব্যাগ এবং আর এক হাতে প্রেসক্রিপশন নিয়ে নারী রোগি বেচারি ঔষধের দোকানে ছুটছেন-কিন্তু ততক্ষণে তাকে পথ আগলে ধরেন এম,আরগণ।
সেই প্রেসক্রিপশনে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কোম্পানীর ঔষধটি লিখলেন কিনা-তিনি কথা রাখলেন কিনা সেটাই তদারক করেন এম,আর। এরকম বিব্রতকর অবস্থা সবগুলো হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডাক্তারদের চেম্বারে চেম্বারেই বিরাজমান। হাসপাতালগুলোতে দিনের বেলায় গিজ গিজ করে এম,আরগনের ভীড়ে। এম,আরগন হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসা রোগিদের ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশনগুলোর ছবি নেয়ার কাজ করে থাকেন। এ সময় অসহায় রোগিদের করার কিছুই থাকে না।
গতকাল রবিবার দুপুর সাড়ে বারটার দিকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের উত্তর গেইটে এম,আরদের এরকম রোগি আটকিয়ে প্রেসক্রিপশনের ছবি নেয়ার ছবি ধারণ করা হয়।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কিছুকাল আগেও সারাদেশে ঔষধ কোম্পানীর সংখ্যা ছিল বড় জোর ৫০/৬০ টি। কিন্তু এখন কয়েকশ ঔষধ কোম্পানী। এসব কোম্পানীতে এম,আর এর সংখ্যাও অগণিত। আবার কোম্পানীগুলো বেশী রোজগারের জন্য তাদের উৎপাদিত ঔষধের বিক্রি বাড়াতে এম,আরদের সাপ্তাহিক ও মাসিক টার্গেট দিয়ে থাকে। তাই কোম্পানীর টার্গেট পূরণের জন্য এম,আর বেচারাগন তৎপর থাকেন।
অভিযোগ উঠেছে, কোম্পানীগুলো তাদের উৎপাদিত ঔষধের মান যাই হোক সেটা চিন্তা করে না। উল্টো বেশী মুনাফার জন্য কোম্পানীগুলো ডাক্তারদের উপর প্রভাব খাটাতে ব্যস্ত থাকে যাতে স্ব স্ব উৎপাদিত ঔষধ রোগিদের প্রয়োগ করার জন্য। বিশেষ করে অখ্যাত ঔষধ কোম্পানীগুলো এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী তৎপর থাকে। তারা তাদের নি¤œমানের ঊৎপাদিত ঔষধ বিক্রির জন্য অসাধুতার সর্বনি¤œ পর্যায়ে নেমে পড়তেও চিন্তা করেনা বলেও অভিযোগ রয়েছে। ফলে এসব নিন্মমানের ঔষধে রোগিকে ভুগতে হয় দীর্ঘকাল। যত বেশীদিন ভুগবে রোগি ততই লাভ নিন্মমানের ঔষধ উৎপাদনকারিদের।
এক সময় এম,আরগন চেম্বারে চেম্বারে গিয়ে ডাক্তারদের নিকট ঔষধের স্যাম্পল দিয়ে আসতেন। সেই স্যাম্পল ডাক্তারগণ ভালভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রয়োগ করতেন রোগিদের। কিন্তু এখন সময় উল্টে গেছে। যে কোন কিছুর বিনিময়ে কোম্পানীগুলো ডাক্তারদের ঔষধ লিখাতে এক প্রকার বাধ্য করান। এজন্যই এম,আর গণ সর্বত্র বসে থেকে সংশ্লিষ্ট ডাক্তার কোম্পানীর ঔষধ লিখে দিয়েছে কিনা তা তদরকিতে থাকেন। এমনকি প্রতিজন রোগির ব্যবস্থাপত্র মোবাইলে ছবি ধারণ করে নেন এম,আরগণ।
বিষয়টি আপাত দৃষ্টিতে তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে না হলেও অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসছে অনেক তথ্য। যেসবে বিব্রত হতে হয়। তদুপরি মানুষের সবচেয়ে দুর্বলতার স্থানটি হচ্ছে চিকিৎসা জগত। যে জগতে রয়েছে জীবন বাঁচানোর সার্বক্ষণিক এক যুদ্ধ। প্রতিনিয়ত বাঁচা-মরার প্রশ্নটিই যেখানে বড় বিষয়। এমন এক ষ্পর্শকাতর এবং মানবিক জগতটিকে ভেজাল, অসততা, অসাধুতা, মানবিহীন, সর্বোপরি কলংকিত করা থেকে বিরত থাকার তাগিদ সচেতন লোকজনের।
এডিবি/জেইউ।
Posted ১২:৩৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১
dbncox.com | ajker deshbidesh