শুক্রবার ৯ই জুন, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২৬শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম
শিরোনাম
এনজিও কর্মীদের ছুটি বাতিল

জলকাদায় একাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প

রফিক মাহমুদ,উখিয়া   |   শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮

জলকাদায় একাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্প

টানা বর্ষণে ভয়াবহ পাহাড়ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন উখিয়া-টেকনাফে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। আর কয়েকদিন বর্ষণ অব্যাহত থাকলে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে পাহাড়ধসে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে পারে। পাহাড়ধসের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত হাজার হাজার রোহিঙ্গারা। গত বছরের ২৫ আগস্টের পর উখিয়া ও টেকনাফের ৫ হাজার একর বনভূমি দখল করে পাহাড় ও পাহাড়ের পাদদেশে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা ৭ লাখেরর অধিক রোহিঙ্গা। এর আগে আসা আরো ৩/৪ লাখ রোহিঙ্গাসহ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস এখন উখিয়া-টেকনাফে অবস্থান করছেন। বৃষ্টির কারণে তাদের জীবনে নেমে এসে চরম বিপর্যয়। রাখাইনে বর্মীসেনা, বিজিপি ও রাখাইন উগ্রবাদীদের নির্যাতনে এদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা এবার তাদের বেঁচে থাকার লড়াই করছে প্রকৃতির বিরুদ্ধে। এদিকে টানা বর্ষণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর অধিকাংশ পাহাড়ে (এরপর পৃষ্ঠা-২ ঃ কলাম- ৫ )
রোহিঙ্গা ক্যাম্প
ফাটল দেখা দিয়েছে। এসব এলাকায় গত ৫ দিনে প্রায় অর্ধশত ছোট-বড় পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৪ শতাধিক ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। মারা গেছেন এক শিশুসহ ২ জন। আহত হয়েছেন আরও অর্ধশতাধিক। ক্যাম্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছে উখিয়ার কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, বালুখালী, ময়নার ঘোনা, জামতলী, থাইংখালী ও টেকনাফের উংচিপ্রাং-এর ক্যাম্প। মধুরছড়া ১৭নং ক্যাম্পের আশ্রিত রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ, শফিকুর রহমান জানান, ৫ দিনের বৃষ্টিতে এখানকার রোহিঙ্গারা ঝুপড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। পানিবন্দী অবস্থায় অনাহারে অর্ধাহারে স্ত্রী-পুত্র ও পরিবার-পরিজন নিয়ে দিন যাপন করতে হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৪ শতাধিক ঝুপড়ি ধসে পড়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটতে পারে। এতে ব্যাপক প্রাণহানি হকে পারে। রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবায় নিয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেডক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (আইএফআরসি) থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল বুধবার জানানো হয়েছে, গত ৫ দিনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গড়ে ১৩৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রোহিঙ্গাদের জীবন। টয়লেট ও খাবার পানির গভীর সংকটে জীবন-যাপন করছেন তারা। জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আইএফআরসি তার ডিআরইএফ তহবিল থেকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঙ্ক সরবরাহ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৃষ্টিপাতে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও অফিসিয়ালি প্রকাশ করা হয়নি। তবে রেডক্রস এবং রেডক্রিসেন্ট কর্মী এবং স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কিছু এলাকা বর্তমানে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে। আর এতে করে ক্যাম্পগুলোর ৬ লাখ ৯৩ হাজার মানুষ কঠিন সংকটের ভিতর দিয়ে সময় অতিবাহিত করছেন। চলতি সপ্তাহে বৃষ্টিতে নড়বড়ে হয়ে থাকা পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানের ভূমিধস হয়। এতে ক্যাম্পের অসংখ্য টয়লেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ বিষয়ে আইএফআরসির কক্সবাজার উপ অফিসের প্রধান সঞ্জীব কাফে বলেন, ঢলের সঙ্গে পাহাড় থেকে কাঁদা-মাটি ও আবর্জনা মিশ্রিত পানি দ্রুত গতিতে নিচে নেমে আসে। পাহাড়ি ঢলের পানি, কাঁদামাটি ও টয়লেটের ময়লা একসঙ্গে মিশে ঢালু স্থান বেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসার কারণে নিচে থাকা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসবাসের স্থানগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্ষা শুরু হওয়ার পর পানিবাহিত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই রোগসমূহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। অনেক জায়গায় বালুরবস্তা ও প্রতিরোধক দেয়াল ধসে পরা বিভিন্ন উদ্ভিদ ও গাছের সাথে নেমে আসা পানি ঠেকানো যায়নি। ফলে সেগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, যেহেতু পাহাড়ধসের আশঙ্কা ও পূর্বাভাস দেওয়া হচ্ছে, এই ধস হলে বিপুল পরিমাণ জীবন ও স্থাপনার ক্ষতি হবে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। বায়ু ও বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সাহায্য করার জন্য, সোমবার বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, আইএফআরসি এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো জরুরি সরঞ্জাম বিভিন্ন উপকরণসহ জরুরি আশ্রয় মেরামতের কিট বিতরণ শুরু করেন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ পরিস্থিতি মোকাবেলায? তাদের কর্মীদের ঈদের ছুটিও বাতিল করেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্ষা মৌসুম শুরু হবার কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গত ৯ জুন থকে ১৩৮ মিলিমিটার করে বৃষ্টিপাত হয়েছে। একই সাথে সেখানে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাসও দেওয়া হয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সেখানে পানিবাহিত রোগের প্রার্দুভাবও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উখিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নিকারুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন, অধিকাংশ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পাহাড় কেটে বা পাহাড়ে অবস্থিত। এসব এলাকায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। গত কয়দিনে পাহাড় ধসে পড়ে বেশ কিছু ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি বলেন, পাহাড়ধসের বেশি ঝুঁকিতে থাকা ঘর চিহ্নিত করা হয়েছে। এ ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ ঘর সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে কিছু মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে

Comments

comments

Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৫ জুন ২০১৮

dbncox.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(584 বার পঠিত)

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম
প্রধান কার্যালয়
প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত
ফোন ও ফ্যাক্স
০৩৪১-৬৪১৮৮
বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন
01870-646060
Email
ajkerdeshbidesh@yahoo.com