দেশবিদেশ রিপোর্ট | শনিবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৮
এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র ইমরুল কায়েস (১৯) কে নিয়ে দাদা ও নানা বাড়ীতে আনন্দ-উৎসবের যেন শেষ নেই। ইমরুল একটি ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তাও ক্ষমতাসীন দলেরই ছাত্র সংগঠনের নেতা। এ জন্য তাকে নিয়ে দু’টি পরিবার মেতে উঠেছে উৎসব-আনন্দে। ছাত্রলীগ নেতা নির্বাচিত হবার খুশিতে পান দোকানী নানা একেবারে ৫ হাজার টাকা নিয়ে মালা গেঁথে নাতির গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তারপর তাকে অনেকটুকু রাস্তায় হাঁটিয়ে সম্বর্ধণা জানানো হয়। জানানো হয় ফুলেল শুভেচ্ছা। গত এক সপ্তাহ ধরে দু’টি পরিবারে এমন উৎসব চলছে।
রাজনীতির মাঠের এমন ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনাটি কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের। সীমান্তের ইয়াবা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সন্তানরা ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় কোন পদ পদবি পেলে এরকম বিরল সম্বর্ধণা দেয়ার কথা। কিন্তু এবার হয়েছে তার উল্টোটি। অর্থাৎ ইমরুলের দাদা ও নানা পরিবার এলাকায় নির্ভেজাল আওয়ামী লীগ পরিবার হিসেবে পরিচিত। এলাকার লোকজনের অভিযোগ, সীমান্তে ইয়াবা সংশ্লিষ্ট পরিবারের সদস্যরা নানা কৌশলে ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় ভিড়ার লাইনে কোন ভাবেই টিকে থাকতে পারছেন না প্রকৃত আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্যরা।
টেকনাফ বাস ষ্টেশনের পান দোকানী জাফর আলমের (৫৯) ৬ কন্যা ও ৩ পুত্রের পরিবারে নাতি ইমরুল কায়েস এ প্রজন্মের মধ্যে সবার বড়। পান দোকানী জাফর আলম বলেন-‘আমার পরিবারের সদস্যরা নৌকা প্রতীকের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। কিন্তু টেকনাফ সীমান্তে এখন হাইব্রিড আওয়ামী লীগের ছড়াছড়ি। দলীয় নেতৃত্বের পদবিও প্রায় এসব হাইব্রিডের দখলে।’ তিনি আফসোস করে বলেন, এসব হাইব্রিডের ভীড়ে দলে তাদের স্থান নেই। অথচ এসব হাইব্রিডরা দলের দুর্দিনে আবারো ফিরে যাবে তাদের পুরানো স্থানে।
টেকনাফ সীমান্তের জাফর আলম আরো জানান, তার আপন চাচা সুবেদার বাদশা মিয়া ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান থেকে ইপিআর এর আরো অন্যান্যদের সাথে পালিয়ে এসে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বাদশা মিয়া। গোটা পরিবারে এই প্রথম জাফরের নাতি ইমরুল ছাত্রলীগের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় তাদের আনন্দের যেন সীমা নেই। পান দোকানী জাফর বলেন, টেকনাফ সদর ইউনিয়নের ছাত্রলীগের কাউন্সিলে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে তার নাতি সাধারণ সম্পাদক হিসাবে প্রার্থী হন। একই পদের জন্য আরো তিনজন ছিলেন প্রতিদ্বন্ধি।
নাতি ছাত্রলীগের নেতা নির্বাচিত হওয়ায় পান দোকানী জাফর তার নতুন পল্লান পাড়া এলাকার যত নারী রয়েছে তাদের সবাইকে রাস্তায় বের করে লাইন করে দাঁড় করান। তারপর নাতি ইমরুলের গলায় ৫ হাজার টাকার নোটের মালা পরিয়ে দিয়ে সেই রাস্তায় সম্বর্ধিত করা হয়। নানা জাফর আলম জানান, এসময় নারীরা নেচে গেয়ে নির্বাচিত ছাত্রলীগ নেতাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এমনকি শত শত পটকাও এসময় ফুটানো হয়। প্রতিদিনিই ভাল খাবার-দাবরও চলছে। নানা জাফর বলেন, উৎসব আরো কিছুদিন চলবে।
ইমরুলের বাবা গুরা মিয়া টেকনাফ বাজারের একজন হার্ডওয়ার দোকানী। তিনিও ছিলেন টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি গতকাল শুক্রবার সকালে টাকার মালা গলায় পরানো পুত্র ইমরুলের ছবিটি নিজ (গুরা মিয়া) ফেসবুকের আইডিতে পোষ্ট করেন। গুরা মিয়া জানান-‘ইমরুলের নানার পরিবারের মত আমারটাও নির্ভেজাল আওয়ামী লীগার পরিবার হিসেবে পরিচিত। আমার পরিবারেও ইমরুল হচ্ছে সবার বড় সন্তান। তাই সে ওয়ার্ড ছাত্রলীগ নেতা নির্বাচিত হওয়ায় আমরাও আনন্দিত।’
ইমরুল কায়েস চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের ছাত্র। গতকাল শুক্রবার আলাপকালে ইমরুল জানায়-‘গত ২৯ সেপ্টেম্বর টেকনাফ সদর ইউনিয়নের কাউন্সিল অনুষ্টিত হয়। কাউন্সিলে আমি ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হই। এরপর থেকেই আমার দাদা ও নানা পরিবারের সদস্যরা আনন্দে মেতে উঠেন।’ ইমরুল আরো জানায়,তার নানা ৫ হাজার টাকা ছাড়াও প্যান্ট-শার্ট এবং নানী তাকে একটি ঘড়ি দিয়েছেন। টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বাশার এ প্রসঙ্গে জানান, দলের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করা পরিবার দু’টির এ প্রজন্মের একজন সদস্য দলের ছাত্র সংগটনের একটি পদ পেয়েই এরকম আননেন্দ মেতে উঠেছেন। ###
Posted ১:৩৯ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh