মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
বানের পানিতে ভাসছে চকরিয়া। চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়কের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। বাটাখালী থেকে তোলা ছবি।
টানা বর্ষণে সৃষ্ট বানের পানিতে ভাসছে চকরিয়া ও পেকুয়া। উজানের পাহাড়ি এলাকা থেকে ঢল নামতে শুরু করে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে। গতকাল মঙ্গলবার একটি পৌরসভাসহ দুই উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নে অন্তত ৩০ হাজারের বেশী বসতঘরে পানি উঠেছে। গ্রামীন সড়কগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে। উপজেলার অভ্যন্তরীণ জিদ্দবাজার- মানিকপুর সড়ক, চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়ক, কেবি জালাল উদ্দিন সড়কসহ কয়েকটি আঞ্চলিক সড়কের উপর দিয়ে ঢলের পানি প্রবাহিত হচ্ছিল মঙ্গলবার সকাল থেকে। ফলে গ্রামীন সড়কে যান চলাচল একেবারে বন্ধ, আঞ্চলিক সড়কে জীবন ঝুঁকি নিয়ে অল্প সংখ্যক গণপরিবহণ চলছে। বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে ঢলের পানি প্রবেশ করেছে। চকরিয়া পৌরসভার একাংশ পাহাড়ি ঢলে ও বৃহৎ অপর অংশ জলাবদ্ধতায় পানিবন্দী রয়েছে হাজারো পরিবার। এই দূর্যোগকালীন সময়ে সাপপোকা আতংকসহ ঘরের মালামাল সরাতে পারছেনা শনিবার রাত ২টা থেকে টানা বিদ্যুৎ না থাকায়। এদিকে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাতামুহুরী ব্রীজে রশি টাঙ্গিয়ে লাকড়ি ধরার সময়ে এক যুবক পানিতে পড়ে নিখোঁজ হয়। রাত ৯টা পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি।
সরেজমিন ঘুরে দখো গেছে, পাহাড়ি ঢলের প্রবেশমুখ সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়ন ও কাকারা ইউনিয়ন ৪-৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। কাকারা ইউপি চেয়ারম্যান শওকত ওসমান মাঝেরফাঁড়ি পয়েন্টে মাতামুহুরী নদীর পাড়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় বানের ভয়াবহতা থেকে অনেকাংশে রক্ষা পেয়েছে কাকারাবাসী। তবে পাহাড়ি এলাকায় বর্ষণ অব্যাহত থাকলে বেড়িবাঁধ ভাঙ্গার আশংকা রয়েছে। জিদ্দবাজার-মানিকপর সড়কের কয়েকটি অংশের উপর দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেতে উপচে আসা ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় পাড়াগাঁয়ে প্রবেশ করছে পানি। এছাড়া চকরিয়ার লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, বরইতলী, হারবাং, সাহারবিল, চিরিঙ্গা, পূর্ব বড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, কোনাখালী, ফাঁশিয়াখালী, বদরখালী, ডুলাহাজারা, খুটাখালী ও পেকুয়ার সদর, উজানটিয়া, মগনামা, রাজাখালী, টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া ইউনিয়নের তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এসব ইউনিয়নের নিচু গ্রামগুলোতেই পানি উঠেছে অধিক। অন্যদিকে পৌরসভার বাসিন্দা জিয়াউদ্দিন ফারুক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দাবি সত্বেও দীর্ঘদিন ধরে পর্যাপ্ত নালা নির্মাণ না করার পাশাপাশি পূর্ব থেকে নালা পরিস্কার না করায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ২নং ওয়ার্ড়ের শমসের পাড়াসহ নিকটস্থ মহল্লাগুলোর সিংহভাগ ঘরে পানি উঠেছে। এছাড়া বাটাখালী ব্রীজ থেকে থানার মোড় হয়ে মগবাজার পর্যন্ত জলাবদ্ধতার পানিতে তলিয়ে আছে। টানা বিদ্যুৎ না থাকার ব্যাপারে শনিবার রাতে জানতে চাইলে পল্লী বিদ্যুৎ চকরিয়া জোনাল অফিসের এজিএম বলেন, ৩৩ কেভি ফিড়ার সঞ্চালন লাইন নষ্ট হওয়ায় পুরো চকরিয়ায় বিদ্যুৎ দেয়া যাচ্ছেনা। ওই লাইস ঠিক করে ঘন্টার মধ্যেই বিদ্যুৎ দেয়া হবে। কিন্তু মঙ্গলবার রাত ১০টা পর্যন্তও বিদ্যুৎ পায়নি চকরিয়ার গ্রাহকরা। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেছেন, আমি দুপুরে বরইতলী ও কাকারা ইউনিয়নে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি। অফিসে ফেরার পর বন্যাকবলিত পরিবারগুলোকে প্রাথমিকভাবে শুকনো খাবার দিতে সকল চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছি।
চকরিয়ার বন্যার ব্যাপারে জেলা প্রশাসককে অবহিত করে ত্রাণ বরাদ্দ চেয়েছি। এরইমধ্যে ঈদ উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। এই ত্রাণ বন্যাকবলিত মানুষকে দেয়ার চেষ্টা করছি। চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব জাফর আলম বলেন, বন্যাকবলিত কোন মানুষকেই না খেয়ে থাকতে হবেনা। সরকারী বরাদ্দ আসতে বিলম্ব হলে আমি নিজেই প্লাবিত এলাকায় খাদ্যসামগ্রী পৌঁছিয়ে দেব।
Posted ১:৩০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১২ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh