মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া: | মঙ্গলবার, ২৬ জুন ২০১৮
চকরিয়া-পেকুয়ার পাহাড়ে বসবাসকারী অন্তত ১৫ হাজার মানুষ মৃত্যু ঝুঁিকতে রয়েছে। টানা টানা কয়েকদিনের বৃষ্টির ফলে পাহাড় ধ্বস, মাটি ধ্বস হওয়ার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে দরিদ্র শ্রেণীর বিশাল একটি গোষ্টী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে আসলেও তাদের সরিয়ে নিতে বা পূর্ণবাসনের কোন ব্যবস্থা করেনি কেউ। ফলে চলতি বর্ষা মৌসুমে বড় ধরনের দূর্ঘটনার আশংকা করছে সচেতন মহল। তবে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে পাহাড়ে যারা অতি ঝুকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে তাদের সরে যেতে নিদের্শ দেয়া হয়েছে। পাহাড়ে বসবাসকারীদের সরিয়ে আনতে বনবিভাগের কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মরতুজা বেগম (৩২) নামের এক গৃহিনী। দিনমজুর স্বামী ওয়াহিদুল ইসলাম ও দুই সন্তান নিয়ে পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের আধার মানিক নামের পাহাড়ি এলাকায় তার বসবাস। স্বামীর আয়ে চলতি বছরের শুরুর দিকে বাঁশের বেড়া ও টিন দিয়ে নির্মাণ করেছিলেন নতুন ঘর। কিন্তু কয়েকদিনের টানা বর্ষণের কারণে আধার নেমে আসে তার জীবনে। পাহাড় ধ্বসে নিমিষেই মাটিচাপা পড়ে
তার সুন্দর সাজানো ঘর। এসময় ভাগ্যক্রমে প্রাণে বাঁচলেও আহত হয় মরতুজা। পরে পাহাড় ধ্বসে বিধ্বস্ত বসতবাড়ি থেকে স্থানীয়দের সাহায্যে উদ্ধার হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন শিলখালী ইউনিয়নের মাঝের ঘোনা এলাকার বাপের বাড়িতে। কিন্তু বাপের বাড়ীতে কতোটা ঝুঁকিমুক্ত তা নিয়েও যথেষ্ট সন্দিহান তিনি নিজেই। কারণ তার বাপের বাড়িও পাহাড়ের পাদদেশে নির্মিত। তাই পুরো পরিবার নিয়ে চরম আতংকে রয়েছে সে। ঝুঁকিতে রয়েছে একই বাড়িতে বসবাসকারী তার আরো দশ নিকটাত্মীয়। এভাবেই এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি এ শঙ্কার কথা জানান তিনি। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ঘরে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে বিশাল একটা গোষ্ঠী পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করে আসলেও তাদের সরিয়ে নিতে বা পুর্নবাসন করতে উদ্যোগী নয় স্থানীয় প্রশাসন। তাই বড় ধরণের কোন দুর্ঘটনা ঘটলে, এর দায় এড়াতে পারবেন না তারা। এমনকি এই প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধ্বসের আশংকা থাকা সত্বেও তাদের সরিয়ে নিতে কোন প্রকার উদ্যোগ বা বসবাসকারীরা সরে যেতে সচেতনতা তৈরি করা হয়নি। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পেকুয়া উপজেলার টইটং ইউনিয়নের সংগ্রামের জুম, বটতলীর গহীন অরণ্য মধুখালী, হারখিলারঝিরা, আধার মানিক, পুর্ব ধনিয়াকাটা, বারবাকিয়া ইউনিয়নের আবাদি ঘোনা, পুর্ব পাহাড়িয়াখালী, চাকমার ডুরি, ছনখোলার জুম ও শিলখালী ইউনিয়নের জারুরবুনিয়া, সাপের গাড়া, মাদাবুনিয়া, মাঝের ঘোনা, চিতার ঝিরি, নাপিতার ঘোনা, সবুজ পাড়া, ঢালার মুখ, পুর্ব শিলখালীতে অন্তত ৫ হাজার মানুষ ও চকরিয়া উপজেলার বরইতলী ইউনিয়নের মছন্যাকাটা, বানিয়ারছড?া, মাহমুদনগর, পাহাডতলী, ভিলেজার পাড়া, হারবাং ইউনিয়নের মুসলিমপাড়া, শান্তিনগর, ফইজ্যার ডেবা, ল¤॥^া ঘোনা, কৈয়ারবিল ইউনিয়নের ইসলামনগর, সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের উত্তর মানিকপুর, খুটাখালী ইউনিয়নের মেধাকচ্ছপিয়া নয়াপাড়া, কাকারা ইউনিয়নের বার আউলিয়া নগর, শাহ ওমরনগর ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ছগিরশাহকাটা, ছায়েরা খালী, ডুলাহাজারা ও বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায় অন্তত ১০ হাজার মানুষ চরম ঝুঁকিতে বসবাস করছে। গত এক যুগ ধরে এসব মানুষ পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করছেন। কক্সবাজারের উত্তর বন-বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোরশেদ বলেন, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার যে সমস্ত পাহাড়ি এলাকায় বসবাসকারী রয়েছে তাদের একটি তালিকা তৈরী করা হয়েছে। ওই তালিকা ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। পাহাড় ধ্বসের ঝুঁকি থেকে এসব পরিবারকে উচ্ছেদে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে বনবিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হবে। সুরাজপুর-মানিকপুর ইউপি চেয়ারম্যান আজিমুল হক জানান, পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বেশির ভাগ লোক দরিদ্র শ্রেণির। এরা অভাব-অনটনে জর্জরিত হয়ে ও নদী ভাঙনের শিকার হয়ে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ে বসবাস করছে। তারপরও তাদের জীবন বাঁচাতে পাহাড় থেকে সরে এসে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়ার জন্য বলা হয়েছে। বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, আমার এলাকার ৫০ শতাংশ লোক পাহাড়ে বসবাস করে। এরমধ্যে যেসমস্ত এলাকা ঝুকিপূর্ণ রয়েছে সেসব এলাকার লোকজনকে সরে আসার জন্য বলা হয়েছে। এব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকার মেম্বারদের সার্বক্ষণিক নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সাথেও এব্যাপারে সার্বক্ষণিক যোগযোগ রয়েছে এবং তিনি বিভিন্ন ধরনের নির্দেশনা দিচ্ছেন। পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুব-উল করিম বলেন, পাহাড়ে অতি ঝুঁকিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছে তাদের সরিয়ে নেয়ার জন্য বনবিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বনবিভাগ এই ব্যাপারে কাজ করছে। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুদ্দীন মুহাম্মদ শিবলী নোমান বলেন, যেসব ইউনিয়নে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস রয়েছে, সেসব ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এব্যাপারে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে বলেও জানা তিনি।
Posted ১২:১০ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৬ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh