নিজস্ব প্রতিবেদক | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
চকরিয়ায় এবারও ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষকেরা। গত তিনদিনের প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরসহ উপজেলার অন্তত ১২টি ইউনিয়নের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে বানের পানিতে। এতে বিস্তীর্ণজোড়া রকমারী সবজি ও ধানক্ষেতসহ উৎপাদিন ফসল গোলায় তুলতে না পারার শঙ্কায় কৃষকের মাথায় হাত উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার সরজমিন বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে এই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে।
জানা গেছে, গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে বন্যা আর পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের সবজি ভা-ার মাতামুহুরী নদীর দুই তীর এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের অন্তত ১০ হাজার একর জমিতে রকমারী সবজির আবাদ করেন। এসব সবজি ক্ষেত থেকে তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কিন্তু আকষ্মিক ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে কয়েক হাজার কৃষকের সবকিছুই ছারখার করে দিয়েছে। এখনো ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকায় মাঠ থেকে সামান্য ফসলও ঘরে তুলতে না পারার কথা জানিয়েছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চকরিয়া উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় কয়েক হাজার কৃষক রকমারী সবজির আবাদ করেন। কিছু কিছু সবজি ক্ষেত থেকে তুলে বাজারেও নিয়ে যাচ্ছেন। এই অবস্থায় লাগাতার ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যায় বেশি ক্ষতির সম্মুখিন হবে কৃষকেরা।
চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের হালকাকারা গ্রামের সবজি চাষি আবদুর রহমান জানান, দুই একর জমিতে কাঁকরোল, তিত করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসাসহ বিভিন্ন রকমারি সবজির আবাদ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয়েছে প্রায় দুই লাখ। কিন্তু এসব সবজি তুলে বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই ভয়াবহ বন্যায় সবকিছু ছারখার করে দিয়েছে।
একই গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন কৃষকও জানালেন একই তথ্য। তারা জানান, হালকাকারার কৃষকেরা এবার মাতামুহুরী নদীতীরের প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিনে চাষ করেছেন কাঁকরোল, তিত করলা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, বরবটি, শসাসহ বিভিন্ন রকমারি সবজির। ইতোমধ্যে ফলন এসেছে। বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের কম করে হলেও কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীতীরের সবজিক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক।
চকরিয়া পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের সিংহভাগ মানুষ মাতামুহুরীর চরে সবজি ফলিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রথমবারের এই বন্যায় কম করে হলেও তিন শতাধিক সবজি চাষি ক্ষতির শিকার হয়ে পথে বসেছেন।’ কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. শওকত ওসমান বলেন, ‘কাকারা ইউনিয়ন মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত। তাই শুষ্ক ও বর্ষা মৌসুমে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ব্যাপকভাবে সবজিচাষ হয় এখানে। বন্যার তা-বে সবজি চাষির এখন মাথায় হাত উঠেছে।
বরইতলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার বলেন, ‘বরইতলী ইউনিয়নের সিংহভাগ মানুষ কৃষিনির্ভর। বিশেষ করে মাতামুহুরী নদীর দুইতীরে ব্যাপক সবজির আবাদ করেন এখানকার কয়েক হাজার কৃষক। এবারের বন্যার প্রথম ধাক্কাতেই সর্বনাশ ঘটেছে এসব কৃষকের।’
তবে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আতিক উল্লাহ বলেন, ‘বর্ষাকাল হওয়ায় সবজির আবাদও কম হয়। এর পরও যেসব এলাকার সবজি চাষি ক্ষতির শিকার হয়েছেন তাঁদের ব্যাপারে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। পানি নেমে গেলে পুরোপুরি ক্ষতির চিত্র পাওয়া যাবে। বন্যায় যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন তাদের তালিকা তৈরি করা হবে। এর পর নতুন করে বীজ সরবরাহসহ নানা প্রণোদনা দেওয়া হবে।’
Posted ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh