দেশবিদেশ রিপোর্ট | মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
বাংলাদেশের এক বছরের বাজেটের ৭০ ভাগের সমান টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে কক্সবাজারে। এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রায় ১৩ হাজারের একরের চেয়েও বেশি ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চলমান আছে। ভূমি অধিগ্রহণের টাকা পেতে মারাত্মক হয়রানিতে পড়তে হয় ক্ষতিগ্রস্তদের। ভূমি অধিগ্রহণ শাখার দরজায় দরজায় ঘুরে ক্লান্ত হয়ে যায় তারা। এমনকি অনেক সময় মধ্যস্বত্বভোগীরাও ফায়দা লুটে। কিন্তু আর এখন সেই সময় নেই। ভূমি গ্রহণে হয়রানি রোধ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি, দালালদের দৌরাত্ম দমন ও সময় অপচয় কমাতে বিশেষ অ্যাপস সেবা চালু করেছে জেলা প্রশাসন। এই মোবাইল অ্যাপস ব্যবহার করে জমির ক্ষতিগ্রস্তরা পাবেন ভূমি অধিগ্রহণ সেবা। এরফলে আর অফিসে অফিসে ধর্ণা দেওয়ার প্রয়োজন থাকবে না। শুধুমাত্র ক্ষতিপূরণের চেক নেওয়ার সময়ই অফিসে আসতে হবে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের। ‘হ্যালো ডিসি কক্সবাজার’ নামে বিশেষ এই অ্যাপস নির্মাণে সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি হয়রানিতে পড়ছে। কিন্তু এই হয়রানি এবং দুর্ভোগ কমাতে উপায় খোঁজছিলাম ডিসি স্যার এবং আমি। পরে মোবাইল অ্যাপস তৈরীর বিষয়টি মাথায় আসে। এই অ্যাপসটি পুরোপুরি চালু হলে কাজের জট যেমন কমে যাবে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা হয়রানি থেকে রেহায় পাবেন। এই অ্যাপসটি চলতি সপ্তাহে বেজার (বাংলাদেশ ইকোনোমিক জোন) একটি প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ কার্যক্রমের মাধ্যমে শুরু হবে। শিগগিরই সব প্রকল্পের সেবা এই অ্যাপসের আওতায় আসবে।’ তিনি আরও বলেন, একজন অধিগ্রহণকৃত জমির মালিক ঘরে বসেই অ্যাপসের মাধ্যমে আবেদন করতে পারবেন। সঙ্গে প্রয়োজনী কাগজপত্রাদি সংযোগ করে দিতে পারবেন। এরজন্য অপশন রয়েছে অ্যাপসে। পরে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আবেদনকারীর মোবাইলে এসএমএস চলে যাবে। ওই আবেদনে কোন ত্রুটি থাকলে সেটিও এসএমএস এর মাধ্যমে জানানো হবে সেবা গ্রহীতাকে। কাগজপত্রে কোন ত্রুটি থাকলেও জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় আসার দরকার হবে না। পূণরায় অ্যাপসের মাধ্যমে ভূল সংশোধন করা যাবে। প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই প্রতিমুহুর্তে এসএমএস আর মাধ্যমে আপডেট পাবেন এবং জানতে পারবেন সেবাপ্রার্থীরা। সোমবার সকালে হিলটপ সার্কিট হাউজের মিলনায়তনে ‘হ্যালো ডিসি কক্সবাজার’ নামের এই অ্যাপসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম। প্রশাসক মো. কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল কর্মকর্তা খুরশিদ আলম, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক গুলশান কামাল, কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক কাজী আবদুর রহমান, মোহাম্মদ মাহিদূর রহমান ও আশরাফুল আবছার, সদরের ইউএনও হাবিবুল হাসান, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা শাখাওয়াত হোসেন, সদরের এসিল্যান্ড নাজিম উদ্দিন প্রমুখ। এসময় ‘ওয়েবস অব কক্সবাজার’ নামে আরও একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করা। এই অ্যাপসের মাধ্যমে পর্যটকেরা পর্যটন সংশ্লিষ্ট যাবতীয় সেবা পাবেন।
মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, অ্যাপস দুটি অত্যন্ত সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেসব মানুষের জমি অধিগ্রহণের আওতায় আনতে হয় তারা খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু সেই মানুষ গুলো ক্ষতিপূরণের টাকা নিতে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হয়, তাহলে এরচেয়ে পরিতাপের আর কিছু নেই। এই অ্যাপসটি চূড়ান্তভাবে চালু হলে সেবাপ্রার্থীরা অনেক বেশি উপকৃত হবে। তিনি আরও বলেন, অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে অধিগ্রহণ কার্যক্রমে স্বচ্ছতা থাকবে। কারণ আবেদনটি কোন সময়ে কোন অবস্থায় সেবা প্রার্থীরা সব সময় জানতে পারবেন। আর মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্মও কমে যাবে। জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারে আটটি মেগা প্রকল্প এবং ছোটবড় মিলিয়ে ৫৪টি সহ মোট ৬২টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরমধ্যে মেগা প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ১০ হাজার একর আর অন্য ৫৪ টি প্রকল্পে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে ৩ হাজার একর। এরফলে অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের টাকা বিতরণে ধুম পড়েছে জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায়। বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। ‘হ্যালো ডিসি কক্সবাজার’ ও ‘ওয়েবস অব কক্সবাজার’ নামে অ্যাপস দুটি নির্মাণে কারিগরি সহযোগিতা করেন ‘দি টেক হোমস’ নামে কক্সবাজারের একটি আইটি প্রতিষ্ঠান। শিগগিরই গুগল প্লে স্টোরে আপলোড হবে অ্যাপস দুটি।
দেশবিদেশ /২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮/নেছার
Posted ১:১৪ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh