সেলিম উদ্দীন,ঈদগাঁহ। | শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০
চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী কেরানীঘোনার চিংড়ি ঘের ইজারাদারদের চরম গাফেলতির কারনে পানি নিষ্কাষনের (পলবোট) ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় আড়াইশ কানি লবণ মাঠ।
এতে করে শতাধিক লবণ চাষীর অর্থিক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট লবণ চাষীরা এ ঘটনায় চিংড়ি ঘের ইজারাদারদের দুষছেন।
তারা বলছেন কেরানিঘোনা চিংড়ি ঘের সংশ্লিষ্টদের কারনে জোয়ারের পানিতে পলবোট ভেঙ্গে লবণ মাঠ তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে প্রায় আড়াইশকানি লবণন মাঠের উৎপাদিত ১২ হাজার মন লবণ।
ফলে লবণ চাষীরা চরম হতাশ মনে খালি হাতে বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
গত বৃহষ্পতিবার জোয়ারের সময় কেরানীঘোনা চিংড়ি ঘের বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশে পানি নিষ্কাষনের পলবোট ভেঙ্গে ঘটে এ ঘটনা।
এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ লবণ চাষী ও বর্গা চাষীরা কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে সংশ্লিষ্ট ঘের ইজারাদার ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড বাসিন্দা নুরুল আজিম, সাবেক মেম্বার আকতার আহমদ ও ৪ নং ওয়ার্ডের আবদুল মুনাফের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হবে বলে নিশ্চিত করেন লবণ চাষী- ব্যবসায়ী খুটাখালী ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত হাজী নজু মিয়ার পুত্র গিয়াস উদ্দীন।
তিনি বলেন, চিংড়ি ঘেরের পলবোট ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকার কথা আগে থেকে ঘের ইজারাদার নুরুল আজিমকে চাষীদের পক্ষ থেকে অবহিত করা হয়।
এসময় তিনি তুচ্ছতাচ্চিল্য ভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে চাষ করলে কিছু পোকামাকড়ে খাবে বলে মন্তব্য করেন।
অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার খুটাখালী কেরানিঘোনায় প্রায় শতাধিক লবণ চাষী রয়েছে।
প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও এসব চাষীরা লবণ উৎপাদন কাজ শুরু করে। লবণ উৎপাদনের শেষ হতে প্রায় এক মাস আগেই সংশ্লিষ্ট চিংড়ি ঘেরে পলবোট ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে লন্ড ভন্ড হয়ে পানিতে ভেসে গেছে আড়াইশকানির প্রায় ১২ হাজার মন লবণ।
এতে লবণ চাষীরা অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
এদিন প্রবল জোয়ারে বেড়িবাঁধের পলবোট ভেঙ্গে লবণের মাঠগুলোতে পানি থৈ থৈ হয়ে যায়।
চাষীরা জানান, লবণের দাম না থাকায় অনেক লবণ চাষী মৌসুমের শুরু থেকে লবণ মজুদ করে রাখে। কেউ গর্তে, কেউবা মাঠের উপরে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখে।
লবণের চড়া দামের আশায় অনেক চাষী লোভের বশীভুত হয়ে আরো বেশী লবণ উৎপাদন করে মজুদ করেন।
হঠাৎ চিংড়ি ঘেরের পলবোট ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে লবণ চার্ষীদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে গেছে।
ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড বাসিন্দা লবণ চাষী গিয়াস উদ্দীন বলেন, তারা ৪ জনের সিন্ডিকেটে এ ঘেরে প্রায় ২ শ কানি লবণ মাঠ ইজারা নেন। এসব লবন মাঠে তাদের অর্ধ শতাধিক লবষ চাষী রয়েছে।
অনেক লবণ চাষী ঋণ করে জমি বর্গা নিয়ে লবণ চাষ করে।
তারা বলছেন, জোয়ারের পানিতে তাদের লবণ ভেসে গেছে এ কারনে তারা চরম আশংকা প্রকাশ করে জানিয়েছেন ঋণের টাকা কিভাবে পরিশোধ করবে?
কেরানিঘোনা চিংড়ি ঘেরের একাধিক লবণ চার্ষীরা জানান, হঠাৎ বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে তলিয়ে যাবে তা আমরা জানি না।
লবণ মাঠে মজুদ করা লবণগুলো জোয়ারের পানিতে আর রক্ষা করা যায়নি।
এবার লোকসান নিয়ে বাড়ী ফেরা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
তারা এ ঘটনায় কেরানীঘোনা চিংড়ি ঘের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ক্ষতি পুরনের জন্য অাইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ও জানান।
ক্ষতিগ্রস্থ কেরানিঘোনা চিংড়ি ঘের লবণ চাষীদের মধ্যে শেখ আহমদের ৮ কানির সাড়ে তিনশ মন, হেলাল উদ্দীনের সাড়ে তিন কানির ১শ মন, সোলতানের ৭ কানির ১শ মন, মোঃ দানুর ১৭ কানির ১ হাজার মন, নুরুল আলমের ১৬ কানির ১ হাজার মন, রাশেলের চার কানির তিনশ মন, রুবেল- আবদুল্লাহর ৬ কানির ৮ শ মন, গফুরের ৭ কানির ১ হাজার মন, এনামের ৬ কানির ৬শ মন, জহিরের ৬ কানির ৬ শ মন, বাদসার ৬ কানির ৫ শ মন, শের উল্লাহর ৬ কানির ৫ শ মন, নুর হোছনের ৪ কানির তিনশ মন, তৌহিদের ৮ কানির ৫ শ মন, আমিন মেম্বারের ৭ কানির ৪ শ মন, ভুলা মিয়ার ১২ কানির ৫ শ মন, আলমগীরের ৭ কানির ৫ শ মন, ছলিমের ৫ কানির ২ শ মন, মনছুরের ৫ কানির ৩শ মন, রুহুল কাদেরের ৫ কানির ৩ শ মন, মোহাম্মদ হোছাইনের ৬ কানির ২শ মন, খায়রুল বশরের ১২ কানির ২৫০ মন, মিজানুর রহমানের ৭ কানির ২ শ মন এবং আবদু শুক্কুর প্রকাশ কয়লার ৪ কানির প্রায় ৬ শ মন লবণ ভেসে গেছে।
শুক্কুর মৌসুমের শুরু থেকে একদানা পরিমানও লবণ বিক্রি করেনি বলে জানা গেছে।
লবণ চাষী ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী আবুল হাসেম বলেন, মুলত চিংড়ি ঘের ইজারাদারদের গাফেলতির কারনে বাঁধের পলবোট ভেঙ্গে জোয়ারের পানিতে এসব মাঠ তলিয়ে গেছে।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেও এসব মাঠে লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে না। ক্ষতিগ্রস্থ শতাধিক লবণ চাষী ঘের ইজারাদারদের বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন।
তারা এ ঘটনায় জড়িত ঘের সংশ্লিষ্টদের আইনের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
Posted ৩:১১ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০
dbncox.com | ajker deshbidesh