দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | মঙ্গলবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৯
বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোতে উৎসাহী করতে সরকার নিজ খরচে দেশে আপনজনের কাছে পৌঁছে দেবে প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ। খুব শিগগিরই এ সুবিধা পাবেন বিদেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি অভিবাসীরা।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটির বেশি বাংলাদেশি কর্মী নিযুক্ত রয়েছেন। এসব মানুষ প্রতি বছর গড়ে আয় করেন ১ হাজার ৫শ’ কোটি ডলার। এরাই দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, মালয়েশিয়ায় কাজ করেন প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছর ব্যাংকিং চ্যানেলে মালয়েশিয়া থেকে ১১০ কোটি ৭২ লাখ ডলার বা ৯ হাজার কোটি টাকা এসেছে। এই পরিমাণ অর্থ মোট রেমিটেন্সের মাত্র ২০ শতাংশ। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ৩৬ হাজার কোটি টাকা এসেছে অবৈধ পথে।
একইভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বৈধ পথের চেয়ে অবৈধ পথেই বেশি আসছে প্রবাসীর আয়ের অর্থ। বিষয়টি সরকারের নজরে আসায় বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ ঘুরেছে।
প্রতিনিধি দলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠানোর জন্য খরচের চেয়ে ঝামেলা বেশি। ব্যাংক বা মানি ট্রান্সফার কোম্পানির এজেন্টের কাছে লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। এতে কাজের ব্যাঘাত ঘটে, আয় কমে যায়। এসব ঝামেলা এড়াতে প্রবাসীরা নিজেদের পরিচিত লোকজনের কাছে টাকা জমা দিলে সঙ্গে সঙ্গে বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে; আর সেটা অবৈধ পথে বা হুন্ডির মাধ্যমে।
এসব কারণে প্রবাসীদের উপার্জিত অর্থ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পাশাপাশি কোনো ধরনের খরচ (চার্জ) ছাড়াই প্রবাসীদের আয়ের অর্থ দেশে পাঠানোর উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করে দেশে টাকা পাঠাতে উৎসাহী করতে প্রবাসীদের কাছ থেকে কোনো ধরনের খরচ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
কোনো ধরনের খরচ ছাড়াই দেশে টাকা পাঠানোর বিষয়ে একটি ধারণাপত্র তৈরি করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, এ পদক্ষেপ দেশে রেমিটেন্স বাড়াতে নেওয়া হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, এটি অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলের পরিবর্তে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলগুলির মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে প্রেরকদের উত্সাহিত করবে।
তিনি বলেন, বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠানোর জন্য এই উদ্যোগের বিকল্প কিছু দেখা যাচ্ছে না। যদিও এটি বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি বছর ৫ থেকে ৭শ’ কোটি টাকা ব্যয় হবে। যার জন্য বাজেটে আলাদাভাবে বরাদ্দও রাখতে হবে সরকারকে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, প্রকৃতপক্ষে এই উদ্যোগ সদ্যবিদায়ী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে নেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের কাছ থেকে বিস্তারিত নির্দেশনা নিয়ে বাস্তবায়ন করা হবে।
আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ার কারণে রেমিটেন্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছিল ২০১৬ সালে। ওই সময়ই রেমিটেন্স বাড়ানোর প্রথম পদক্ষেপ নেয় সরকার।
তবে বিদায়ী বছরে ২০১৭ সালের তুলনায় রেমিটেন্স বেড়েছে ১৫ শতাংশ। বিদায়ী বছরে দেশে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৫৫৩ কোটি ৫৮ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, বৈধ পথে রেমিটেন্স পাঠাতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে শতভাগ প্রবাসী আয় ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দেশবিদেশ /০৮ জানুয়ারি ২০১৯/নেছার
Posted ১০:২৫ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh