তারেকুর রহমান | মঙ্গলবার, ০৫ এপ্রিল ২০২২
উখিয়া টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালাচ্ছে। শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ অর্থলোভে মালয়েশিয়া ও আশেপাশের দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রোহিঙ্গা পালিয়ে গেলেও কিছু কিছু রোহিঙ্গা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হচ্ছে।
সোমবার (৪ এপ্রিল) সকালে উখিয়া ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় ১৩৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করেছে পুলিশ। এর আগে ২৫ মার্চ (শুক্রবার) ভোরে উখিয়া উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়নের ছেপটখালী সমুদ্র উপকূল থেকে ৫৭ রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে র্যাব। মধ্যে ২৪ জন নারী, ১০ জন শিশু ও ২৩ জন পুরুষ ছিল।
জানা যায়, ক্যাম্প থেকে দুয়েকদিন পর পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ভারত, মালয়েশিয়াসহ আশপাশের দেশগুলোতে পাড়ি জমাতে ক্যাম্প থেকে বের হয়। আবার অনেকে মালয়েশিয়াতে বিয়ে দেয়ার জন্য আত্মীয়দের ক্যাম্প থেকে নিয়ে যাচ্ছে।
১২নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা আরকান বিবি। কিছুদিন আগে মালয়েশিয়া যাত্রাকালে র্যাবের হাতে ধরা পড়ে। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই মো. জুবাইর মালয়েশিয়া থাকে। আমাকে সেখানে বিয়ে দেয়ার জন্য দালালের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দালালরা সমুদ্রের মাঝ পথে নিয়ে আমাদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে। তারা আমাদের পানিতে ৩দিন পরে পাহাড়ি জঙ্গলে ২দিন রাখে। পরে র্যাব আমাদের উদ্ধার করে।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ ও ক্যাম্প থেকে পালানোর প্রবণতা প্রতিরোধে ক্যাম্পের ভেতরে এবং বাইরে কর্মরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সচেতন মহল।
সচেতনের মহলের দাবি, পথে পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষ চেকপোস্ট কিংবা অভিযানে তাদের চোখে ধুলো দিয়ে কীভাবে রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যেতে পারে। যদিওবা নামেমাত্র কিছু রোহিঙ্গাদের আটক করা হয়। কিন্তু এর চেয়ে বেশি রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পালিয়ে যাচ্ছে।
এব্যাপারে কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, ‘২০১৭ সালে রোহিঙ্গা আসার পর থেকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দফায় দফায় মিটিং হলেও কোনো সিদ্ধান্ত বা সুরহা হয়নি। এরই মাঝে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন হচ্ছে রাত-দিন খারাপ কাজ চলছে। যার কারণে অনেক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকে পরিবারের জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় কিছু সদস্য অন্যত্রে ঘরবাড়ি করার জন্য ক্যাম্প ছাড়ছে।
তিনি বলেন, ‘ক্যাম্প ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গারা শুধু বিদেশ যাচ্ছে তা না। তারা চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের পার্বত্য এলাকায় পালিয়ে গিয়ে ঘরবাড়ি করছে। এদেশের মানুষের সাথে মিশে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে।,
তিনি আরও বলেন, ‘ক্যাম্পের চারপাশে কাঁটা তারের বেড়া আছে বলে অনেকে যে দাবি করছে তা মিথ্যা। অনেক ক্যাম্পে কাঁটা তারের বেড়া নেই। যার কারণে রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে সহজে ক্যাম্প থেকে বের হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে যাচ্ছে।’
এজন্য দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অবহেলা রয়েছে বলে জানান রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি।
কক্সবাজার কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, ‘জেলের মধ্যে কয়েদীদের পোলাও বিরিয়ানি দিলেও যেমন অশান্তি বিরাজ করবে ঠিক তেমনি রোহিঙ্গাদের রেশন সামগ্রী বা অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিলেও তার আবদ্ধ জীবন থেকে রেহাই পেতে অন্যত্রে পাড়ি জমাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গরা ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাওয়ার আরেকটি কারণ হলো ক্যাম্পে দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঠিক তৎপরতা না থাকা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি এড়িয়ে বা তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কীভাবে তারা ক্যাম্পের বাইরে যেতে পারছে।’
এ ব্যাপারে ক্যাম্পে কর্মরত ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক পুলিশ সুপার নাইমুল হকের বক্তব্য নেয়ার জন্য মুঠোফোনে কল দেয়া হলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে চাননি।
এদিকে ১৩৬ রোহিঙ্গা আটক নিয়ে উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহমদ সনজুর মোরশেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে রোহিঙ্গারা নানা কৌশলে ক্যাম্প থেকে বের হচ্ছে। এমন অভিযোগ পেয়ে উখিয়া উপজেলার কয়েকটি বাজারে আশেপাশে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’
Posted ২:১২ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৫ এপ্রিল ২০২২
dbncox.com | ajker deshbidesh