সেলিম উদ্দীন, ঈদগাঁও | সোমবার, ২০ আগস্ট ২০১৮
কক্সবাজার সদরের বৃহত্তম পশুর হাট ঈদগাঁও বাজারে রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার জোর তৎপরতা শুরু করেছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। কোন রকম ইজারা ব্যতিরেকে খাস কালেকশনের নামে চলছে হরিলুট। এতে সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব। অভিযোগ উঠেছে সদরের ঈদগাঁও ইউনিয়ন ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জেসমিন-খালেদার নেতৃত্বে স্থানীয় প্রাক্তন ইজারাদার, ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতৃবৃন্দের সক্রিয় অপতৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শনিবার ঈদগাঁও পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি পশুর (গরু-মহিষ) ক্রেতা,বিক্রেতার কাছ থেকে বে-আইনী ভাবে আদায় করা হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। প্রতিটি পশুর ক্রেতার কাছ থেকে ৫শ’ বিক্রেতার কাছ থেকে ১হাজার টাকা।
ক্রেতা-বিক্রেতাকে লোক দেখানো একটি রশিদ দেয়া হলেও ওই রশিদে টোল আদায়ের টাকা উল্লেখ নেই। এতে করে সরকারের বিপুল রাজস্ব হারানোর আশংকা দেখা দিয়েছে। খোঁজ খবর জানা যায়, প্রতি বছর ঈদগাঁও বাজার ইজারা বাবৎ ১কোটি ২০লাখ টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হলেও চলতি সনে আইনি জটিলতার কারণে ইজারা স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ঐ সুযোগে স্থানীয় ভূমি অফিসের নেতৃত্বে গড়ে উঠে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। হাট-বাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী পশুর হাটে দৃশ্যমান স্থানে টোল আদায়ের তালিকা টাংঙ্গানো, পশু চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কার্যত তার কোনটাই দেখা যায়নি। হাট-বাজার নীতিমালা অনুযায়ী ইজারাহীন অবস্থায় আপদকালীন সময়ের জন্য নির্দিষ্ট কমিটির মাধ্যমে খাস কালেকশনের বিধি থাকলেও বাস্তবে কোন আইনী জটিলতা না থাকা স্বত্বেও বছর জুড়ে ইজারা না দিয়ে খাস কালেকশন করা হচ্ছে।
এভাবে খাস কালেকশন করা সম্পূর্ণ ভাবে বে-আইনী ও হাটবাজার ইজারা বর্হিভুত। বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, প্রতিবছর কোরবানীর মৌসুমে শুধু ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে ইজারাদাররা টোল আদায় করে থাকে ৫০ লাখ টাকার উর্ধ্বে। সেক্ষেত্রে নামে মাত্র টোল আদায় দেখিয়ে শুধু পশুর হাট থেকে আনুমানিক ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঐ সংঘবদ্ধ চক্রটি। শনিবার ঈদগাঁও পশুর হাট থেকে গরু কিনে ফেরার পথে মো: আলী জানান, তিনি গরু কিনেছেন ৫১হাজার টাকায়। তার কাছ থেকে টোল আদায় করা হয়েছে ৫শত টাকা। তার অভিযোগ ৫শত টাকা টোল দিলেও তাকে কোন প্রকার রশিদ দেয়া হয়নি। আরেক মহিষ বিক্রেতা জসিম উদ্দিন জানান, ৮২হাজার টাকায় তিনি একটি মহিষ বিক্রি করলে তার কাছ থেকে বিনা রশিদে আদায় করা হয় ২হাজার টাকা। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ঈদগাঁও পশুর হাট ইজারা না হওয়া সত্বেও কিভাবে এ টাকা আদায় করা হচ্ছে।
জানা গেছে, খাস কালেকশনের নামে এত বেশি টাকা আদায়ের অধিকার স্থানীয় ভুমি প্রশাসনের নেই। মুলত অসাধু, দূর্নীতিবাজ ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জেসমিন-খালেদার নেতৃত্বে সক্রিয় সংঘবদ্ধ চক্রটি খাস কালেকশনের নামে সাধারণ মানুষের গলায় ছুরি বসিয়ে লুটপাট করছে। বাজারে গরু কিনতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছক একজন ক্রেতা প্রশ্ন তুলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঈদগাঁও বাজার ইজারা স্থগিত থাকলেও রমজান কোম্পানী নামে জনৈক ব্যক্তি কিভাবে খাস কালেকশনের প্রতিনিধি হতে পারে? তিনি আরো বলেন, ভুমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা জেসমিন-খালেদা ও রমজান গং এর নেতৃত্বে এ অসাধু চক্রটি গত শনিবার এক দিনেই হাতিয়ে নিয়েছে ২০ লক্ষ টাকা।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাবিবুল হাসানের কাছে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বস্থ করেন। অবৈধ টোল আদায়ের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে ইজারা বিহীন পশু হাট থেকে ক্রয় বিক্রয়ের উপর শতকরা কত ভাগ খাস কালেকশন করার বিধান রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকলেও এটি সহকারী কমিশনার (ভুমি) কার্যালয়ের অধিভুক্ত নয়। এটি স্থানীয় তহশীলদারের নেতৃত্বে টোল আদায়ের টাকা উপজেলা ভুমি অফিসে জমা দেয়া হয়। বিনা রশিদে খাস কালেকশনের বিষয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় তহশীলদারকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তিনি নিদের্শ প্রদান করবেন।
অভিযোগ উঠেছে, নীতিমালা অনুযায়ী হাট বাজারের খাস আদায় কমিটিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত একজন সদস্য, সংশ্লিষ্ট হাটের নিকটবর্তী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান, সংম্লিষ্ট ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য, সংরক্ষিত মহিলা ইউপি সমন্বয়ে একটি খাস আদায় কমিটি করার বিধি থাকলেও এ ক্ষেত্রে তার কোনটাই মানা হয়নি। পশুর হাটে গরু,মহিষ,ছাগল বিক্রির উপর সুনির্দিষ্ট হারে খাস কালেকশন করার বিধি থাকলেও বাস্তবে আদায় করা হচ্ছে চার গুণ টাকা। যাহা খাস কালেকশন বিধির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। নাম প্রকাশে অনিচছুক একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বলেন, শুধু স্থানীয় ভুমি অফিস নয়, অবৈধ ভাবে টোল আদায়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন খোদ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি)। অভিযোগের বিষয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) নাজিম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে স্থানীয় ইউনিয়ন ভুমি অফিস কর্মকর্তাদের উপর সমস্থ দায় দায়িত্ব চাপিয়ে দেন।
অসমর্থিত সূত্র দাবী করছে,খাস কালেকশনে তিনস্থর বিশিষ্ট গোপন আতাতের সংঘবদ্ধ যোগসূত্র রয়েছে। যাতে ভুমি অফিসের কর্মকর্তা স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতা, বিভিন্ন সময়ের বাজার ইজারাদারসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র সক্রিয় আছে। ওই চক্রের অপতৎপরতায় সরকার হারাতে বসেছে কোটি টাকার রাজস্ব। গেল সনের ইজারাদার আবদুর রাজ্জাক এমইউপি পশুর হাট থেকে ক্রেতা-বিক্রেতার কাছ থেকে আদায়কৃত সমুদয় টাকা সরকারী কোষাগারে জমাদানে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হউক। বৃহত্তর ঈদগাঁওর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন সচেতন নাগরিক শক্তির প্রধান সমন্বয়ক আনোয়ার হোসেন জানান, অনিয়ম, দূর্নীতি ও অনৈতিক যোগসাজসের মাধ্যমে খাস কালেকশন করা হলে প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
বিনা রশিদে পশুর হাট থেকে টোল আদায় করা বন্ধ না হলে জনসচেতনার্থে মাইকিং করে বিনা রশিদে টোল না দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে অবহিত করা হবে। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঈদগাঁও ইউনিয়ন উপ-সহকারী ভুমি কর্মকর্তা জেসমিন আক্তারকে তার মুঠোফোনে (০১৮১২-৩৬৫৩৩৪) বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
দেশবিদেশ /২০ আগস্ট ২০১৮/নেছার
Posted ১:২৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২০ আগস্ট ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh