দেশবিদেশ অনলাইন ডেস্ক | শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮
সেমিফাইনাল ম্যাচ। তার ওপর শুরুতেই পিছিয়ে পড়ে। এ অবস্থায় প্রথমার্ধে অনেকটা এলোমেলেই থাকল ক্রোয়েশিয়া। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খোলস ছেড়ে বের হতে থাকে। তাদের লড়াকু মনোভাবে পিছিয়ে পড়েও জয় ছিনিয়ে নিয়ে ফাইনালে নাম লিখায়। ক্রোয়েশিয়ার এ কঠিন ব্রত বিশ্বকে আসলে কী ইঙ্গিত দিল। গত বুধবার রাতে সেমিফাইনাল ম্যাচ চলার সময় ব্রাসেলসে চলছিল ন্যাটোর সামিট। মস্কোর ওই ম্যাচে এক গোলে এগিয়ে যায় ইংল্যান্ড। মিটিংয়ের কারণে ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট কোলিন্দা গ্র্যাবার কিটারোভিচ ফোনও বের করতে পারছেন না।
রিসিচ যখন ম্যাচে গোল করে সমতা আনেন, তখন মিটিংয়ের মাঝে ক্রোয়েশিয়ার এক ডিপ্লোম্যাট কানে কানে এসে বলে যান কোলিন্দার। কোলিন্দা জানতেনই না ইংল্যান্ড এগিয়ে গেছে। মনে মনে স্বস্তি পেলেন। পরে জানলেন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ক্রোয়েশিয়া ফাইনালে উঠেছে। অতিরিক্ত সময়ে জয়সূচক গোলটি করেন মারিও মানজুকিচ। দেশের প্রধান তিনি। বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস করতে পারেননি। তবে অভিনন্দন জানিয়েছেন দলকে।জাগরেবের সিটি সেন্টারে রাতভর আনন্দ ও উৎসব চলেছে। মস্কোতে প্রায় ৪০ হাজার ক্রোয়েশিয়ান সাপোর্টার এসেছেন। রাতভর পথে-পথে চলেছে জয়গান আর উচ্ছ্বাস। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের সাপোর্টারদের ‘ইটস কামিং হোম’ গানটি থেমে গেছে। ধারণা সত্যি হয়েছে। ইংল্যান্ডকে নিয়ে এখন চলছে ট্রল। ক্রোয়েশিয়া নতুন উচ্চতায় উঠেছে। ফ্রান্স তাদের প্রতিপক্ষ।
এ বিশ্বকাপ নতুন চ্যাম্পিয়নকে দেখতেও পারে। ১৯৯৮ সালের শিরোপাধারী ফ্রান্স। প্রথম ফাইনালেই বাজিমাত করে ২০১০ সালে স্পেন। ফাইনালে উঠলে আর কে শিরোপা ছাড়া ফিরতে চাইবে। ইংল্যান্ড হতাশ হয়েছে। ৫২ বছর পর ফাইনালে যাওয়ার সুযোগ ছিল। একটি গোল লিড নিয়েও তা ধরে রাখতে পারেনি। হেরে যেতে হয়েছে ২-১ গোলে। প্রথম অর্ধে খুবই ভালো খেলেছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয়ার্ধ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে ক্রোয়েশিয়া দুর্দান্ত খেলেছে। ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট স্বীকার করেছেন ম্যাচ হারায় তারা হতাশ। তবে সবকিছু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। দলটি নিয়ে তিনি এখনো গর্বিত। ইংল্যান্ডে আবার প্রতিভাবান ফুটবলাররা আসছে। তাই আশা নিয়ে বেঁচে থাকবেন। সাউথগেট বলেছেন, আমরা হতাশ এটা ঠিক, আবার আশাবাদী ও গর্বিতও। ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয়ার্ধের ব্যাপারে আসি। গোলের সুযোগ আসা আর ফিনিশিং করতে পারা দুটি দুই ব্যাপার। ক্রোয়েশিয়া সুযোগ কাজে লাগাতে পেরেছে।
ট্রিপিয়ের ম্যাচশেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন। অমন অসাধারণ ফ্রি কিকে গোল পাওয়ার পর দল হেরে গেলে খারাপ তো লাগেই। তাও আবার বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে। সাউথগেট বলেন, বড় ম্যাচ খেলেছে ছেলেরা। এখান থেকে অনেক কিছুই শিখবে। আর সামনে আরো ভালো দিন অপেক্ষা করছে। প্রথম অর্ধে ইংল্যান্ড দারুণ খেলেছে। লংপাসে খেলছিল। ফ্রি কিক থেকে গোলও পায়। হঠাৎ কী হলো যে ক্রোয়েশিয়া পরের অর্ধে পাল্টে গেল। এ প্রসঙ্গে ক্রোয়েশিয়ার সিমে ভ্রাসালোকো বলেছেন, ইংল্যান্ডকে আমি আগে এমন দেখিনি। ওরা লংপাসে খেলছিল। কিন্তু যখন আমরা পাসে খেলা শুরু করেছি, মানে বেশি বেশি পাস দিয়ে খেলছিলাম তখন তারা লংপাসে খেলতে পারছিল না।
আমরা ম্যান টু ম্যান মার্ক করেছি। তবে আমাদের সুযোগ এসেছে। কাজে না লাগলে গল্প অন্য রকমও হতে পারত। ইতিহাসে কুড়ি আঠারোর এ বিশ্বকাপটি ২১তম আসর। ২০টি বিশ্বকাপ ৮টি জাতি জিতেছে। ব্রাজিল (৫), জার্মানি (৪), ইতালি (৪), আর্জেন্টিনা (২), উরুগুয়ে (২), ফ্রান্স (১), স্পেন (১) ও ইংল্যান্ড (১) বিশ্বকাপ জয় করেছে। ক্রোয়েশিয়া জিতলে সেটা নবম জাতি হিসেবে অর্জিত হবে। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জøাতকো ডালিচ গতকাল সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ক্রোয়েশিয়ার জার্সি পরে। এসেই স্বপ্নের কথা জানান। নতুন স্বপ্ন নয়। যে দল বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে, তাদের চোখেই এটা ধরা পড়ে। একটি সোনালি ট্রফি ৪২ লাখের ক্রোয়েশিয়াকে আনন্দে ভাসাতে পারে। চিরজীবনের জন্য গর্বিত জাতিও হবে ক্রোয়েশিয়ানরা।
দেশবিদেশ/১৩ জুলাই ২০১৮/নেছার
Posted ৬:৩৬ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ জুলাই ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh