শহীদুল্লাহ্ কায়সার | বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৮
কক্সবাজার শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অবস্থা কাহিল। দিনদিন হয়ে পড়ছে যানবাহন চলাচলের অযোগ্য। সড়কগুলোর বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। ভারি বর্ষণ নয়। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব খানাখন্দ পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। সড়কগুলো হয়ে পড়ে কর্দমাক্ত। যানবাহন, পণ্যবাহী গাড়ি এমনকি পথচারিদের চলাচলেও দেখা দেয় সমস্যা। পৌরসভায় যানজটের প্রধান কারণও এখন এসব খানাখন্দ।
গত কয়েকদিন ধরে পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রধান সড়কের থানা রোডের সামনে থেকে ফায়ার ব্রিগেড মসজিদ, কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক, সৈকত সংলগ্ন সুগন্ধা সড়ক, হোটেল সি গালের সামনের সড়ক, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, ভিআইপি সড়ক, আলীর জাঁহাল, টেকপাড়ার মতো এলাকার সড়কগুলোর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। সড়ক সংলগ্ন উপসড়কগুলোর অবস্থা আরো খারাপ। সংস্কার না করায় দিন দিন এসব সড়ক যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চলাচলের অযোগ্যের অবস্থায় পতিত হচ্ছে।
কিছুদিন আগেও প্রধান সড়কের সংস্কার করেছিল সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সড়কটির একটি অংশ বিটুমিন-কংক্রিট থেকে রূপান্তর করা হয় আরসিসিতে। থানা রোড থেকে ফায়ার ব্রিগেড মসজিদ পর্যন্ত বিটুমেন সহকারে পাথর দিয়ে প্রলেপ দেয়া হয়। আরসিসি ঢালাই দেয়া প্রধান সড়কের অংশটি বর্তমানে অক্ষত। অন্য অংশে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ও মাঝারি আকারের গর্ত। যে গর্তগুলোর কারণে চলন্ত গাড়িকে গতি কমাতে হয়। ফলে শহরের যানজট হয় দীর্ঘায়িত। বৃষ্টির পানি সড়কগুলোর গর্তে প্রবেশ করে গর্তের আকার হচ্ছে বড়।
পৌরসভার প্রধান সড়কের আলীর জাঁহাল অংশ। যে অংশটিও রক্ষণা-বেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি অবহেলিত ছিলো। বিভিন্ন অংশে বিটুমিন ও পাথর উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল বড় বড় খাদের। সংস্কার করেও পাওয়া যাচ্ছিলো না কাঙ্খিত ফল। ফলে বিটুমেনের সড়কটিও আরসিসিতে রূপান্তর করা হয়। এতে ব্যয় হয় বিপুল পরিমাণ অর্থ। কিন্তু তাতেও সমস্যার সমাধান হয়নি। সড়কটির নিচু অংশ ভেঙ্গে আবার সৃষ্টি হয়েছে খাদের। ফলে এলাকাটিতে যানজট লেগে থাকে। বৃষ্টি বন্ধ হলেও গর্তের পানি থেকে যায়। ফলে দিনদিন গর্তগুলো বড় হচ্ছে। সড়কটির অবস্থা যাচ্ছে খারাপের দিকে।
কক্সবাজার শহরের অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সুগন্ধ পয়েন্ট ও হোটেল সি গাল সংলগ্ন সড়ক। শহরে অবস্থান করা বেশিরভাগ দেশি-বিদেশি পর্যটক যাতায়াতের জন্য সড়ক দুইটি ব্যবহার করে থাকেন। হোটেল সি গালসহ কয়েকটি তারকামানের হোটেল রয়েছে সড়কের পাশে। সংযুক্ত দুইটি সড়কের অবস্থা কয়েকমাস ধরে খুব খারাপ। সামান্য বৃষ্টি হলেই সি গাল সংলগ্ন সড়কটি ছোটখাটো পুকুরের রূপ ধারণ করে। অযোগ্য হয়ে পড়ে পথচারীদের চলাচলের। এমনকি যানবাহন চলাচলে দেখা দেয় সমস্যা। ইঞ্জিনে পানি ঢুকে যাওয়ায় নষ্ট হয়ে পড়ে যানবাহনের মূল্যবান যন্ত্রাংশ। সড়ক দুইটি সংস্কার না করার কারণে ক্ষুণœ হচ্ছে পর্যটন শহরের মর্যাদা। পাশাপাশি সৌন্দর্য তো রয়েছেই।
পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক। সড়কটি শহরের অতিগুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর একটি। প্রায় সময় ভিআইপিরা যাতায়াতের জন্য এই সড়ক ব্যবহার করেন। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যেতে প্রধান সড়কের বিকল্প হিসেবে সড়কটি ব্যবহার করা হয়। মেরিন ড্রাইভ সংযোগ সড়ক হওয়ায় পর্যটকরাও নিয়মিত সড়কটি ব্যবহার করেন। দর্শনীয় পর্যটনস্পটগুলোতে যেতে সড়কটি ব্যবহার করেন তাঁরা। ফলে দিনদিন সড়কটির গুরুত্ব বাড়ছে।
তবুও বেশ কিছুদিন ধরে সড়কটির সংস্কার করা হচ্ছে না। সড়কের বিভিন্ন স্থানে উঠে গেছে বিটুমেন আর কংক্রিট। ফলে এই সময়ের মধ্যে সড়কের বিভিন্ন অংশে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে সড়কের ভাঙ্গা অংশগুলো। ফলে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চলাচলে সমস্যা হয়। গাড়ির ধীরগতির কারণে সড়কটিতে প্রতিদিন যানজটও দেখা দেয়। খানাখন্দের উপর দিয়ে চালাতে গিয়ে নষ্ট হচ্ছে গাড়ির মূল্যবান যন্ত্রাংশ।
শহরের ভিআইপি সড়কের অবস্থাও ভালো না। সড়কের শহীদ স্মরণি থেকে শুরু করে জেলা প্রশাসকের বাসভবনে প্রবেশের সড়ক পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে গর্তের। এসব গর্তের কারণে যানজট যেমন বাড়ছে। তেমনি ছোটখাটো দুর্ঘটনা নিত্যনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে বর্ণাঢ্য আয়োজন করা হয় ৪র্থ জাতীয় উন্নয়ন মেলায়। কিন্তু উন্নয়ন করা হয়নি মেলায় যাতায়াতের গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা হচ্ছে।
দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করেন এই সড়ক। কক্সবাজারের জেলাপ্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের মতো সিনিয়র সিটিজেনরা ব্যবহার করেন এই সড়ক। নিজেদের বাসভবনে যাতায়াত করতে এই সড়ক ব্যবহার করতে হয় তাঁদের। ভাঙ্গা সড়কের উপর দিয়ে তাঁদের বহনকারি বাহন নিয়মিত চলাচল করে। বিষয়টি প্রতিদিন দেখলেও সড়কটির সংস্কারের কোন প্রস্তাব তাঁরা কোন দপ্তরকে দিয়েছেন বলে জানা যায়নি।
জইল্যার দোকান এলাকার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, সড়কে গর্ত থাকার কারণে প্রতিদিন টমটম দুর্ঘটনা ঘটছে। স্টেডিয়াম সংলগ্ন সড়ক থেকে নামার সময় দুর্ঘটনা বেশি হয়। কোরবানির ঈদের মাত্র একদিন আগে সড়কটি সংস্কার করা হয়েছিলো। কিন্তু সেই কাজ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।
সুদর্শন জেনারেল স্টোরের এক কর্মচারি জানায়, বড় ধরনের দুর্ঘটনা না হলেও গর্তের কারণে যানজট বেড়ে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই গর্তগুলো পানিতে পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে পথচারীদের হাঁটতে সমস্যা হয়। তাদের দোকানের মধ্যেও পানি ঢুকে যায়।
দেশবিদেশ /১১ অক্টোবর ২০১৮/নেছার
Posted ১২:১৫ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১১ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh