শফিক আজাদ,উখিয়া | বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ ১৪মাস পর কাল বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এ নিয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহন করেছে সংশ্লিষ্ঠরা। মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেওয়ার ১১লাখ রোহিঙ্গাসহ পুরো বিশে^র দৃষ্টি এখন প্রত্যাবাসনের দিকে। প্রথম ব্যাচে ৪৮৫ পরিবারের ২ হাজার ২৬০ জন রোহিঙ্গাকে ১৫ নভেম্বর থেকে প্রতিদিন ১৫০জন করে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রত্যাবাসন সংশ্লিষ্ঠরা।
সরজমিন মঙ্গলবার উখিয়ার থাইংখালী জামতলী জি-১৩নং ক্যাম্প ঘুরে প্রত্যাবাসনের তালিকাভূক্ত মংডু কোয়াংচিবন এলাকার বাসিন্দা হোছন আহাম্মদ (৪২) এর স্ত্রী মিনারা বেগম(৩৭) তার ছেলে মোঃ বেলাল (১৬) ও মোঃ হোবাইব(১৪) এর সাথে কথা বলে জানা গেছে, তাদের ক্যাম্পের মাঝি ফয়েজ উল্লাহ বিগত ৪দিন আগে এসে একবার বলেছিল ১৫ নভেম্বর মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে। কিন্তু এরপর থেকে আর কেউ কিছু বলেনি। আর মাত্র ১দিন বাকী থাকলেও এখনো তারা জানেননা কিভাবে মিয়ানমারে ফিরবে। তাদেরকে ট্রানজিট ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারেও কেউ কিছু বলেনি। তবে তাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত যেতে হলে সরাসরি তাদেরকে নিজ বসত ভিটায় ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় তারা ফেরত যেতে রাজী নয়।
একই এলাকার বাসিন্দা (প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত) রোহিঙ্গা নারী সাদেকা বেগম (২৩) জানায়, স্বামী মোঃ জুহার ছাড়াও তাদের সংসারে আরো ২ ছেলে/মেয়ে রয়েছে। আমাদেরকে মিয়ানমারে ফেরত যেতে হলে আগে আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও নাগরিকত্ব নিশ্চিতসহ নিজ ভিটে মাটি ফেরত দিতে হবে। না হয় তারা মিয়ানমারে ফেরত যাবেনা।
একই কথা মংডু শিলখালী এলাকার বাসিন্দা ছৈয়দা খাতুন (৪০) এর। তার পরিবারে ৫সদস্য রয়েছে প্রত্যাবাসনের তালিকায়। সে জানায়, সম্প্রতি মিয়ানমার পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে এলে আমরা বলেছিলাম রোহিঙ্গা নাকি বাঙ্গালী হিসেবে আমরা ফেরত যাব, এতে তিনি কোন উত্তর দেয়নি। সুতারাং আমাদেরকে রোহিঙ্গা হিসেবে মেনে নিলে তখন ফেরত যাব। আর এনভিসি(ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) আমরা নেব না।
জামতলী ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গা (প্রত্যাবাসনের তালিকাভুক্ত) মোঃ খালেচ (৪৫) বলেন, ‘আমাদেরকে কোন কিছু স্পষ্ট করে বলা হচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কিছু নির্ধারিত দাবি আছে, সেগুলো পূরণ না হলে কোন অবস্থাতেই ফেরত যাবো না। তার স্ত্রী জুহুরা বেগম (৬০) জানান, মিয়ানমারে এখনো অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। তাই ফেরত যেতে প্রস্তুত নয় রোহিঙ্গারা। আগে তাদের দাবিগুলো সম্পর্কে শতভাগ নিশ্চয়তা দিতে হবে, তারপর স্বইচ্ছায় ফেরত যাবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ায় আমি সহ আমার কমিটির সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে সরকারকে। তবে এখন দেখার বিষয় আসলে ১৫নভেম্বর প্রত্যাবাসন শুরু হচ্ছে কিনা? কারণ প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্থ করার জন্য প্রতিটি ক্যাম্পে কতিপয় এনজিও’র পৃষ্ঠপোষকতায় কিছু কিছু রোহিঙ্গা নেতা সাধারণ রোহিঙ্গা ফেরত না যেতে উস্কানী দিচ্ছে। তারা সহজ-সরল রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ভাবে ভূল বুঝিয়ে প্রত্যাবাসনের অমনুযোগী করার চেষ্ঠা করছে। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। না হয়, প্রত্যাবাসনে বিঘœতা ঘটবে।
উল্লেখ্য যে, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচারে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত রোহিঙ্গা এদেশে আসতে থাকে। প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফের একাধিক শিবিরে আশ্রয় নেয়। তারও আগে একই কারণে আরও প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গা রয়েছে এখানে। সব মিলিয়ে বর্তমানে ১১লাখের অধিক রোহিঙ্গার বসবাস উখিয়া-টেকনাফ।
Posted ১:১২ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh