দেশবিদেশ রিপোর্ট | বুধবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮
দেশের নানা স্থানে ঘটনা ঘটেনি অথচ মামলা হয়েছে অথবা ঘটনায় জড়িত না থাকা লোকজনের বিরুদ্ধে মামলা রুজুর অহরহ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা সত্বেও বন্ধ হয়নি ‘গায়েবি মামলা’ দায়েরের ঘটনা। কক্সবাজারের টেকনাফ থানায় এবার এরকমই একটি ‘বন্দুক যুদ্ধের’ ঘটনা নিয়ে ৩ টি মামলা হয়েছে। মামলা ৩ টির ৩ জন আসামীই দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছে কারাগারে। তবে এ বিষয়ে টেকনাফ থানার উপ পরিদর্শক এবং মামলার বাদী ভুল স্বীকার করে বলেছেন-অভিযোগ পত্র থেকে তাদের নাম বাদ দেয়া হবে।
টেকনাফ থানার খোদ একজন উপ পরিদর্শক বাদী হয়ে দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে-‘ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের কারাগারে আটক থাকা তিন আসামী ‘বন্দুক যুদ্ধে’ লিপ্ত হয়ে একজন ইয়াবা পাচারকারিকে হত্যা করেছে। গত পহেলা ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের বালুচরে ঘটেছে ‘বন্দুক যুদ্ধের’ এমন ঘটনাটি।
টেকনাফ থানার উপ পরিদর্শক মোঃ রাজু আহমেদ গাজী (বিপি-৭৫৯২০০৬৪৪৪) বাদী হয়ে গত পহেলা ডিসেম্বর একে একে ৩ টি মামলা দায়ের করেন। মামলা ৩ টিতে ২৩ জনকে আসামী করা হয়েছে। মামলার বিবরণ হচ্ছে টেকনাফ থানার পুলিশের ৩৫ জনের একটি দল গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে মাদক উদ্ধারের এক বিশেষ অভিযানে বের হন।
ওই দিন মধ্যরাতের পর পুলিশের দলটি খবর পান যে, টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর পুরান পাড়ার বাসিন্দা হাবিব উল্লাহ প্রকাশ হাবিব (৩৫) মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন শীলখালী এলাকায় বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে কেনা-কাটা করছে। ঘটনাস্থলে পুলিশের দলটি গিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবাকারবারি হাবিবকে আটক করে। পরে হাবিবের সঙ্গীয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়।
সন্ত্রাসীরা ইয়াবাকারবারি হাবিবকে ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করে পুলিশের নিকট থেকে। পুলিশ এসময় ৩৮ রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। দুষ্কৃতিকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে প্রায় ৭০/৮০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এক পর্যায়ে অস্ত্রধারী ও ইয়াবা সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে ইয়াবাকারবারি হাবিব গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়। পুলিশ ‘বন্দুক যুদ্ধের’ এ ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও ৬ হাজার ইয়াবার চালান।
এ ঘটনায় টেকনাফ থানায় উপ পরিদর্শক মোঃ রাজু আহমেদ গাজী বাদী হয়ে পহেলা ডিসেম্বর একই দিনে ৩ টি পৃথক মামলা দায়ের করেন। প্রতিটি মামলায় ২৩ জন আসামীর নাম উল্লেখ পুর্বক আরো ৫/৬ জন অজ্ঞাতনামা আসামীর নাম রয়েছে। অনুসন্ধান করে জানা গেছে, মামলার ৯ নম্বর ক্রমিকের আসামী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের পুরানপাড়ার মনির আহমদের পুত্র জসিম উদ্দিন (৪০), একই এলাকার মৃত ফকির আহমদের পুত্র সামশুল আলম (২০) ও একই এলাকার মাথাভাঙ্গা গ্রামের নুরুল ইসলামের পুত্র ছৈয়দুল ইসলাম (২২) দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক রয়েছেন।
গত ১১ এপ্রিল টেকনাফ থানায় দায়ের করা একটি হত্যা মামলার (নম্বর-৩০) আসামী ছৈয়দুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার কারাগারে আটক রয়েছেন। সেই সাথে আসামী জসিম উদ্দিন ও সামশুল আলম গত ৬ মাস ধরে আটক রয়েছেন চট্টগ্রামের কারাগারে। আসামী জসিম উদ্দিনের স্ত্রী শারমিন আকতার জানিয়েছেন, গত ৬ মাস আগে ইয়াবার চালান নিয়ে তার স্বামী জসিম ও প্রতিবেশী সামশু চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে কারাগারে আটক রয়েছে। অথচ কারাগারে আটক এই ৩ আসামীকেও গত পহেলা ডিসেম্বর রাতের ‘বন্দুক যুদ্ধের’ ঘটনায় আসামী করেছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে টেকনাফ থানার উপ পরিদর্শক মোঃ রাজু আহমেদ গাজী মঙ্গলবার রাতে জানিয়েছেন-‘ভাই আমি মাস-দেড়েক আগে থানায় যোগ দিয়েছি। এলাকার কিছু লোক এসব আসামীর নামধাম বলায় আমি তাদের নাম উল্লেখ করেছি মামলায়। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি তদন্তকারি কর্মকর্তাকে বলে তাদের নাম অভিযোগ পত্রে বাদ দেয়া হবে।’
Posted ১:০৬ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh