দেশবিদেশ রিপোর্ট | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার পেয়েছেন কক্সবাজার জেলার ৩৩ হাজার ৩৩৪ টি পরিবার। সরকারের কোন ত্রাণ নয়-¯্রফে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার। তাও ঈদ উপহার পেয়েছেন কেবল মাত্র কক্সবাজার জেলার ৮টি উপজেলার এসব পরিবারগুলোই। রমজানের শেষ মুহূর্তে নগদ দুই হাজার টাকা ও নিত্য প্রয়োজনের উপহার সামগ্রী পেয়ে কক্সবাজার জেলার এসব হত-দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা মহাখুশি।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ নিয়ে কক্সবাজারের ৮ উপজেলা ব্যাপি নানা সমালোচনাও চলছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনা চলছে মঙ্গলবারের ঈদ উপহার বিতরণের পর থেকেই। যারা এসব উপহার সামগ্রী পাবার উপযুক্ত নয় তারাও পেয়েছেন বলে বলা হয় তাতে। অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষমতাসীনরাই এলাকায় সবচেয়ে ক্ষুব্ধ-সরকারের বিরোধী মনোভাবাপন্ন লোকজন প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো ঈদ উপহার পাওয়ায়। তবে এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ বলছেন-দেশের প্রধানমন্ত্রী সবার। তাই প্রধানমন্ত্রীর প্রেরিত উপহার সামগ্রীও কেবল দলীয় কর্মীর নয় তা দেশবাসীর।
গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত একযোগে কক্সবাজারের ৮টি উপজেলার ৩৩ হাজার ৩৩৪ টি পরিবারের সদস্যদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেরিত বিশেষ ঈদ উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। প্রতিজন হত দরিদ্রকে নগদ ২ হাজার টাকা, ২ কেজি পোলাও চাল, ১ লিটার তেল, ১টি রুহ আফজা বোতল, ৪ প্যাকেট সেমাই ও ১ কেজি চিনি দেওয়া হয়েছে। গতকাল উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, এলাকার দরিদ্র ও ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নগদ টাকা ও ঈদের উপহার সামগ্রী পেয়ে সত্যিই আনন্দিত।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া উখিয়ার রাজা পালং ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এসময় মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার থেকে দশ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয়ের কারনে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া উপজেলা সহ আশে পাশের উপজেলার লোকজন মারাতœকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ফলে বাজারমূল্য, শ্রমবাজার, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনযাত্রায় ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
ত্রাণ মন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, স্থানীয় জনসাধারণের উপর ক্ষতির প্রভাবের বিষয়টি বিবেচনা পুর্বক তাদের সহায়তার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজ উদ্যোগে পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে তাঁর (প্রধানমন্ত্রী) ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেন। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্টিত বিতরণ অনুষ্টানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মোঃ শাহ কামাল বলেন, বরাদ্দ দেওয়া টাকার মধ্যে প্রতিজনকে নগদ ২ হাজার টাকা ও পণ্য এক হাজার মিরে মোট তিন হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্টানে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নিকারুজ্জামান এবং উখিয়া উপজেলার রাজা পালং ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী বক্তৃতা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা উপহার লেখা ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু এবং প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত একটি শপিং ব্যাগে করে এসব উপহার সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন জানান, রোহিঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্থ সহ হত দরিদ্রদের সবচেয়ে বেশী পরিবারকে সহায়তা দেওয়া হয়েছে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়। এই দুই উপজেলার উখিয়ায় ১২ হাজার ৫০০ পরিবার এবং টেকনাফের ৬ হাজার পরিবার সহ অন্যান্য উপজেলাগুলোতেও বিতরণ করা হয়েছে বিশেষ ঈদ উপহার। অন্যান্য উপজেলার মধ্যে চকরিয়ায় ৩ হাজার ৫৮০, পেকুয়ায় এক হাজার ৮৩৪, কুতুবদিয়ায় এক হাজার ৭৯০, মহেশখালীতে ২ হাজার ৮৩০, কক্সবাজার সদরে ২ হাজার ১৭০ ও রামুতে ২ হাজার ৬৩০ পরিবারকে ঈদ উপহার দেওয়া হয়েছে।
উখিয়ার রাজা পালং ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর পুকুরিয়া গ্রামের পারভীন আকতার জানান-‘আমার স্বামী মাটি কাটার শ্রমিক। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে তার কাজ বন্ধ। ঘরে কোন টাকা পয়সা নেই। আজ মঙ্গলবার শবই কদরের ফাতেহা। এমন দিনে ২ হাজার নগদ টাকা এবং চাউল-চিনি-সেমাই যেন আমার কাছে স্বপ্নের মতই উড়ে এসে গেছে। আমি আল্লাহর কাছে শোকরিয়া আদায় করছি।’ তিনি বলেন, ঈদে বাচ্চা দু’টার জন্য কিছুই নেওয়া হয়নি। এবার নিতে পারব। এবারের ঈদ আনন্দে কাটবে।
উখিয়ার রাজা পালং ইউনিয়নের আরেক উপকারবভোগী নারী খুরশিদা বেগম জানান-‘আমি আজ প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো নগদ ২ হাজার টাকা পেয়ে সবচেয়ে বেশী খুশি হয়েছি। কেননা আজ শবই কদরের ফাতেহার জন্য ঘরে কিছুই নেই। এই টাকায় এখনি ফাতেহা করার জন্য একটি মুরগি কিনতে যাব।’ খুরশিদা বলেন, তার তিন সন্তান রয়েছে। কারও জন্য ঈদের একটি নতুন জামা ক্রয় করা হয়নি। এখন দুই হাজার টাকা পেয়েছেন-এবার সবই হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঈদ উপহার পেয়ে খুরশিদা জানান-এবার আমার ঈদই হত না। কিন্তু এই উপহার পেয়ে এবার আনন্দের ঈদ হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি মোঃ আবদুর রহমান জানান-‘প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ ঈদ উপহার সুষ্টুভাবে বিতরণের কাজ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করতে পেরেছি যে-এবার ক্ষতিগ্রস্থ দরিদ্র পরিবারগুলোর ঘরে ঘরে বেশ আনন্দে ঈদ উদযাপন করা হবে।’
ওদিকে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলমগীর এ বিষয়ে বলেন- ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাঠানো আমার ইউনিয়নের হত-দরিদ্র প্রায় দুই শতাধিক লোকজনের মাঝে ঈদ উপহার সামগী সুষ্টুভাবে বিতরণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এই বিশেষ ঈদ উপহার পেয়ে মগনামার হত-দরিদ্র লোকজন খুব খুশি।’
Posted ১২:৩২ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৪ জুন ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh