দীপক শর্মা দীপু | রবিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯
কক্সবাজারে কোচিং বানিজ্যের কবলে পড়ে প্রতারনার শিকার হচ্ছে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। কোচিং নির্ভরশীল শিক্ষার্থীদের ফলাফলে নেমেছে ধস। মানহীন এসব অবৈধ কোচিং ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্কুলের শিক্ষকের নামে কোচিং এর পরিচিতি লাভ করলেও মুলত স্কুলের শিক্ষকরা ক্লাস নেন না। কিছু অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে এসব শিক্ষকরা। ফলে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় ফলাফল বিপর্যয় হয়েছে। এতে স্বনামধন্য অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে। কক্সবাজারের স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অবৈধ কোচিং ব্যবসা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
সরেজমিনে জানা যায়, কক্সবাজার শহরে অর্ধশতাধিক কোচিং সেন্টার গড়ে উঠেছে। শহরের তারাবনিয়ারছড়ায় ৬ টি, রুমালিয়ারছড়ায় ৩ টি, বৃহত্তর টেকপাড়ায় ৯ টি, বৃহত্তর বাহারছড়া ৭টি, মোহাজের পাড়ায় ৫ টি, ঘোনারপাড়ায় ৩ টি, বৈদ্যঘোনায় ৩ টি, গোলদিঘীর পাড়সহ আশে পাশের এলাকায় ৫ টি , বৌদ্ধমন্দির সড়ক সহ আশে পাশের এলাকায় ৪ টি, পেশকার পাড়া, বড়বাজার এলাকায় ৩টি, প্রধান সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, ঝাউতলা, নতুন বাহারছড়াসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে এসব অবৈধ কোচিং বাণিজ্য।
কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী বলেন, কোচিং ব্যবসা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। কোচিং সেন্টারের কারনে শিক্ষার্থীরা কলেজে যেতে পারছেনা। ভোরে তারা চোখ মুছতে মুছতে যাই কোচিং সেন্টারে। আর কোটিং সেন্টার থেকে ফিরতে ফিরতে কলেজের সময় পার হয়ে যাই। এছাড়া শিক্ষার্থীরা ক্লান্ত হয়ে পড়ায় কলেজে আর যেতে চাইনা। তিনি বলেন, অত্র কলেজের যে সব শিক্ষার্থী কোচিং নির্ভরশীল ছিল তাদের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হয়নি। পাবলিক পরীক্ষায় ফল বিপর্যয়ের প্রধান কারন হচ্ছে কোচিং নির্ভর পড়ালেখা। এসব কোচিং সেন্টারে নির্দিষ্ট নোটের মাধ্যমে পড়ানো হয়। সিলেবাস ও পাঠ্যবই অনুসরন করা হয়না। এমন কি সৃজনশীল বা বাহ্যিক বিষয় নিয়ে পড়ানো হয়না। মনসত্বাত্তিক ও মেধা বিকাশের সুযোগ নষ্ট করে দিচ্ছে এসব কোচিং সেন্টার। সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ আন্তরিক হলে এসব অবৈধ কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়া সম্ভব এবং তাই করা উচিত।
কোচিং সেন্টারের কারনে কক্সবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন হচ্ছেনা বলে জানিয়ে অত্র স্কুলের প্রধান শিক্ষক রামমোহন সেন জানান, স্কুলের শিক্ষা ব্যতিত একজন ছাত্রের শিক্ষা জীবন পরিপূর্ণ হয়না। অথচ এখন কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের শিক্ষা জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। কোচিং এর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। ফলে তাদের ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে। আর দুর্নামটা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। তিনি বলেন, কিছু অসাধু শিক্ষক শিক্ষাকে শতভাগ ব্যবসায় পরিণত করেছেন। স্কুুলের শিক্ষকের নামে কোচিং সেন্টারের অঘোষিত নাম হলেও মুলত এসব কোচিং সেন্টারে এসব শিক্ষকরা পড়াননা। কিছু অযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। ফলে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা। এসব অবৈধ কোচিং সেন্টার বন্ধের জন্য সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করেন তিনি।
কক্সবাজার বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির সভাপতি শিক্ষাবিদ এম.এম সিরাজুল ইসলাম জানান, আগে স্কুল কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থা ছিল। তখন হয়তো প্রাইভেট নাম দিয়ে শুধু শিক্ষকরাই পড়াতো। অন্য কোন সহকারিদের দিয়ে পড়ানো হতনা। তখনের পরিশুদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থার কারনে সেই সময়ের ছাত্র ছাত্রিরা আজ নানাভাবে প্রতিষ্ঠিত। কিন্তু এখন কোচিং নির্ভরশীল শিক্ষার কারনে শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। যথাযোগ্য ও মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর অভিভাবকদের শিক্ষা বানিজ্যের প্রতারনার ফাঁদে ফেলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হচ্ছে কোচিং ব্যববসায়ীরা। এমন অবস্থা বুঝে সরকার কোচিং সেন্টার বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। এই কোচিং শিক্ষাকে অবৈধ বলে প্রজ্ঞাপন জারি করেন। কিন্তু সরকারের এই নির্দেশ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এতে পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ফলাফল বিপর্যয় হচ্ছে। এমন কি অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী কাঙ্খিত ফলাফল অর্জন করতে পারছেনা। যেসব শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়ে থাকে তারা জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারেনা। এর প্রধান কারন হচ্ছে কোচিং নির্ভর শিক্ষা ব্যবসায় আসক্ততা।
পিটিআই এর সাবেক সুপার শিক্ষাবিদ মো: নাসির উদ্দিন জানান, কোচিং শিক্ষার মান না থাকায় শিক্ষার্থীরা প্রকৃত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাণিজ্যিক শিক্ষার একটি গ্যাড়াকলে পড়ে প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সরকার এসব নানা কারনে কোচিং সেন্টারের উপর বিধি নিষেধ আরোপ করেছে। কোচিং শিক্ষা কেন্দ্রকে অবৈধ ঘোষনা করলেও কক্সবাজারে প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব অবৈধ কোচিং ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এদের কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছেনা কোন এ্যাকশন । ফলে দিন দিন এসব কোচিং বাণিজ্য বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। শহরে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠছে কোচিং সেন্টার।
জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন জানান, কোচিং ব্যবসা এত প্রভাব বিস্তার তা জানা নেই। আইনানুযায়ী কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ১:০৬ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৬ জানুয়ারি ২০১৯
dbncox.com | ajker deshbidesh