বৃহস্পতিবার ১৩ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে কার্তিক, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>
Advertisement Placeholder

কক্সবাজারে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় মেডিকেল ইনস্টিটিউটের রমরমা বাণিজ্য

মাহাবুবুর রহমান   |   সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫   |   প্রিন্ট   |   77 বার পঠিত   |   পড়ুন মিনিটে

কক্সবাজারে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় মেডিকেল ইনস্টিটিউটের রমরমা বাণিজ্য

* সার্টিফিকেট বানণজ্য প্রধান কাজ
*জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের নিবন্ধন নাই,তবুও কাজ করছে তারা
* প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ

কক্সবাজার শহরে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য ভুঁইফোঁড় মেডিকেল ইনস্টিটিউট, যারা টাকার বিনিময়ে দিচ্ছে কমিউনিটি প্যারামেডিক,নার্সিং সনদ,ডেন্টাল পাসের সনদ,এলএমএফ পাস সনদ সহ আরো অনেক কিছু। তবে এসব সনদ আবার সরকারি কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

ফলে বিপুল টাকা দিয়েও প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের কোন অনুমোদন বা নিবন্ধন না থাকলেও কক্সবাজার শহরের যত্রতত্র ভাড়া বাসা নিয়ে,অফিস খোলে রীতিমত প্রতারণার দোকান খুলে বসেছে। তবে চোখের সামনে এসব অনিয়ম হয়ে আসলেও তার বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেয়নি জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলীর বাসিন্দা ছৈয়দ নুর জানান, আমি ২ বছর ধরে কক্সবাজার শহরের দক্ষিণ টেকপাড়া জামে মসজিদের সামনের বাসায় ভাড়া থাকা পপুলার মেডিকেল ইনিস্টিটিউটে ২ বছর মেয়াদী কমিউনিটি প্যারামেডিক কোর্স সম্পন্ন করি। এজন্য আমার থেকে ৬৫ হাজার টাকা দিয়েছি। আমরা এক ব্যাচে ৩০ জন ছিলাম। কথা ছিল জেলা সদর হাসপাতালে আমাদের ইন্টার্ণ হবে, প্রশিক্ষণ করানো হবে। ভাল অভিজ্ঞ ডাক্তার দিয়ে আমাদের ক্লাস হবে কিন্তু তার কিছুই হয়নি। এখন আমাদের সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় হলে,পপুলার কর্তৃপক্ষ আর ফোন ধরেনা। নানান বাহানা করে আর সার্টিফিকেট দিচ্ছে না। আমি নিজেরটা অনেক কষ্ট করে নিয়েছি। আমি খুশি মনে সম্প্রতি জেলা সদর হাসপাতালে চাকরীর জন্য ইন্টারভিউ দিলে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত ডাক্তাররা বলেছেন আমার সার্টিফিকেট ভুয়া। এগুলো কোন কাজে আসবে না। এই কথা শুনার পর আমি পপুলার কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা কোন সদোত্তর দিতে পারেনি। এখন নানান বাহানায় আরো টাকা চাচ্ছে।

পেকুয়ার বাসিন্দা বর্তমানে উখিয়ায় কর্তরত নার্স রোকেয়া বলেন,আমি আরো ভাল কিছুর প্রত্যাশায় পপুলার মেডিকেল ইনস্টিটিউটে কমিউনিটি প্যারামেডিক প্রশিক্ষণে ভর্তি হই। ২ বছর মেয়াদী এই কোর্সের জন্য আমার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নেওয়া হয়েছে। এখন সার্টিফিকেট দেওয়ার সময় হলে নানান তালবাহানা করে আমাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে না। এখন আবার মার্কসীট আনার জন্য নাকি টাকা দিতে হবে। এর মধ্যে অনেকের কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছি এগুলো সব ভুয়া।

তিনি জানান,আমার আরেক বোন কক্সবাজার শহরের কালুর দোকান এলাকায় মোহাম্মদ আলী মার্কেটের ৩ তলায় রাবেয়া কমিউনিটি প্যারামেডিক ইনস্টিটিউট থেকে একই কোর্স করেছে,তার কাছ থেকে সব মিলিয়ে ৯০ হাজার টাকা নিয়ে যে সার্টিফিকেট দিয়েছে সেটা নিয়ে সরকারের কোথাও কোন কাজে যোগদান করতে পারছেনা। সব সরকারি অফিসে বলছে এগুলো ভুয়া। আবার তারা বলছে এগুলো সঠিক,মাঝখানে আমরা প্রতারিত হচ্ছি।
আলমগীর নামের এক ভুক্তভোগী বলেন,আমি রাবেয়া ইনস্টিটিউট থেকে কোর্স করেছি,টাকা দিয়েছি সনদও পেয়েছি সেই সনদ কোন সরকারি কাজে আসেনা। সবাই বলে এগুলো ভুয়া। বেসরকারিতে মোটামোটি চলে তাও অভিজ্ঞার উপর নির্ভর করে। অথচ তারা বলেছিল সব সরকারি অফিসে সার্টিফিকেট কাজে আসবে।

এদিকে ২৬ অক্টোবর শহরের কালুর দোকানের এডভোকেট মরহুম মোহাম্মদ আলীর মার্কেটের ৩ তলায় গিয়ে দেখা গেছে,সেখানে রাবেয়া কমিউিনিট মেডিকেল সেন্টারে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পিংকী নামের একজন কর্মচারী আছে। তবে তিনি প্রতিষ্টান প্রধান মোশারফের কথা ছাড়া কোন কথা বলতে রাজি হয় নি। পরে দক্ষিণ টেকপাড়া মসজিদের পাশে এডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের ভাড়া বাসার নীচ তলায় গিয়ে দেখা গেছে পপুলার কমিউনিটির সেই অফিস বন্ধ রয়েছে। বাড়ির দারোয়ান বলেন,তারা মাঝে মধ্যে আসে।

এ ব্যাপারে ফোনে পপুলার মেডিকেল ইনস্টিটিউটের অফিস প্রধান শফিউল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগে আমাদে অনুমোদন নেই। আমরা অন্য জেলার রেজিস্ট্রেশন দিয়ে কাজ করি। তবে আমরা কোন প্রতারণা নয়,সঠিক নিয়মে কাজ করি।

এ ব্যাপারে পপুলার মেডিকেল ইনস্টিটিউটের প্রধান পরিচালক নৌমান বলেন,যারা অভিযোগ করেছে তাদের কাছে আমরা টাকা পাই সে জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে। আমাদের ইনস্টিটিউট থেকে শত শত জন বের হয়েছে,তারা ঠিকই কাজ করছে। তবে কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন নাই বলে শিকার করেন তিনি।

রাবেয়া মেডিকেল ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোশারফ হোসাইন বলেন,আমি এখনো শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঢাকা আছি,কারো কোন অভিযোগ নাই। আমরা ভুয়া নয়,সঠিক ভাবেই কাজ করছি। তবে অনুমোদন না থাকার বিষয়ে শিকার করেন তিনি।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ টিটু চন্দ্র শীল বলেন,কক্সবাজার স্বাস্থ্য বিভাগের নামে অনেকে প্রতারণা করে আসছে। আর পপুলার বা রাবেয়া ইনিস্টিটিউট যে সব নাম বলা হয়েছে সেসব প্রতিষ্টান আমাদের নিবন্ধনে নেই। যদি ভুক্তভোগীরা সিভিল সার্জন বরাবরে অভিযোগ করে তাহলে অবশ্যই আইনী প্রতিকার পাবে। এছাড়া এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডাঃ মাহমুদুল হক বলেন, কেউ অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিবিএন/জেইউ। 

Facebook Comments Box

Comments

comments

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

প্রকাশক
তাহা ইয়াহিয়া
সম্পাদক
মোঃ আয়ুবুল ইসলাম

যোগাযোগ

প্রকাশক কর্তৃক প্রকাশিত এবং দেশবিদেশ অফসেট প্রিন্টার্স, শহীদ সরণী (শহীদ মিনারের বিপরীতে) কক্সবাজার থেকে মুদ্রিত

মোবাইল : ০৩৪১-৬৪১৮৮। বিজ্ঞাপন ও সার্কুলেশন 01870-646060

ই-মেইল: ajkerdeshbidesh@yahoo.com