দেশবিদেশ রিপোর্ট | সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮
কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রত্নাপালং ইউনিয়নের একটি গ্রামীণ সড়কের উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে লুকোচুরি খেলা চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) টেন্ডারে মাত্র দুই কিলোমিটারের সড়কটি এখন এলাকার ৫ টি গ্রামবাসীর সীমাহীন দুর্ভোগের কারন হয়ে দাড়িয়েছে। সড়কের কাজ শেষ হবার কথা গত এপ্রিল মাসে। কিন্তু সেই সড়কের কাজ শেষ হবার কোন লক্ষণই নেই। উপরন্তু ঠিকাদার কাজ শুরুর আগেই বিলের একাংশ টাকা উত্তোলন করে নেয়ার কথাও জানা গেছে।
গ্রামীণ একটি ছোট প্রকল্পের কাজ নিয়ে উঠেছে নানা কথা। উন্নয়ন প্রকল্পটি ছোট হলেও এটির সুফল ভোগকারীর সংখ্যা ৫ গ্রামের কমপক্ষে দশ সহ¯্রাধিক। এমন একটি ছোট প্রকল্পের কাজে অস্বাভাবিক বিলম্বিত হওয়ায় সরকারের ভাবমুর্তি নিয়েও চলছে নানা সমালোচনা। অথচ সরকার অত্যন্ত আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করছে গ্রামীণ যোগাযোগ সহজতর করে উন্নয়নের সুফল জনগনের কাছে পৌঁছে দিতে। কিন্তু নানা টালবাহনার ফলে সরকারের আন্তরিকতা সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছতে পারছে না। এসব বিষয় নিয়ে এলাকায় যারা সোচ্চার হবার কথা তাও না হওয়ায এলাকাবাসী হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন।
কক্সবাজার-টেকনাফের শহীদ এটিএম জাফর আলম আরাকান সড়কের কোটবাজার ষ্টেশনের দক্ষিণ পার্শ্বে ইউসুফ আলী (ঝাউতলা সড়ক) সড়কের গয়ালমারা থেকে চাকবৈটা বাজার পর্যন্ত মাত্র দুই কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং কাজটি শেষ না করায় এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন। এতদিন সড়কটি ইট বিছানো ছিল। সরকার গ্রাম পর্যায়ের সড়ক উন্নয়ন করার যে কর্মসুচি নিয়েছে সেই কর্মসুচির আওতায় এটির টেন্ডার দেয়া হয়।
এলজিইডির টেন্ডারে মোহাম্মদ আলম নামের একজন ঠিকাদার সড়কের কাজটি পেয়ে যান। পরে এই ঠিাকাদারের নিকট থেকে প্রকল্পের কাজটি কিনে নেন আশরাফ নামের এক ব্যক্তি। আশরাফ প্রকল্পের কাজ শুরু করতে গিয়ে এলাকার লোকজনকে তার নিকট টাকা-পয়সার সংকটের কথা জানান। আশরাফের এরকম কথা শুনে এলাকার কয়েক ব্যক্তি এলাকাবাসীকে দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ থেকে রেহাই দেয়ার মানসে নিজেরাই আর্থিক সহায়তার হাতও বাড়িয়ে দেন। সড়কটির কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য এলাকাবাসী পর্যন্ত যেখানে এগিয়ে এসেছেন সেখানে ঠিকাদারই লাপাত্তা হয়ে গেছে।
প্রস্থে মাত্র তিন মিটার এবং দৈর্ঘে দুই কিলোমিটার সড়কটির কাজ করার জন্য বর্ষার আগেই পুরানো ইটগুলোও তুলে নেয়া হয়েছে। পুরো বর্ষা মওসুমে এলাকার ৫টি গ্রামের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। অথচ ঠিকাদার কাজ করা হয়েছে মর্মে মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনেক টাকাও তুলে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসী সড়কটিতে যাতায়াতে দুর্ভোগের মুখে পড়ায় সরকারের ভাবমুর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে একমাত্র ঠিকাদারের গাফেলতির কারনে।
এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষে করইবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী সৈয়দুল্লাহ জানান-‘আমাদের সরকার গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসছে কিন্তু তা দুর্নীতির আখড়ায় পড়ে সরকারের তৃণমূলের উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। অপরদিকে সরকারের ভাবমুর্তি বৃদ্ধির চাইতে এসব দুর্নীতিবাজদের কারনে ফলাফল হচ্ছে উল্টোটি।’ তিনি আরো বলেন, বর্ষার পুরো সময়টি আমরা গ্রামের বাসিন্দারা সাংঘাতিক কষ্টের মধ্যে কাটিয়েছি। এমনকি নির্বাচন সামনে নিয়ে এরাকার লোকজনের মুখেও নানা কথা শুনতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদার মোহাম্মদ আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে গতরাতে তিনি জানান-‘ আমি কাজটি নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি আশরাফ নামের একজনের নিকট। তিনিই কাজটি ফেলে রেখেছেন। এলাকার লোকজন বর্ষা মওসুমে দুর্ভোগের মুখে পড়েছেন এটা শতভাগ সত্যি। তবে আমি কথা দিচ্ছি আগামী এক মাসের মধ্যেই কাজটি শেস করে দেব।’ ঠিকাদার বিলের টাকা উত্তোলন প্রসঙ্গে বলেন, আসলে জুন মাসের মধ্যে টাকা উত্তোলন করতে হয় বিধায় সেই টাকা তুলে রাখা হয়েছে অফিসে। তবে টাকা তিনি পাননি বলে দাবি করেন।
সড়কটির প্রাক্কলন ব্যয় নিয়ে উখিয়ার উপ সহকারি প্রকৌশলী সোহরাব হোসেন জানান. প্রকল্পটি করার কথা ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে। অপরদিকে ঠিকাদার আলম একবার বলেন প্রাক্কলন ব্যয় হচ্ছে এক কোটি ২৪ হাজার টাকা এবং পরে জানান ৯২ লাখ ২৪ হাজার টাকা। সোহরাব হোসেন প্রকল্পের কাজ বিলম্বের কারন হিসাবে আরো জানান, কাজটি ক্রয় করে আশরাফ নামের দ্বিতীয় ঠিকাদার অসুস্থ হয়ে পড়ায় এমন ব্যাপারটি হয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা মোঃ ইফতেখার আলী জানান-‘ প্রকল্পটি নিয়ে আমি অবহিত রয়েছি। আমি ইতোমধ্যে ঠিকাদারদের ডেকেছি। তাদের বলেছি শীঘ্রই কাজ শুরু করার জন্য। আশা করি কাজটি দ্রুত হয়ে যাবে।’
দেশবিদেশ /১৫ অক্টোবর ২০১৮/নেছার
Posted ১:২৬ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮
dbncox.com | ajker deshbidesh